1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উৎসবেও ধর্ম বিচার!‌

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২ অক্টোবর ২০১৯

‌ভারতে এখন উৎসবের মরশুম৷ নানা প্রান্তে শুরু হয়েছে উৎসবের তোড়জোর৷ কিন্তু এর মাঝে এক কাণ্ড ঘটিয়েছে ‘‌বজরং দল’‌৷ গুজরাটি সংস্কৃতির জনপ্রিয় নৃত্যে অ-হিন্দুদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করতে অলিখিত ফতোয়া জারি করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3QcW6
ফাইল ফটোছবি: Reuters

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শাখা সংগঠন বজরং দল৷ অতীতে বহুবার ধর্মীয় বিধিনিষেধ জারি করে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠনটি৷ কখনো কখনো তাদের ফতোয়া অমান্য করা হলে বেপরোয়া মারধর ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগও রয়েছে৷

‘‘গরবা ও ডান্ডিয়া কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়’’

এবার ধর্মীয় বিভেদের দেওয়াল আরো চওড়া করে তুলতে তারা বেছে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটের ঐতিহ্যময় গরবা ও ডান্ডিয়া নাচের অনুষ্ঠানকে, যদিও এর পিছনে রাজনৈতিক প্রশ্রয় আছে কি নেই, তা অন্য প্রশ্ন৷ কিন্তু, বেশিরভাগ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বজরং দলের হুমকির নিন্দায় সরব হয়েছেন৷

গরবা ও ডান্ডিয়া নাচের অনুষ্ঠান সরাসরি কোনো ধর্মীয় আচার নয়৷ বরং গুজরাটি সংস্কৃতির অত্যন্ত জনপ্রিয় নৃত্য৷ কর্মসূত্রে গুজরাটিরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, তারা সেখানে গরবা ও ডান্ডিয়া নাচের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন৷ গুজরাটে তো বটেই, তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দ্রাবাদেও তেমন আয়োজন হয়েছে৷

হায়দ্রাবাদে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে৷ স্বভাবতই নাচের অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য প্রত্যেক বছর প্রচুর মুসলিম ভিড় করেন৷ বজরং দলের আপত্তি এখানেই৷ তাদের বক্তব্য, গরবা ও ডান্ডিয়া নাচে বেশি অংশ নেন মহিলারাই৷ বিগত কয়েক বছর ধরে গরবা ও ডান্ডিয়া অনুষ্ঠানে অনেক অহিন্দু যুবক আসেন৷ তাঁরা মহিলাদের সঙ্গে অভদ্রতা করেন৷ অনুষ্ঠানে আসার পেছনে নিরীহ হিন্দু মহিলাদের প্রেমের জালে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র থাকে দাবি করে বজরং দলই এর সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছে, যা নাকি কার্যকর করতে হবে গোটা দেশে!‌

গরবা ও ডান্ডিয়া নাচের আয়োজক সমস্ত সংগঠনকে চিঠি লিখে বলা হয়েছে, ‘‘‌অহিন্দু কেউ যেন গরবা ও ডান্ডিয়া নাচের অনুষ্ঠানে ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে৷ এ জন্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী, দর্শক এমনকি, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের সময়েও অহিন্দু কাউকে নিয়োগ করা চলবে না৷ অহিন্দুদের ঠেকাতে প্রত্যেকের পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড যাচাই করতে হবে৷''‌ 

‘‌‘‌উৎসবে ব্যারিকেড করা চলে না’’

এ ব্যাপারে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত হাজরা বললেন, ‘‌‘‌গরবা ও ডান্ডিয়া কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়৷ এটা গুজরাটের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অঙ্গ৷ এই অনুষ্ঠানে সবাই যোগ দিলে কারো আপত্তি থাকতে পারে না৷ আসলে বজরং দলের কোথাও কোনো প্রভাব নেই৷ মাঝেমধ্যে উল্টোপাল্টা হুমকি ছড়িয়ে দিয়ে নানা মহলে ‘‌নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট'‌ তৈরি করতে চায় তারা৷ এই ভাবেই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় ওরা৷ সংবাদমাধ্যমের উচিত অবিলম্বে বজরং দলকে বয়কট করা৷'‌'‌

বজরং দলের মিডিয়া আহ্বায়ক এস কৈলাশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‌‘আমরা ঠিক করেছি, অহিন্দু কাউকেই গরবা-‌ডান্ডিয়া অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেব না৷ তাই উদ্যোক্তাদের আধার কার্ড যাচাই বাধ্যতামূলক করতে বলা হচ্ছে৷'‌'‌ এর পেছনে বিগত কয়েক বছরে গরবা-‌ডান্ডিয়া অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনাকে দায়ী করে ‘‌প্রতিশেধকমূলক ব্যবস্থা'‌ নেওয়ার যুক্তি খাড়া করেছে বজরং দল৷

কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‌‘‌উৎসবে ব্যারিকেড করা চলে না৷ এ কেমন ফতোয়া?‌ কে উৎসবে আসবেন, সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার৷ হিন্দু বা বজরং দলের রাগ করার কোনো কারণ থাকতে পারে না৷ তাছাড়া আধার কার্ডের সঙ্গে এই ধরনের উৎসবের কোনো সম্পর্ক থাকতেই পারে না৷ এমন ফতোয়া জারি হয়ে থাকলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত৷ আদালত ওদের উচিত শিক্ষা দেবে৷'‌'

মহালয়ার প্রাক্কালে শুরু হয় নবরাত্রি৷ সেই উপলক্ষ্যে গুজরাটসহ কয়েক জায়গায় গরবা ও ডান্ডিয়া নাচের অনুষ্ঠান হয়৷ পাড়ায় পাড়ায় নাচের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়৷ দুর্গাপুজোর মতোই সব ধর্মের মানুষ ভিড় করে সেখানে৷ কিন্তু, তা না-পসন্দ বজরং দলের৷