1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধানমন্ত্রীর ‘অপ্রত্যাশিত’ বক্তব্য

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ অক্টোবর ২০১৮

আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিলের পরই শুরু হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও আদিবাসীদের কোটা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই আন্দোলন যৌক্তিক৷ তবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাতে ‘ইন্ধন’ জুগিয়েছে কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে৷

https://p.dw.com/p/35zQO
ছবি: government's press department

মন্ত্রিসভা সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বুধবার রাতেই কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা৷ সেখানে টানা অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা৷

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার পরিপত্রও জারি করা হয়েছে৷ সরকারি দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণির সব চাকরিতে কোটা পুরোপুরি তুলে দেয়া হয়েছে৷ তবে অন্যান্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি৷ এর আগে বাংলাশে সরকারি চাকরিতে ৫৫ ভাগ কোটা ছিল৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকার কোটাই বাতিল করে দিলো৷

আগে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ ছিল্৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান ছিল৷

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বুধবার রাতে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা অব্যাহত রাখার দাবি জানান৷  তাঁরা আগামী শনিবার মহা সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শাহবাগে৷ সেখানে সারাদেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানরা অংশ নেবেন৷ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর করা ৮০ ভাগ কোটা বহাল চাই৷ দেশে এমন পরিস্থিতি হয়নি যে সবাই সমান অবস্থানে আছে৷’’ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা সব কোটা বহাল চাই৷ সেটা বহাল হলে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটাও তার মধ্যে থাকবে৷’’

আমরা ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর করা ৮০ ভাগ কোটা বহাল চাই: মেহেদী হাসান

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি আইনগতভাবেও মোকাবেলা করবো৷ সরকার যেহেতু কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করেছে আর এটা আমাদের হাতেও এসেছে, আমরা এখন এই পরিপত্র দিয়ে হাইকোর্টে রিট করতে পারব৷ কোটা বাতিল সংবিধান পরিপন্থি৷’’

এদিকে বৃহস্পতিবার কোটা বাতিলের ব্যাপারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা থাকলেও তা তারা জানায়নি৷ সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে৷ পরে কোনো এক সময় তারা প্রতিক্রিয়া জানাবে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন, ‘‘সব কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত৷ প্রধানমন্ত্রী হয়তো অভিমান থেকে বলেছেন, যাঁদের কোটা প্রয়োজন, তাঁরা আান্দোলন করুক৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে যৌক্তিভাবেই এখনো কোটার প্রয়োজন আছে৷ সংবিধানও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা অনুমোদন করে৷ ৫৫ ভাগ কোটা অযৌক্তিক, কিন্তু ১০-১৫ ভাগ কোটা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি৷’’

সব কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত: অধ্যাপক কার্জন

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছে নারী, পুরুষ, ধর্ম, গোত্র সবার মধ্যে সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে৷ বৈষম্যকে অগ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে৷ তবে এই অনুচেছদেরই ৪ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু , আদিবাসী,প্রতিবন্ধীদের জন্য যদি বিশেষ কিছু করা হয়, তাহলে তা এই অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে না৷ এটাকে আমরা বলি, ইতিবাচক বৈষম্য৷ সামগ্রিকভাবে সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এটা করা হয়, কারণ, সমাজের সব অংশ তো সমানভাবে এগিয়ে আসতে পারেনি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টি আমাদের সতর্কভাবে দেখতে হবে, কারণ, তাঁদের জন্যই আজ আমরা স্বাধীন, আমাদের দেশ৷ তাঁদের রক্তঋণ আমাদের শোধ করতে হবে৷ এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তাঁদের কোটা যৌক্তিকভাবে কতটুকু থাকবে, কত দিন পর্যন্ত থাকবে৷ কোটা মুক্তিযোদ্ধা, তাঁর সন্তান এবং তাঁর সন্তান– এই পর্যন্ত হতে পারে৷ এর চেয়ে বেশি হলে একটা ভিন্নরকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে৷ আর পরিমাণটাও হতে হবে যৌক্তিক এবং যথাযথ৷’’

নারীনেত্রী এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান মনে করেন কোটা'র একটা যৌক্তিক সমাধান হওয়া প্রয়োজন৷

তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছেন, তাঁরাও তো কোটা বাতিল চাননি৷ তাহলে কোটা কেন বাতিল হলো' প্রথম শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও অন্য গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কিন্তু আবার কোটা রয়েই গেছে৷ পুরো বিষয়টি সামঞ্জস্যহীন৷ আমার মনে হয়, আন্দোলকারীসহ সবার সঙ্গে বসে বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান করা উচিত৷ তা না হলে জটিলতা কাটবে না৷ কারণ, সমাজে এখনো অনগ্রসর শ্রেণি আছে যাঁদের জন্য কোটা প্রয়োজন৷’’

যে কথা সাধারণ মানুষ বললে উসকানি হয়, সেই কথা তো আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশা করতে পারিনা: এলিনা খান

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বললেন, যাঁদের কোটা প্রয়োজন, তাঁরা আন্দোলন করুক৷ যে কথাগুলো সাধারণ মানুষ বললে উসকানি হয়, সেই কথা তো আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশা করতে পারি না৷ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, আদিবাসী কোটা, নারী কোটা– এইসব কতটুকু যৌক্তিকভাবে প্রয়োজন তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ এক জায়গায় কোটা রাখলাম, আরেক জায়গায় রাখলামই না, এটা তো হতে পারে না৷’’

এদিকে সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫ শতাংশ কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ৷ বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ৷

সমাবেশ আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক অ্যান্থনী রেমা বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কে আদিবাসী কে বাঙালি এই প্রশ্ন ওঠেনি৷ বাঙালি আর আদিবাসী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে৷ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ আমরাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই৷ কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগই আমরা পাচ্ছি না৷ রাষ্ট্র আমাদের সেই সুযোগ করে দিচ্ছে না৷ এখন আবার কোটা বাতিল করা হচ্ছে৷ আমরা এমন দেশ চাই, যেখানে বাঙালি-আদিবাসী ভেদাভেদ থাকবে না৷’’

সংগঠনের যুগ্ম- সমন্বয়ক অলিক মৃ বলেন, ‘‘আপনারা যদি আদিবাসীদের মানুষ মনে করেন, রাষ্ট্রের নাগরিক মনে করেন, তাহলে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিন৷ প্রকাশিত গেজেট সংস্কার করে আদিবাসী কোটা বহাল রেখে পুনরায় প্রকাশ করতে হবে৷’’