1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসল প্রকৃতির খেলা

৪ মে ২০১২

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর সম্পর্কে বিজ্ঞান যেসব ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, তার সব কী ঠিকঠাক? উঠে গেল প্রশ্ন৷ কারণ, গাছপালা আর ফুলফল দেখা যাচ্ছে আগের থেকে দ্রুতগতিতে ছুটছে! বলছে নতুন সমীক্ষা৷

https://p.dw.com/p/14pPd
ছবি: picture-alliance/dpa

নেচার পত্রিকার প্রবন্ধ

যেখানে সেখানে নয়, এমনকি আঁখো দেখা হালও নয়, এ এক্বেবারে খোদ ‘নেচার' পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ৷ যেখানে বলা হচ্ছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কুফল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎবাণীর একটা হলেও মেলেনি৷ গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন বিশ্বের কোথায় তার পা ফেলছে না? সর্বত্রই তো! তো, সেই থিওরি মোতাবেক, বসন্তের আগমনেও তার প্রভাব পড়ার কথা৷ বিজ্ঞান তেমনই একখানা ভয় দেখিয়ে বলেছিল, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে গাছপালায় আর প্রকৃতিতে এমনই সমস্যা হবে যে বসন্তের উদ্ভাস হবে দেরি করে৷ কিংবা বসন্ত আসবেই না সহজে বহু জায়গায়৷

অথচ প্রকৃতি কিন্তু এসব ‘ভয় দেখানোকে' আদৌ পাত্তা না দিয়ে বরং বসন্তকে আগেভাগে এনে ফেলে উল্টে মানুষের জ্ঞানগম্যিকেই দিয়েছে প্রশ্নের মুখে ফেলে! ফলে এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের ওস্তাদদের অনেকেই বেশ সমস্যায় পড়েছেন এই আগাম ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে হয়ে যাওয়ায়৷

প্রকৃতির প্রতিশোধ?

একে কী প্রকৃতির প্রতিশোধ বলা যাবে? রবি ঠাকুরের সেই অসামান্য নাটিকাটিতে যেকথা বলা হয়েছিল, অনেকটা তেমনই শোনাচ্ছে যে পুরো ব্যাপারটা! দেখা যাক তবে তলিয়ে ঠিক কী হয়েছে আর কীই বা হওয়ার কথা ছিল? প্রথমে বলা যাক, কীভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিমাপ করা হয়৷ গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা সচরাচর এক ধরণের গ্রিন হাউজ বা গাছপালার থাকার জন্য কাচের আধারের বিশেষ বাড়ি তৈরি করে থাকেন৷ তার মধ্যে তাপমাত্রার রদবদল বিজ্ঞানীরা ঘটিয়ে থাকেন বিশ্বের ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার বিষয়টি মাথায় রেখে৷ মানে ঠিক যে অনুপাতে বিশ্ব উষ্ণায়ন হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত, সেটাই হয়ে থাকে বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবার মাপকাঠি৷ মোট ১,৬৩৪ টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ইত্যাদির ওপরে গত বিশ বছর ধরে গ্রিনহাউজে নিরীক্ষা চলে আসছে৷ ক্যানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিশেষ গবেষক তথা বিজ্ঞানী ড. এলিজাবেথ ভলকোভিচ সে প্রসঙ্গেই জানাতে গিয়ে বলেছেন, তাজ্জব ব্যাপার হল, আমাদের গবেষণাতে যা ফলাফল দেখা দিয়েছিল, মূল প্রকৃতি সেটাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে!

মাপকাঠির খেলা

গ্রিনহাউজে যে মাপকাঠি ব্যবহার করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, তাতে বিশ্বের বর্ধমান তাপমাত্রার হিসাবটা একেবারে যাকে বলে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করা হয়েছিল৷ মাপকাঠি অনুযায়ী বিজ্ঞানীদের উষ্ণায়ন বাড়ার হিসেব মোতাবেক বিজ্ঞানীরা ১.৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়িয়ে রেখেছিলেন গ্রিনহাউজে৷  তাতে যা হওয়ার কথা, তা হল বসন্ত শুরুতে গাছপালায় অঙ্কুরোদ্গম আর নতুন পাতাদের আসার কথা ১.৯ দিন থেকে ৩.৩ দিনের মধ্যে৷ গ্রিনহাউজের মধ্যে গাছপালাতে সেরকমটাই হয়েওছে৷ কিন্তু কী হল আসল প্রকৃতির মধ্যে?

আসল প্রকৃতির খেলা

আসল প্রকৃতিতে দেখা যাচ্ছে, বসন্তের শুরুতে গাছপালায়, লতায় ইত্যাদিতে বসন্ত আসার সঠিক দিনক্ষণ আর তাপমাত্রার হিসাব নিকাশ সম্পূর্ণ উল্টে গেছে৷ কীরকম? ওই ভ্যাঙ্কুভারের ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিশেষ গবেষক তথা বিজ্ঞানী ড. এলিজাবেথ ভলকোভিচ নিজেই সে তথ্য দিয়ে জানাচ্ছেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম, আমাদের হিসেবে উষ্ণায়নের বিশেষ তাপমাত্রার সঙ্গে তাল রেখে বসন্ত যখন আসার কথা ছিল, তার অন্তত সাত থেকে নয়দিন আগেই সে এসে হাজির৷' ভলকোভিচের কথার অর্থ হল, গাছে নতুন পাতা ধরেছে, ফুলের কুঁড়ি দেখা দিয়েছে এবং শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে যেমন অপরূপ দেখতে হওয়ার কথা নবসাজে সাজা প্রকৃতিকে, তাকে ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছে৷

কেন এমন হল?

নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ল্যামন্ট ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির বিজ্ঞানী এবং এলিজাবেথ ভলকোভিচের সঙ্গে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধের সহ-লেখক বেঞ্জামিন কুক জানাচ্ছেন, আসলে গবেষণাগারের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত মাটি. তাতে সারের তারতম্য ইত্যাদির সঙ্গে প্রকৃতিকে তো একেবারে হুবহু মেলানো সম্ভব নয়৷ তার ফলে এমন সামান্য ভুলচুক হয়ে থাকতে পারে৷ কথা হল, মূল প্রকৃতির হাতে যে অপার রহস্যের চাবিকাঠি রয়েছে, তার সন্ধান মানুষ পেয়েছে বলে ভাবলেও সবকিছু তো আর প্রকৃতি মানুষকে আজও জানায়নি৷ তবুও বিশ্ব উষ্ণায়নের আতংককে কিছুটা মিথ্যে প্রমাণ করার পরেও একথা মানতেই হবে যে, প্রকৃতির ক্ষতি করেছে, করছে মানুষই৷ সামলাতে হলেও সেই মানুষেরই সাহায্য প্রয়োজন৷

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন