উল বোনা পুরুষদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে
১১ জুন ২০২১উল বোনা ও উল দিয়ে তৈরি পোশাক জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্টিফেন ওয়েস্ট৷ ৩২ বছর বয়সি এই অ্যামেরিকান ডিজাইনারের রংচংয়ে নক্সা এমনকি তরুণ প্রজন্ম ও পুরুষদেরও পছন্দ হয়ে উঠছে৷ স্টিফেন বলেন, ‘‘আমি সব ডিজাইন ও নক্সা নিজেই তৈরি করি৷ উল বুনে আমি সেই সব ডিজাইনের কনসেপ্টও বানাই৷ অনেক আবেগ ও ভালবাসা দিয়ে সৃষ্টির কাজ করি৷ সবচেয়ে বেশি প্রেরণা পাই বলে প্রচুর রং নিয়ে কাজ করি৷’’
ইনস্টাগ্রামে আমস্টারডাম-নিবাসী এই ডিজাইনারের ফলোয়ারেরসংখ্যা দুই লাখ পঁচিশ হাজারেরও বেশি৷ অনলাইন টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে তিনি রঙিন, জ্যামিতিক নক্সার উল বোনার পদ্ধতিও শেখান৷ তাঁর ভিডিওগুলির মধ্যে হাস্যরস ও মনোরঞ্জনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে স্টিফেন ওয়েস্ট বলেন, ‘‘আমি আরও এমন মজার ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করতে চাই, যাতে নানা ধরনের মানুষ উল বুনতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ সব কিছু এত টেকনিকাল করে তোলার দরকার নেই৷ খেলাচ্ছলে এবং ফ্যাশন দূরস্তভাবেও সেটা করা যায়৷’’
বার্লিনের ১৩ বছরের কিশোর কনস্টান্টিন সিবেকও স্টিফেন ওয়েস্টের অনুরাগী৷ দাদি তাকে উল বোনা শিখিয়েছেন৷ ব়্যাভেলরি নামের সোশাল নেটওয়ার্কে সে নানা রকম আইডিয়া পায়৷ গোটা বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ সদস্য সেখানে নানা রকম হাতের কাজের আইডিয়া আদানপ্রদান করেন৷ কনস্টান্টিন বলে, ‘‘নিটিং-এর মাধ্যমে কত কী যে করা সম্ভব, সেটা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম৷ আগে ভাবতাম দাদি-নানিরাই শুধু উল বোনে৷ কিন্তু সেটা ঠিক নয়৷’’
৩৯ বছর বয়সি ফাবিয়ান ফিডলারও নিটিং করে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন৷ বার্লিনের এই পিয়ানো বাদক একটি সংগীত স্কুল চালান৷ তিনি সোয়েটার, স্কার্ফ, টুপি, মোজা, কম্বল ইত্যাদি প্রায় একশো পরিধেয় সৃষ্টি করেছেন৷ এই শখের আকর্ষণ তুলে ধরে ফাবিয়ান বলেন, ‘‘উল বোনা আমার কাছে নির্ভেজাল আনন্দ৷ সারাদিনের পরিশ্রমের পর বাসায় ফিরে ফায়ারপ্লেসে আগুন ধরিয়ে আরাম করে সোফায় বসে মন দিয়ে উল বুনতে খুব ভালো লাগে৷ আশেপাশের সব কিছু ভুলে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারি৷’’
তবে উল বোনার প্রবণতা শুধু নিজস্ব সৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ আজকাল ছেলেদের ফ্যাশন কালেকশনে নানা রূপে নিটিং-এর পোশাক-পরিচ্ছদ দেখা যায়৷ রঙিন নক্সা, ওভারসাইজ অথবা সহজসরল ডিজাইন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে৷
বার্লিনের উলের দোকানের মালিক সাশা উটরেশ্টও এমনটাই লক্ষ্য করছেন৷ তিনি সেইসঙ্গে নিয়মিতভাবে নিটিংয়ের অনুরাগীদের জন্য ভ্রমণ ও নানা ইভেন্টও আয়োজন করেন৷ এমনকি ক্রুজ জাহাজেও উল বোনার আসর বসে৷ তবে মহামারির কারণে বর্তমানে সবকিছু শুধু ডিজিটাল পদ্ধতিতেই সম্ভব হচ্ছে৷ তিনি সপ্তাহে একবার একটি করে মিটিং আয়োজন করছেন৷ সাশা বলেন, ‘‘প্রথমদিকে ফেসবুকে লাইভ শো করতাম৷ কিন্তু সেখানে শুধু একতরফাভাবে কথা বলা যেত৷ তারপর জুম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের কথা মনে এলো৷ জুম কলে বুঝতে পারলাম যে সবার সঙ্গে আদানপ্রদান সম্ভব৷ মানুষের সঙ্গে কথা বলা, তাদের প্রশ্ন করা, তাদের উত্তর শোনার সুযোগ রয়েছে৷ সবাই মিলে কিছু তৈরি করতে পারি৷ কিছু খেতে খেতে নিছক গল্প করাও মন্দ কী!’’
আমস্টারডামে স্টিফেন ওয়েস্টের কাছে ফেরা যাক৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে তাঁর দোকানের সুনাম যথেষ্ট ছড়িয়ে পড়েছে৷ সেখানে ভবিষ্যতের জন্য সৃজনশীল আইডিয়ার অভাব নেই৷ স্টিফেন বলেন, ‘‘একটা টিভি শো হতে পারে, যেমন ‘ওয়েস্টনিটস টকশো’৷ তাতে বেশ কিছু নাচের বিরতি থাকতে হবে৷ আমরা নতুন কৌশল শিখতে পারি৷ শোর মধ্যে কিছু টিউটোরিয়াল থাকবে৷ আমি সব বন্ধুদের সাক্ষাৎকার নিতে পারি৷ বেশ মজার ব্যাপার হবে৷ জগত এমন শোর জন্য প্রস্তুত কিনা, তা অবশ্য জানি না৷’’
উল বোনার প্রবণতা এবার পুরানো তকমা ঝেড়ে ফেলে পুরুষদের শখের বিষয় হয়ে উঠছে৷
ক্রিস্টিনে লেব্যার্ট/এসবি
গতবছরের মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...