1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উপসর্গহীন করোনা ভয়ের কারণ নয়

৯ জুন ২০২০

লক্ষ্যণহীন করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এ ধরনের রোগীদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা অতি বিরল বলেই মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

https://p.dw.com/p/3dTsC
ছবি: picture-alliance/D. Chakraborty

করোনা ভাইরাস কি অ্যাসিম্পটমেটিক বা লক্ষ্যণহীন রোগীর মাধ্যমে ছড়াতে পারে? প্রশ্নটি নতুন নয়। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশে প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই দেশগুলিতে লক্ষ্যণহীন রোগীর সংখ্যা বেশি। ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, এ দেশে এখনও পর্যন্ত যা করোনা পরীক্ষা হয়েছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশই লক্ষ্যণহীন রোগী। অর্থাৎ, করোনার কোনও উপসর্গ তাদের শরীরে ছিল না। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকরা মনে করছিলেন, এই লক্ষ্যণহীন রোগীদের মাধ্যমেই গোষ্ঠীর ভিতর করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছে, লক্ষ্যণহীন রোগীর মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অসম্ভব না হলেও বিরল। ফলে এই বিষয়টি নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।

গোটা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৪। মৃত্যু হয়েছে চার লাখ আট হাজার মানুষের। সুস্থ হয়েছেন ৩৫ লাখ। সংখ্যার নিরিখে এখনও সব চেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অ্যামেরিকায়। তারপরেই ব্রাজিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ব্রাজিলকে ঘিরে দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। অন্য দিকে, ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে খুলে গিয়েছে দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস। মানুষ ঘরের বাইরে বেরোতে শুরু করে দিয়েছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখেই সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিটি দেশ এবং জনগণকে সতর্ক করেছে। তাদের বক্তব্য, প্রায় ছয় মাস ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই চলছে। সেই লড়াই একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন একটু অসতর্ক হলে এতদিনের সমস্ত প্রয়াস নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, অতীত নয়, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েই তাদের সব চেয়ে বেশ উদ্বেগ। এবং সে কারণেই বার বার তারা সতর্ক করছে।

দীর্ঘ লকডাউনের পরে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ভারতে। প্রথম দিনেই বোঝা গিয়েছে, সাধারণ মানুষকে ঘরের ভিতর আটকে রাখা যাবে না। কলকাতা, দিল্লিতে বাসে বাঁদুর ঝোলা হয়ে মানুষ কাজে গিয়েছে। ভারতের ভিতর মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। সেখানেও সোমবার বহু মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় নিয়েই চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ। আনলক পর্বে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে না তো?

অনেকেই বলছেন, ভারতে করোনার সর্বোচ্চ সময় এখনও আসেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অনেকের আশঙ্কা, যত লোকের শরীরে করোনা ধরা পড়ছে তার চেয়েও বেশি মানুষের শরীরে করোনার জীবাণু লুকিয়ে আছে। লক্ষ্যণঁহীন বলে তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আনলক পর্বে তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু সোমবার এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করেছে, যাঁদের শরীরে করোনার লক্ষ্যণ নেই, তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কম। প্রায় নেই বললেই চলে।

প্রশ্ন হলো, লক্ষ্যণ না থাকলে ভারতে জানা গেল কী করে যে সেখানে ৮০ শতাংশ উপসর্গহীন রোগী? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, করোনার উপসর্গ নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে আসছেন, তাঁদের ট্র্যাক করতে গিয়ে বহু উপসর্গহীন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসক সাত্যকি হালদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ভারতে কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন, কতজন মারা যাচ্ছেন এবং কতজন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরছেন, তার পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনও চিকিৎসা ছাড়াই কতজন এমনি এমনি সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, সেই নথি নেই। থাকলে বোঝা যেত, সেই সংখ্যাটাই সব চেয়ে বেশি।''

সাত্যকিবাবুর মতে এর পিছনে দুইটি কারণ থাকতে পারে, এক, ভারতের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ যুবকের দেশে শরীরে করোনার সঙ্গে লড়াই করার মতো ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি হয়ে গিয়েছে অথবা করোনা শক্তি হারিয়েছে। বহু বিশেষজ্ঞেরই বক্তব্য, এখানে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা দ্রুত গড়ে উঠেছে। তাই লক্ষ্যণহীন রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)