পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোকে আদিবাসী নয়, উপজাতি বলতে হবে বলে মনে করেন পাঠক রাসেল৷ আর তার কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন যে, ‘‘তারা ব্রিটিশ আমলে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে, আজও ইতিহাস সাক্ষী আছে, তাই তাঁরা বাংলাদেশের আদিবাসী নয়৷''
আর সাইমুম রহমান সজিব খুব জোর দিয়েই বলছেন,‘‘তারা অবশ্যই উপজাতি, কারণ তারা বার্মা থেকে আগত৷'' তিনি তাদের আদিবাসী বলতে রাজি নন৷
তবে ফাহিম আলমাসের মতে,‘‘ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করা মিয়ানমার থেকে আসা উপজাতি শরণার্থীদের উগ্র আচরণ বাংলাদেশের মানুষদের দিন দিন ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে, যেটার বিস্ফোরণ হলে শরণার্থীরাই দায়ী থাকবে৷ আর মিয়ানমার থেকে আসা এসব মানুষ ‘শরণার্থী' হিসাবে বিবেচিত হতে পারে৷''
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
ধান চাষ
চাকমাদের জীবিকা প্রধানত কৃষি কাজ৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমতল অংশে স্বাভাবিক সেচ পদ্ধতিতে মৌসুমী কৃষি কাজ, এবং পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষের মাধ্যমে চাকমা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও রবিশস্য উৎপাদন করে থাকে৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
পুরুষ-নারী সমানে সমান
আদিবাসী নারীরা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে৷ এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নারী পুরুষ একসাথে ধানের জমিতে কাজ করছে৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
বাঁশের অঙ্কুর সংগ্রহ
তিন চাকমা নারী বাঁশের অঙ্কুর নিয়ে নৌকায় করে যাচ্ছেন৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
হলুদ সংগ্রহ
এক চাকমা পুরুষ হলুদ সংগ্রহ করে ঝর্ণার পানিতে সেগুলো ধুয়ে নিচ্ছেন৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
স্কুলে যাওয়া
একটি আদিবাসী কিশোরী স্কুলে যাচ্ছে৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
চিংড়ি মাছ সংগ্রহ
দুইটি আদিবাসী বালক-বালিকা ঝিরি (ছোট ঝর্ণা) থেকে চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করছে৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
ঐতিহ্যবাহী কম্বল বোনা
এক চাকমা নারী তাদের ঐতিহ্যবাহী কম্বল বুনছেন৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
জাল দিয়ে মাছ ধরা
জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন আদিবাসী নারী-পুরুষ৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
বৈসাবি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনা৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
ধর্ষণের শিকার
২১ আগস্ট ২০১২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সি এই ত্রিপুরা মেয়েটি খাগড়াছড়িতে এক পুলিশ কনস্টেবলের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল৷ (ছবি: সুমিত চাকমা)
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বাঙালিদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ৷ (ছবি: পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ)
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
ধর্ষণের প্রতিবাদ
২০১২ সালে রাঙামাটির সুজাতা নামে এক ১২ বছরের চাকমা কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিল আদিবাসী শিক্ষার্থীরা৷ (ছবি: সুমাইয়া সাঈদ)
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
কল্পনা চাকমা
১৯৯৬ সালের ১২ জুন কল্পনা চাকমাকে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷ তার খোঁজ আজও মেলেনি৷ এই ছবিটি এঁকেছেন প্রজ্ঞান চাকমা৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
চাকমাদের উপর বাঙালিদের হামলা
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাঙামাটির বোগাচারিতে তিনটি আদিবাসী গ্রামে হামলা চালায় বাঙালিরা৷ (ছবি: হিমেল চাকমা)
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
৫৭ টি বাড়ি পোড়ানো হয়
চাকমাদের ৫৭টি বাড়ি পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়৷ নিঃস্ব হয়ে যায় অনেক পরিবার৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
খাসিয়া উচ্ছেদ
২০১৬ সালের জুন মাসে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের নাহার পুঞ্জিবাসী খাসিয়াদের উচ্ছেদের নোটিশ জারি করে জেলা প্রশাসন৷ (ছবি: খোকন সিং)
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
৭০০ মানুষ বাস্তুহারার আশঙ্কা
উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রাম নাহার-১ পান পুঞ্জির ৭০০ মানুষকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে৷ বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নোটিশ পাওয়া মানুষদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধই বেশি৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
সাঁওতালদের উপর হামলা
২০১৬ সালে ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ৷ এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে৷
-
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপন
জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিরোধ
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল৷ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস করে আসছিল কয়েক বছর ধরে৷ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
অন্যদিকে সোহাগ পারভেজ বলছেন, ‘‘আদিবাসী বলা কেমন করে উচিত হয়? আমরা বাঙালিরা তাদের চেয়ে অনেক-অনেক আগে থেকেই এই ভূ-খন্ডে বসবাস করছি, তাই তাদের আদিবাসী নয় বরং উপজাতি বলাই উচিত হবে৷''
আর সন্দীপ বিশ্বাস নিশ্চিত যে, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত নৃগোষ্ঠীগুলো অবশ্যই আদিবাসী৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ তারা বাঙালি আসার অনেক আগে থেকেই ওই অঞ্চলের বাসিন্দা৷ আমাদের পূর্ব পুরুষরাই বরঞ্চ ভারত এবং বিশ্বের অনান্য দেশ থেকে আগত৷ এ নিয়ে কথা বলা মানে লুংগি ধরে টানাটানি৷ লুংগি কিন্তু তাঁদেরই উদ্ভাবিত পোশাক৷ আমাদের পূর্ব পুরুষরা দ্রুত এসব এলাকা দখল এবং বংশ বিস্তারের কারণে আজকে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আর ওরা জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু৷''
অন্যদিকে বোরহানউদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, ‘‘উপজাতি বললে ঠিক হয়, কারণ, আদিবাসী বলতে যা বোঝায়, এরা তা নয়৷''
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
বৈসাবি উৎসব
ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’ – এই তিন উৎসবের নামের প্রথম অক্ষর থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসবের নাম এসেছে৷ তিনটিই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান৷ ফলে পার্বত্য এলাকার আদিবাসীরা সবাই মিলে বৈসাবি উৎসবে অংশ নেয়ার মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়৷ উপরের ছবিটি সাংগ্রাই উৎসবের৷
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
চাকমাদের বিজু
বাংলা বছরের শেষ দু’দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব হয়৷ অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ‘ফুল বিজু’ নামে পরিচিত৷ এই দিন ভোরে পানিতে ফুল ভাসানো হয়৷ তরুণ-তরুণীরা পাড়ার বৃদ্ধদের গোসল করিয়ে দেয়৷ তবে বিজু উৎসবের মূল দিন নববর্ষের প্রথম দিন৷ চাকমা ভাষায় এই দিনটির নাম গজ্জ্যেপজ্জ্যে, অর্থাৎ গড়াগড়ি খাওয়ার দিন৷ এই দিন ভালো খাবার রান্না করা হয়৷ কারণ মনে করা হয়, বছরের প্রথম দিন ভালো রান্না করলে বছরজুড়ে অভাব থাকবে না৷
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
মারমাদের সাংগ্রাই
পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী মারমারা পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন করলেও বাংলা পঞ্জিকা অনুসরণ করে না৷ তারা বর্মীপঞ্জি, অর্থাৎ বার্মা মিয়ানমারের ক্যালেন্ডার মেনে চলে৷ সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রিলং পোয়েহ্’৷ এটি পানি ছো়ড়াছুড়ির খেলা৷ মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেয়৷ তাঁদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে অতীতের সকল দুঃখ-গ্লানি ও পাপ ধুয়ে-মুছে যায়৷
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
ত্রিপুরাদের বৈসুক
চাকমাদের বিজুর মতো এই উৎসবও তিনদিনের৷ নববর্ষের প্রথম দিন বয়স্করা ছোটদের আশীর্বাদ করেন৷ আর কিশোরীরা কলসি কাঁখে নিয়ে বয়স্কদের খুঁজে খুঁজে গোসল করায়৷ তরুণ-তরুণীরা রং খেলায় মেতে ওঠে৷ একজন আরেকজনকে রং ছিটিয়ে রঙিন করে দিয়ে গোসল করে আবারো আনন্দে মেতে ওঠে৷
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
তঞ্চঙ্গ্যাদের বৈসুক
তঞ্চঙ্গ্যাদের বর্ষবরণ অনেকটা চাকমাদের মতোই৷ উৎসবের প্রথম দিন মেয়েরা ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজায়৷ পরদিন সবাই গোসল করে নতুন জামা-কাপড় পরে আনন্দ-ফূর্তি করে৷ ঘরে ঘরে ঐতিহ্যবাহী খাবার আর পিঠার আয়োজন করা হয়৷ রাতে ‘ঘিলা’ নামের এক খেলায় মেতে ওঠে সবাই৷ আর নববর্ষের দিন তরুণ-তরুণীরা বয়স্কদের গোসল করায়৷
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
মুরংদের চাংক্রান
মূল উৎসবের দিন মুরংরা বাঁশি বাজিয়ে ‘পুষ্প নৃত্য’ করতে করতে মন্দির প্রদক্ষিণ করে৷ ম্রো সমাজে লাঠি খেলা খুবই জনপ্রিয়৷ তাই চাংক্রানের মূল দিনে তারা এই খেলা খেলে থাকে৷
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
কারাম উৎসব
সমতলের আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কারাম উৎসব’ বা ‘ডাল পূজা’৷ ওঁরাও, সাঁওতাল, মালো, মুন্ডা, মাহাতো, ভুইমালি, মাহলীসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে৷ এই আদিবাসীরা ‘কারাম’ নামক একটি গাছের ডালকে পূজা করেন বলে এই উৎসবের আরেক নাম ‘ডাল পূজা’৷
-
আদিবাসীদের কয়েকটি উৎসব
সাঁওতালদের সহরায় উৎসব
আদিবাসী সাঁওতালদের কাছে গৃহপালিত গরু, মহিষের গুরুত্ব অনেক৷ সহরায় উৎসবে এসব প্রাণীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়৷ উৎসবকে ঘিরে বিবাহিত মেয়েরা তাদের বাবার বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান৷ কারণ উৎসবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো একটি রেওয়াজ৷ এই পরবের নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নেই৷ গ্রামের মোড়লদের নিয়ে সভা করে উৎসবের দিন ঠিক করা হয়৷
লেখক: জাহিদুল হক
আর নুরুল আফসারের সোজা প্রশ্ন, ‘‘তারা বহিরাগত, ‘আদিবাসী' কিভাবে হবে?'' বোরহানউদ্দিনের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন পাঠক শপায়েত মান্নান, বাইজিদ হোসেন, শেখ মমিন, আলী ইমামসহ অনেকে৷
তবে ডয়চে ভেলের পাঠক সিহাবউদ্দিন জানিয়েছেন, ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত আদিবাসী বিষয়ক তথ্যগুলো তাঁর কাছে খুব ভালো লেগেছে এবং অনেক কিছু জানতে পেরেছেন৷ যদিও তিনি বেশ কিছুদিন ওই অঞ্চলে ছিলেন এবং অনেক কাছে থেকে ওদের দেখেছেন৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
ঘটনার সূত্রপাত
৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ৷ এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে৷ নিহতরা হলেন শ্যামল হেমব্রম, মংগল মান্ডি, রমেশ টুডু৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গুলি
সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের উপর গুলির নির্দেশ কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটরা দিয়েছিলেন বলে স্থানীয় থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন৷ সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়৷ তাদের ঘরে আগুন দেয়া হয় পুলিশের উপস্থিতিতেই৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
উচ্ছেদ অভিযান
পরে পুলিশ-র্যাব ঐ দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এক অভিযান চালিয়ে মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
বিক্ষোভের ঝড়
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের এই ঘটনায় সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে৷ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
ট্র্যাক্টর দিয়ে চিহ্ন মুছে দেয়া
একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্র্যাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দিয়েছে৷ নির্যাতিত শালনি মুর্ম ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন পুড়ে যাওয়া ভিটা, মসজিদ, গির্জাঘর, মন্দির, ভূমি রক্ষা কমিটির অফিস ঘর৷ যেগুলোর চিহ্ন ট্র্যাক্টর চালিয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
ইতিহাস
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল৷ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস করে আসছিল কয়েক বছর ধরে৷ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
খোলা আকাশের নীচে কয়েকশ’ পরিবার
চোখে মুখে অজানা আতঙ্ক নিয়ে এখনও খোলা আকাশের নীচে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷ ক্যাথলিক মিশন ভিত্তিক সংগঠন ‘মাদার টেরেসা’ তিন কেজি করে চাল, আধা কেজি ভোজ্য তেল, এক কেজি করে আলু সরবরাহ করেছেন ক্ষুদ্র পরিসরে৷ প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
ত্রাণ নিতে অস্বীকৃতি
উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য দেওয়া সরকারি ত্রাণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মাদারপুর ও জয়পুর পল্লীর সাঁওতালরা৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ১৩ নভেম্বর সাঁওতাল পল্লী পরিদর্শন করে ৬ নভেম্বরের ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে৷ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের উপর হামলায় ইন্ধন দেওয়ার জন্য স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদ ও সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
চার সাঁওতাল গ্রেপ্তার
সংঘর্ষের পর গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ এ ঘটনায় দু’টি মামলা করে৷ গ্রেপ্তার করা হয় চার সাঁওতালকে৷ রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন সাঁওতালদের কোমরে দড়ি ও হাতকড়া পরানো নিয়ে গণমাধ্যমে খবর আসার পর হাইকোর্টে রিট আবেদনটি হয়৷ হাইকোর্টের নির্দেশের পর পুলিশ সাংবাদিকদের দেখলে হাতকড়া খুলে দেয়, সাংবাদিকরা চলে গেলে ফের হাতকড়া লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা৷
-
ভূমিপুত্রদের আত্মত্যাগ, ঘরহারা শত পরিবার
সাঁওতালদের দাবি
সাঁওতালরা উচ্ছেদকৃত জমিতেই পুনর্বাসন, জমির চার পাশ থেকে চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাঁটাতারের বেড়া অপসারণ, আখ চাষ বন্ধ ও তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে৷ এছাড়াও এমপি আজাদ ও ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুলসহ তাদের উচ্ছেদ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে সহযোগিতাকারীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে সাঁওতালরা৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ