1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উন্নয়নের পেটে মাঠ, খেলা কেবল মোবাইল স্ক্রিনে

২৯ এপ্রিল ২০২২

কলকাতায় প্রতিদিন কমছে মাঠের সংখ্যা৷ কমছে খেলার ইচ্ছাও৷ ভিডিও গেমই এখন শরীরচর্চা৷

https://p.dw.com/p/4AbhP
কলকাতা ময়দান ছবি: DW/S. Bandopadhyay

ভারতীয় সংস্কৃতিতে মনীষীদের নাম নেওয়া ইদানীং এক কালচারে পরিণত হয়েছে৷ কথা নেই বার্তা নেই রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজি, গান্ধীর নাম এক বাক্যে উচ্চারণ করে ফেলে রাজনীতিবিদরা বোঝাতে চান, তারাও ওই মনীষীদেরই অনুসরণ করছেন৷

শুধু অনুসরণ কেন, কেউ কেউ তো রাস্তাঘাটে মনীষীদের পাশে নিজের ছবিও টাঙিয়ে দেন৷ তা সে তেমনই এক মনীষী একদা বলেছিলেন, ‘‘গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে৷’’ বুঝতে অসুবিধা হয় না, বক্তার নাম স্বামী বিবেকানন্দ৷ উন্নত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শরীরচর্চা যে অপরিহার্য, একবার নয়, বার বার বলেছিলেন তিনি৷ শুধু বিবেকানন্দ নন, উনিশ শতকের একাধিক মনীষী বার বার শরীরচর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন৷

মুশকিল হলো, আজ যারা ওই মনীষীদের নাম হাটেবাজারে অহরহ ব্যবহার করে ভোটভিক্ষা করেন, তারা মনীষীদের কথাগুলো হয় পড়েননি, নয় ভুলে গেছেন৷ খেলাধুলোর প্রয়োজনীয়তা থেকে বহুতল নির্মাণ তাদের কাছে অনেক বেশি লাভজনক৷ তাতে নিজের পকেটও ভরে, পার্টির ফান্ড ফুলে ফেঁপে ওঠে আর জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়া যায়-- উন্নয়ন সাঁই সাঁই করে দৌড়চ্ছে৷

দূরবীন কলকাতার দিকে তাক করা যাক৷ মানচিত্রে কলকাতার জলাজমি এবং মাঠের যে হিসেব পাওয়া যায়, খালি চোখে তা দেখা যায় না৷ মানচিত্র বলছে পুকুর, অথচ চোখের সামনে মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং; মানচিত্র বলছে খেলার মাঠ অথচ চোখের সামনে গেট লাগানো আবাসন-- এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ৷ ঘটবে না-ই বা কেন! কলকাতা এবং শহরতলিতে এখন সবচেয়ে বড় শিল্প প্রোমোটিং৷ পুরনো বাড়ি, মাঠঘাট, পুকুর-- জায়গা পেলেই উঠে পড়ছে পেল্লাই সব বাড়ি৷ অনুমতিও ঠিক মিলে যাচ্ছে এদিক ওদিক করে৷ আর এই প্রোমোটিং রাজের সঙ্গেই জুড়ে আছে কাটমানির খেলা-- নিন্দুকদের এই অভিযোগ বহুদিনের৷

এখানেই শেষ নয়, ফ্ল্যাট তৈরির পাশাপাশি নতুন এক শব্দের আমদানি হয়েছে তিলোত্তমায়৷ সৌন্দর্যায়ন৷ সুন্দরের নামে কংক্রিটের চাদরে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে চারিদিক৷ মাঠের উপর বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে পেভার ব্লক৷ গাছ কেটে বানানো হচ্ছে কংক্রিটের মূর্তি, লোহার দোলনা৷ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যা মরচে পড়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়৷ শোনা যায়, সৌন্দর্যায়নের খাতেও ভালোই পকেট ভরে রাজনীতিবিদদের৷ শোনা যায়, বলা যায় না!

সম্প্রতি কলকাতা এবং শহরতলিতে আরো এক নতুন উপদ্রবের প্রবেশ ঘটেছে৷ মাঠের চারদিক বাঁধিয়ে, রেলিং লাগিয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ বলা হচ্ছে, মাঠ কেবল দেখার, সেখানে খেলা যাবে না৷ খেললে নাকি সৌন্দর্যায়নে ব্যাঘাত ঘটবে৷ মাঠে ঢুকে দুদণ্ড আড্ডা মারলেও প্রবল আপত্তি জানানো হচ্ছে৷ সকলের কথা শুনলে মনে হয়, যেন হীরকরাজার যন্তরমন্তর ঘর থেকে সদ্য ঘুরে এসেছেন তারা৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলে
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

সরকারও ব্যতিক্রম নয়৷ হাতেগোনা যে কয়টি মাঠ পরে আছে, তার চারদিকে স্টেডিয়াম তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে৷ অথচ স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে কি না, তা দেখার হুঁশ নেই কারও৷ কলকাতার 'গর্ব' নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তো এখন মেলা আর রাজনৈতিক কর্মসূচির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে খেলা হয়, এমন অভিযোগ নেই৷

মাঠ যেমন হারিয়ে যাচ্ছে শহর থেকে, তেমনই হারিয়ে যাচ্ছে মাঠে খেলার লোক৷ একযুগ আগেও পাড়ায় পাড়ায় মাঠ ভাগ করে খেলা হতো৷ মাঠের চেয়ে খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি ছিল৷ ইদানীং সেই ভিড় চোখে পড়ে ভিডিওগেম পার্লারে৷ মাঠে নেমে খেলার প্রবণতা কমেছে৷ যারা খেলে, তারা খেলার কোচিংয়ে যায়৷ ক্রিকেট, সুইমিং, ক্যারাটে, জুডো৷ এখন মনের আনন্দে ছোটরা কাঁদায় গড়াগড়ি দেয় না৷ প্রফেশনাল রেসলিং শেখার জন্য দোকান থেকে ক্লে-চক কেনে৷

যে শহরে মনের আনন্দে খেলার মানুষ নেই, সে শহরে মাঠ ঠা ঠা পড়ে থাকবে, এমন আবার হয় না কি! ‘উন্নয়ন’ চলছে শহরের মগজে, মগজের ল্যান্ডস্কেপে৷

২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...