1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিপাকিস্তান

উন্নত বিশ্বের বিষাক্ত বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে পাকিস্তান?

২৮ জুলাই ২০২২

উন্নত দেশগুলো তাদের বিষাক্ত বর্জ্য পাকিস্তানে পাঠাচ্ছে বলে সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে৷ বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেদেশের পরিবেশবিদ এবং রাজনীতিবিদরা৷

https://p.dw.com/p/4ElTd
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপজ্জনক বর্জ্য ফেলার জন্য কোনো কার্যকর নিরাপত্তা প্রটোকল নেই পাকিস্তানের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপজ্জনক বর্জ্য ফেলার জন্য কোনো কার্যকর নিরাপত্তা প্রটোকল নেই পাকিস্তানের ছবি: epa Akhtar Soomro/dpa/picture-alliance

পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সিনেটের স্থায়ী কমিটিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ পাকিস্তানে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্য পাঠাচ্ছে৷

কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ূন মোহমান্দ ডয়চে ভেলেকে এ প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের এখানে সাধারণ বর্জ্য এবং বিষাক্ত বর্জ্য আলাদা করার প্রযুক্তি নেই৷ আমাদের বলা হয়েছে, এসব বর্জ্যের ১৪ শতাংশে বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে৷''

সরকার কেন এই বর্জ্য আমদানির অনুমতি দিয়েছে  সে বিষয়ে তিনি সরাসরি কিছু না বলে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত সবধরনের তথ্য রয়েছে, সেগুলো এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷

কমিটির অন্য সদস্য তাজ হায়দারও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, কিন্তু বর্জ্যে কী ধরনের বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি৷

বর্জ্যের মধ্যে কিছু বিষাক্ত উপাদান থাকে, যেগুলো সহজে নষ্ট করা যায়, কিন্তু এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলোকে সাধারণ প্রযুক্তির সাহায্যে নষ্ট করা যায় না৷ 

পাকিস্তানে কীভাবে এসব বর্জ্য আসছে?

পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা সৈয়দ মুজতবা হুসেইন জানান, পাকিস্তান বিষাক্ত বর্জ্য সংক্রান্ত বাসেল কনভেনশনে সাক্ষর করেছে, যার আওতায় দেশটিতে বিষাক্ত বর্জ্য আমদানি এবং বিনষ্ট করা নিষিদ্ধ৷

কিন্তু অনেক সময় সাধারণ বর্জ্যের সাথেই বিষাক্ত বর্জ্য চলে আসছে, যা আলাদা করা কঠিন বলে ডয়চে ভেলেকে জানালেন তিনি৷

তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬২৪টি কনটেইনারে করে প্লাস্টিক বর্জ্য পাকিস্তান আমদানি করেছিল, সবগুলোতেই বিষাক্ত পদার্থ ছিল৷ সেই সময় পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগও করেছিল৷

সিন্ধুর অন্ধ ডলফিন

পাকিস্তান উন্নত দেশ থেকে বর্জ্য আমদানি করে, কারণ, এসব বর্জ্যে যেসব ধাতব পদার্থ থাকে, সেগুলো ফ্যান, ধাতব তার, মোটর, দরজা-জানালা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে৷

জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জাইঘাম আব্বাস জানালেন, ‘‘বর্জ্য আমদানি আইনের ক্ষেত্রে একটা ফাঁক রয়েছে, তা হলো সেখানে ‘অন্যান্য আইটেম' নামে একটা ক্যাটাগরি আছে৷ সেটার আওতায় যারা বর্জ্য পাঠাচ্ছে, তারা এই ক্যাটাগরিতে কী জিনিস আসছে সে বিষয়ে তথ্য না-ও জানাতে পারে৷'' তিনি আরো জানান, এসব বিষাক্ত পদার্থ খুব সহজে পানি আর মাটিতে মিশে যায়, আর এটি পোড়ালে বায়ু দূষণ হতে পারে৷ ডয়চে ভেলে সেইসব বিষাক্ত পদার্থের তালিকা চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন৷

সিন্ধু প্রদেশে সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাকিস্তানে বিষাক্ত বর্জ্যআলাদা করার কোনো প্রযুক্তিই নেই৷ ফলে ঠিক কী পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্য জমা হয়েছে তা তাদের জানা নেই৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং বেসরকারি রিসাইক্লিং কোম্পানিগুলোর কারণেই এসব বিষাক্ত বর্জ্য পাকিস্তানে প্রবেশ করছে৷

করাচির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আহমাদ সাব্বার বলেন, চীন বিষাক্ত বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার পর পাকিস্তানসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিষাক্ত বর্জ্য রপ্তানি বেড়েছে৷ পাকিস্তানে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা না থাকায়এসব বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে, অথবা পোড়ানো হচ্ছে, যার ফলে উচ্চমাত্রায় পানি ও বায়ু দূষণ হচ্ছে৷

নীতির সংস্কার প্রয়োজন

ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট সদস্য কিশোয়ার জেহরার ধারণা, গত কয়েক বছরে দেশটিতে যত রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে, এর প্রধান কারণ এসব বিষাক্ত বর্জ্য৷

সাধারণ ও বিষাক্ত বর্জ্য আলাদা করার প্রযুক্তি না থাকলে পাকিস্তানের বর্জ্য আমদানি থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি৷

চলতি বছরের ২৮ জুন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জাতীয় বিষাক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি পাস হয়৷

এস খান/এপিবি