1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌উচ্চশিক্ষায়ও জালিয়াতি!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২০ আগস্ট ২০১৮

ভর্তি হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হবেন বলে, পড়াশোনা শেষ করে জানলেন, তাঁদের প্রাপ্য সার্টিফিকেটের কোনও দাম নেই!‌ মালদার প্রায় ৮০০ ছাত্র-ছাত্রী এই প্রতারণার শিকার৷

https://p.dw.com/p/33Qv9
Kolkata - Studentenprotest
ছবি: DW/S. Bandyopadhyay

‘‘গত ৭ দিন ধরে আমরা মালদার একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ #gkciet এর ছাত্র-ছাত্রীরা কলকাতার নন্দন চত্বরে রানুছায়া মঞ্চে অবস্থান বিক্ষোভ করে চলেছি...‌ গত রাতে বৃষ্টির মাঝে সারারাত গাছ তলায় জুবুথুবু হয়ে বসে ছিলাম...‌ সকাল থেকেও অঝোরে বৃষ্টি...‌ আমাদের এখন পশু-পাখির মতো অবস্থা...‌ লাগাতার ভিজে থাকায় সর্দিজনিত সমস্যায় সকলেই ভুগছি...''‌

চার দিন আগে ফেসবুকে এই পোস্ট দিয়েছিলেন মালদার গনি খান চৌধুরি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র-ছাত্রীরা৷ আজ ১১ দিন হয়ে গেল ওঁরা একইভাবে ঝড়-জল মাথায় করে অনশন অবস্থানে বসে আছেন কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসআর রবীন্দ্রসদনের মাঝের খোলা চত্বরে৷ সংস্কৃতিমনস্ক নাগরিক সিনেমা-থিয়েটার দেখতে নিয়মিত আসেন এই এলাকায়৷ তাঁরা কেউ থমকে দাঁড়াচ্ছেন, কেউ এগিয়ে গিয়ে হয়ত দু-চারটে সহানুভূতির কথা বলছেন, অনেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে ফেসবুকে ওদের হয়ে কথা বলছেন, ছবি, ভিডিও পোস্ট করছেন৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না৷ এই আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের অনুযোগ, অভিমান, ওরা যেহেতু কলকাতা শহরের কেউ নয়, মালদা থেকে এসেছেন, তাই এই শহর, তার বাসিন্দারা, শহরের সংবাদ মাধ্যম ওদের সমস্যার ব্যাপারে নির্বিকার৷

এর মধ্যে নাজমুল, মারুফ ইমদাদ এবং শাহিদ নামে তিন ছাত্রকে রবিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে৷ একজন ৯ দিনের লাগাতার অনশনের কারণে অসুস্থ, বাকি ২ জনের সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগেছে৷ কিন্তু ওঁরা হাল ছাড়তে নারাজ৷ ওঁদের নেতা শাইন জাহেদি ডয়চে ভেলেকে সোমবার টেলিফোনে বললেন, ‘‌‘‌আমরা সার্টিফিকেট হাতে নিয়েই শহর ছাড়ব৷ নয়ত আমাদের লাশ ফিরবে মালদায়!‌'‌

উচ্চশিক্ষা নিতে এসে জালিয়াতির শিকার হয়েছেন মালদার ওই গনি খান চৌধুরি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির প্রায় ৮০০ ছাত্র-ছাত্রী, যাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে৷ ২০১৬ সালে ওই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা শেষ করে যখন পরীক্ষা পাসের সার্টিফিকেট হাতে পাবেন, তখন জানতে পারেন যে, ওই সার্টিফিকেটের কোনো দাম নেই৷ কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ওই ইনস্টিটিউটের কোনো বৈধতা নেই৷ কোনো ডিগ্রি, বা ডিপ্লোমা দেওয়ার ক্ষমতাই নেই তাদের৷ ক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথমে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন৷ কয়েক মাস সময় চায় কর্তৃপক্ষ৷ সেই সময় ফুরিয়ে গেলে জানিয়ে দেয়, কিছু করার নেই৷ তারপরই ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ, রেল অবরোধ, মিছিল, অনশন বিক্ষোক্ষের মতো কর্মসূচি নিতে বাধ্য হন৷

‘ সার্টিফিকেট হাতে নিয়েই শহর ছাড়ব, নয়ত আমাদের লাশ ফিরবে মালদায়’

কেন্দ্র সরকার গোড়া থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্ব সতর্কভাবে এড়িয়ে চলেছে৷ তারা সংসদে এটিকে ‘‌নন ফরমাল ইনস্টিটিউট'‌ হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ অগত্যা ছাত্র-ছাত্রীরা তখন রাজ্য সরকারে দ্বারস্থ হয়৷ একটা রফাসূত্র মেলে যে, পলিটেকনিক ডিপ্লোমার সমতুল্য সার্টিফিকেট দেওয়া হবে সবাইকে৷ কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানের হাতে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই দুর্গাপুর পলিটেকনিক শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যায়৷ ফলে যে সার্টিফিকেট শেষ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে রাজ্য সরকারের কারিগরি শিক্ষা দপ্তর থেকে তুলে দেওয়া হয়, তারও কোনো দাম নেই৷ সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে কোনো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না, এমনকি অন্য কোনো কলেজে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভর্তিও হওয়া যাচ্ছে না৷

এরই মধ্যে, মালদায় ইনস্টিউটিউটের চত্বরে প্রতিবাদ অবস্থান করছিলেন যে ছাত্র-ছাত্রীরা, তাঁদের ওপর বহিরাগত গুন্ডারা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ৷ অনেকেই সেই হামলায় জখম হন৷ অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানেরই এক শিক্ষক নাকি এক ছাত্রীকে হুমকি দিয়েছেন, ‘‘‌ক্যামেরাগুলো না থাকলে তোকে রেপ করে শিটিয়ে দিতাম‌!''‌ ছাত্র-ছাত্রীদের আরও অভিযোগ, তাঁদের প্রাপ্য সার্টিফিকেট দিতে না পারলেও কোটি কোটি সরকারি টাকা নয়ছয় হয় মালদার এই গনিখান চৌধুরি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে৷ নিয়োগ নিয়েও হয় ঢালাও দুর্নীতি, লাখ লাখ টাকা হাতবদল হয়৷ মালদায় অবস্থানরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট এবং যাদবপুরে পথ অবরোধ করে ছাত্র-ছাত্রীরা৷ কিন্তু এতজন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ কী হবে, তার কোনো দিশা এখনো নেই৷ এঁরা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ অনেক কষ্ট করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে হয়েছে এঁদের৷ নিজেদের পড়াশোনায় কোনো ফাঁকি রাখেননি এঁরা৷ তার পরেও কেন এদের এভাবে পথে বসতে হলো, সেই জবাবদিহির দায় কারও নেই!‌