1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উচ্চ মাধ্যমিকেও স্বীকৃতি পেলেন রূপান্তরকামীরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ নভেম্বর ২০২২

রূপান্তরকামীরা সগর্বে জানাচ্ছেন আত্মপরিচয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবার উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনে ৬০০ পড়ুয়া নিজেদের তৃতীসয় লিঙ্গ বলে ঘোষণা করেছে।

https://p.dw.com/p/4JDCy
ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবিকার সংকট এখনো তীব্র।
ভারতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তৃতীয় লিঙ্গ আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে (প্রতীকী ছবি)ছবি: Reuters/F. Mascarenhas

তৃতীয় লিঙ্গ আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন তার অন্যতম। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অনলাইনে পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্ত করেছে। এতে লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে পুরুষ ও মহিলার পাশাপাশি ‘অন্যান্য'-র ঘর রাখা হয়েছিল। সংসদ সূত্রের খবর, প্রায় ৬০০ পড়ুয়া নিজেদের তৃতীয় লিঙ্গ বলে ঘোষণা করেছে রেজিস্ট্রেশনের সময়।

রূপান্তরকামীরা সমাজে এখনও ব্রাত্য। স্বপরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের দ্বিধা স্বাভাবিক। সেই সংকোচের বাঁধ ভাঙছে। তাই একাদশের কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়ারা অনলাইন ফর্ম পূরণের সময় নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিচয় জানিয়েছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অতীতেই অন্যান্য লিঙ্গ লেখার সুযোগ ছিল ফর্মে। উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে এই প্রথম সুযোগ দেওয়া হল। 

‘‘সেক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লে লাভ হবে না’’

স্বপরিচয় ঘোষণাকারীদের মধ্যে কলা বিভাগের পড়ুয়ার সংখ্যাই বেশি। বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের ক্ষেত্রে তা ১০০-র কাছাকাছি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, "একাদশের রেজিস্ট্রেশনের জন্য পোর্টাল তৈরির সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অন্যান্যদের লিঙ্গ পরিচয় ঘোষণার সুযোগ রাখা হবে। নাম নথিভুক্তির সময় এই ঘোষণাকে একটা অগ্রগতি হিসেবে দেখতে হবে।”

সংসদ সভাপতির সঙ্গে প্রায় সকলেই একমত, এটা রূপান্তরকামী সমাজের পক্ষে অগ্রগতির একটি লক্ষণ। রাজ্য ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতা সিনহা একে সাধুবাদ জানিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রেজিস্ট্রেশনের সময় এতো পড়ুয়া এগিয়ে এসে নিজেদের পরিচয় জানিয়েছে, এটা ভাল ব্যাপার। কিন্তু তাতে তাদের জীবন-জীবিকার কোনো সুবিধা হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সেক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লে লাভ হবে না।” 

গোটা দেশের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির নিরিখে এ রাজ্যের রূপান্তরকামীরা পিছিয়ে, এমনটাই দাবি এই সমাজের একাংশের। রূপান্তরকামীদের শংসাপত্রের প্রসঙ্গ টেনে রঞ্জিতা বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের কার্ড দেশ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ রাজ্যে সেটা বন্ধ। দেখতে হবে, যারা একাদশ শ্রেণিতে নাম নথিভুক্ত করল, তারাও ওই কার্ড পেয়েছে তো! নইলে কাজের ক্ষেত্রে কী সুবিধা হবে?”

রূপান্তরকামীদের অধিকার রক্ষা আইনে শংসাপত্র দেয় কেন্দ্র। এই সংক্রান্ত কার্ড তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের হাতে তুলে দেয় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জেলা প্রশাসন। এ রাজ্যের রূপান্তরকামীরা সেই কার্ড পাচ্ছেন না। সমাজকর্মী, রূপান্তরকামী তিস্তা দাস এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেও সংসদের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "স্কুল-কলেজের স্তরে লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য অনেক পড়ুয়াকে হেনস্থার শিকার হতে হয়। তৃতীয় লিঙ্গ ভর্তির প্রক্রিয়াতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কিছুটা অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যাবে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক সিলেবাসে বিষয়টিকে রাখলে আরো এগোনো যাবে।''

দেশের রূপান্তরকামী অধিকার আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব মুম্বাইয়ের গৌরী সাওয়ান্ত। তাঁর জীবনের কাহিনি নিয়ে মুক্তি পেতে চলেছে হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘তালি', যেখানে গৌরীর ভূমিকায় দেখা যাবে প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী সুস্মিতা সেনকে। রাজ্য উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে গৌরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাওয়ার আট বছর পরে স্বীকৃতি এলো। তবে চাকরি-সহ সব ক্ষেত্রে এই সুযোগ থাকা উচিত, তবেই বৈষম্য দূর হবে।” 

‘‘ওরা পড়াশোনা বেশি দূর এগোতে পারেন না’’

রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের দাবি, এ ব্যাপারে আগে থেকেই তারা উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা স্কুলে স্কুলে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি যাতে ছেলেমেয়েরা তৃতীয় লিঙ্গ সম্পর্কে জানতে পারে। তারই ফলে সংসদের উদ্যোগ সফল হয়েছে, এতো পড়ুয়া নিজেদের পরিচয় ঘোষণা করেছে।”

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবিকার সংকট এখনো তীব্র। তাদের বড় অংশকে রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিযুক্ত দেখা যায়। সেই প্রসঙ্গ টানেন ‘প্রান্তকথা'-র কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। প্রান্তজনের অধিকার আদায়ে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রধান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "লিঙ্গ বৈষম্যের জন্য ওরা পড়াশোনা বেশি দূর এগোতে পারেন না। সেই পরিবেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো তৈরি করা যায়নি। ফলে পেট চালাতে ভিক্ষার পথ বেছে নিতে হয়। তাই বুনিয়াদি স্তরে সংসদ যে পরিবর্তন আনল, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে বলে আশা করছি।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য