1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাঠগড়ায় ব্লগাররা!

সমীর কুমার দে, ঢাকা১৩ আগস্ট ২০১৫

একের পর এক ব্লগার ও মুক্ত চর্চার মানুষদের হত্যার জন্য দায়ী উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে সরকার চুপ৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, শনাক্তই করতে পারছে না৷ উল্টে ব্লগারদেরই দাঁড় করানো হচ্ছে কাঠগড়ায়৷

https://p.dw.com/p/1GFAV
Bangladesch Protest gegen Ermordung von US-Blogger (Bildergalerie)
ছবি: DW

কেন তাঁরা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লিখছেন? প্রশ্ন করা হচ্ছে ব্লগারদের৷ বলা হচ্ছে, ‘আবার এ সব লিখলে গ্রেপ্তার করা হবে তাঁদের৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে সাজাও ভোগ করতে হবে৷' – এ সব কথা ব্লগারদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিরা৷ অথচ মানুষ হত্যার শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড – এমন কথা কিন্তু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে একবারও মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ ফলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলো প্রশ্রয় পাচ্ছে, অভিযোগ গণজাগরণ মঞ্চের৷

সর্বশেষ গত শুক্রবার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল হত্যার পর পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা মুক্তমনে লেখেন, তাঁদের কাছে এবং আপনারা যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন সীমা লঙ্ঘন না করি৷ এমন কিছু লেখা উচিত নয় যেখানে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে, বিশ্বাসে আঘাত আনে৷'' এরপর গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেন, ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ব্লগে বা অন্য কোনো মাধ্যমে লেখালেখি করলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

সরকারের কর্তা-ব্যক্তিদের এ সব বক্তব্যের জবাবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ বাহিনীর প্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা অত্যন্ত আপত্তিজনক৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীও তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন৷ তাঁদের বক্তব্য পরোক্ষভাবে হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করছে৷ হত্যাকারীরা ধর্মকে সামনে এনে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে৷ আর রাষ্ট্র নানাভাবে হত্যাকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে৷''

খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকারকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অবিলম্বে এই খুনিদের খুঁজে বের করতে না পারলে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে৷ এমন চলতে থাকলে আমাদের অন্ধকার শাসনের দিকে যেতে হবে৷''

ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘সরকার উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে ভয় পায়৷ এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই তাদের সমীহ করে কথা বলেন৷ এবার উল্টে ব্লগারদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে, বিভিন্ন শাস্তির কথা মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ একটা গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতার পক্ষের সরকারের কাছে আমরা এই ধরনের অবস্থান আশা করতে পারি না৷ এ সব কারণেই খুনিরা উৎসাহিত হচ্ছে৷'' শুধু তাই নয়, মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করার মাধ্যমে সমাজে ভীতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

নীলাদ্রি হত্যার প্রতিবাদে যখন সারা দেশের মানুষ সোচ্চার, তখন নতুন করে সরকারের মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ব্লগারসহ ১৯ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ ‘ইত্তেহাদুল মুজাহিদিন' নামের এক কথিত সংগঠনের নামে সংবাদপত্র কার্যালয়ে এই চিঠি পাঠানো হয়, যেটা আসে গত বুধবার৷ ২০ জনের নামের ঐ তালিকায় প্রথমে থাকা নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নামটি লাল কালি দিয়ে কাটা৷ এরপর ধারাবাহিকভাবে ব্লগার আরিফ জেবতিক, সুশান্ত দাশ গুপ্ত, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, আব্দুর রহমান, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মকবুল হোসেন ও সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম দেয়া হয়েছে৷ তালিকায় এরপর রয়েছে ব্লগার আরিফুর রহমান, অমি রহমান পিয়াল, হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সি, মারুফ রসুল, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আরাফাত রহমান, ব্লগার নির্ঝর মজুমদার, ড. আতিক, আশফাক আনুপ ও নূর নবী দুলালের নাম৷

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে৷ ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো ‘স্লিপার সেল' তৈরি করে এ সব হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করছে৷ এই সেলের সদস্যরা একজন অপরজনকে চেনে না৷ তারা শুধু জানে ব্লগাররা নাস্তিক৷ তাই তাঁদের হত্যা করলে বেহেস্তে যাওয়া যাবে৷ এতে ধর্মীয়ভাবে তাদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি হয়৷'' এ সব কারণে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে একটু সময় লাগছে৷ তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিরা গ্রেপ্তার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷

নিলয় হত্যার পর আনসার আল-ইসলাম নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কার্যালয়ে ই-মেল পাঠিয়ে দায় স্বীকার করা হয়েছিল৷ সেখানে আনসার আল-ইসলামকে আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা বলা হয়েছিল৷ এরপর সোমবার রাতে বরিশাল গণজাগরণ মঞ্চের ছয়জন কর্মীর ছবি দিয়ে ‘আনসার বিডি' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ ‘ইত্তেহাদুল মুজাহিদিন'-এর নামে নতুন যে তালিকা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অনেকেই এর আগেও হুমকি পেয়েছেন৷

বরিশালে যাঁদের হুমকি দেয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন কবি হেনরি স্বপন, তুহিন দাস, সৈয়দ মেহেদী হাসান, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও সাংবাদিক নজরুল বিশ্বাস, প্রীতম চৌধুরী এবং কারু তুহিন৷ এঁরা সকলেই বরিশালের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী৷ হুমকি পাওয়ার পর তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ গত মঙ্গলবার বিকেলে বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন কবি হেনরি স্বপন৷

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে৷ পাশাপাশি হুমকিপ্রাপ্তদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতেও কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ৷'’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য