ইয়ুর্গেন ক্লপ - দ্য নরমাল ওয়ান
জীবনে কোনোদিন প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলেননি৷ অথচ কোচ হিসেবে সেই ‘প্রথম বিভাগ’ ফুটবলেই গড়ে যাচ্ছেন একের পর এক কীর্তি৷ তিনি জার্মানির ইয়ুর্গেন ক্লপ, যিনি নিজেকে পরিচয় দেন ‘দ্য নরমাল ওয়ান’ হিসেবে৷
সবসময় দ্বিতীয় বিভাগে
খেলোয়াড় হিসেবে ক্লপের ক্যারিয়ার ছিল ১৫ বছরের, যার মধ্যে ১১ বছরই খেলেছেন মাইনৎসের হয়ে৷ এবং সবসময় দ্বিতীয় বিভাগে৷ অর্থাৎ, ক্লপের কখনো প্রথম বিভাগের বুন্ডেসলিগা খেলা হয়নি৷ তাঁর খেলার ক্যারিয়ার শেষ হয় ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন মাইনৎসের প্রধান কোচ একহার্ড ক্রাউটসুনকে সরিয়ে ক্লপকে সরাসরি কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল৷
প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ
ক্লপ যখন মাইনৎসের হয়ে খেলতেন, তখন দলটি রেলিগেটেড হয়ে তৃতীয় বিভাগে নেমে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য খেলতো৷ কিন্তু কোচ ক্লপের অধীনে সেই মাইনৎসই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রথম বিভাগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে৷ ক্লপের কোচিং ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় মরসুম ছিল সেটি৷ এরপর টানা তিন বছর প্রথম বিভাগে খেলে মাইনৎস৷ তারপর আবার দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়৷ ক্লপও তখন মাইনৎস ছেড়ে ডর্টমুন্ডে যোগ দেন৷
ডর্টমুন্ডে শুরু
২০০৮ সালের জুলাইয়ে ডর্টমুন্ডে কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন ক্লপ৷ ডর্টমুন্ডের তখনকার কর্তৃপক্ষ তারকা খেলোয়াড় কেনার চেয়ে তারকা তৈরির নীতিতে মনোযোগ দিয়েছিল৷ সেই নীতি বাস্তবায়নে তাঁরা ক্লপকে নিয়োগ দেন৷ দায়িত্ব পেয়েই ক্লপ ২০ বছর বয়সি মাটস হুমেলস আর সুবোটিচকে দিয়ে দলের ডিফেন্স সাজান, যা বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সিদের দিয়ে গড়া ডিফেন্স ছিল৷ প্রথম দুই মরসুমে ক্লপের ডর্টমুন্ড ষষ্ঠ ও পঞ্চম হয়েছিল৷
ট্রফির পর ট্রফি
ক্লপের অধীনে ২০১০-১১ মরসুমে বুন্ডেসলিগা জেতে ডর্টমুন্ড৷ এক দশকের মধ্যে সেটিই ছিল ডর্টমুন্ডের প্রথম বুন্ডেসলিগা শিরোপা৷ এই সফলতা পরের বছরও ধরে রাখতে সমর্থ হয় ডর্টমুন্ড৷ এটিই ছিল প্রথমবারের মতো ডর্টমুন্ডের টানা দুইবার বুন্ডেসলিগা জয়৷
চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে হার
দুবার বুন্ডেসলিগা শিরোপা জেতার পর কিছুদিন সাফল্যের মুখ দেখেননি ক্লপ৷ তবে ২০১৩ সালে দলকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন৷ ১৯৯৭ সালে ঐ শিরোপা জেতার পর প্রথমবারের মতো আবারও ফাইনালে গিয়েছিল ডর্টমুন্ড৷ কিন্তু ঘরের প্রতিদ্বন্দ্বী বায়ার্নের কাছে ২-১ গোলে হেরে গিয়েছিলেন ক্লপ৷
এমন পরিণতি!
২০১৪-১৫ মরসুমে কী যেন হয়েছিল৷ শীতকালীন ব্রেকের সময় শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ডর্টমুন্ড৷ যদিও শেষ পর্যন্ত সপ্তম স্থানে পৌঁছাতে পেরেছিল তারা৷ এছাড়া জার্মান কাপের ফাইনালেও উঠতে পেরেছিল তারা, যদিও জিততে পারেনি৷ এই অবস্থায় ক্লপ আর ক্লাব কর্তৃপক্ষ একে অপরকে ছাড়তে সম্মত হন৷
‘দ্য নরমাল ওয়ান’
ডর্টমুন্ডে ছাড়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় ২০১৫ সালের অক্টোবরে লিভারপুলের দায়িত্ব নেন ক্লপ৷ এরপর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ক্লপকে হোসে মরিনিয়োর (যিনি নিজেকে একবার ‘স্পেশাল ওয়ান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন) সঙ্গে তুলনা করতে বললে ক্লপ নিজেকে ‘দ্য নরমাল ওয়ান’ বলে পরিচয় দেন৷
লিভারপুলে পথ চলা
অক্টোবরে দলের দায়িত্ব নিয়ে অষ্টম হিসেবে মরসুম শেষ করেন ক্লপ৷ তবে তিনি দলকে ইউরোপা লিগের ফাইনালে তুলতে পেরেছিলেন, যদিও সেভিয়ার কাছে হেরে যায় লিভারপুল৷ পরের মরসুমে চতুর্থ হয়ে লিগ শেষ করে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা নিশ্চিত করেছিলেন৷ আর গত মরসুমে তৃতীয় হয়েছিল ক্লপের দল৷ চলতি লিগে একটিমাত্র খেলা (রবিবার অনুষ্ঠিত হবে) বাকি আছে৷ শীর্ষে থাকা ম্যান সিটির সঙ্গে লিভারপুলের পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র এক৷
সমর্থকদের প্রিয়
ক্লপ মানেই আবেগ প্রকাশ, ক্লপ মানেই অ্যাটাকিং ফুটবল৷ তাই ডর্টমুন্ডের মতোই লিভারপুলের সমর্থকদের মন জয় করতে ক্লপের একটুও সময় লাগেনি৷
ফাইনালে ব্যর্থতা কি এবার ঘুচবে?
ডর্টমুন্ডকে যেমন ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে নিয়ে গিয়ে হেরেছিলেন, তেমনি লিভারপুলকেও গতবার ফাইনালে তুলে শিরোপায় হাত রাখতে পারেননি ক্লপ৷ তবে এবার সেমিফাইনালে বার্সেলোনাকে অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে তাঁর দল৷ এবারও কি শিরোরা অধরাই থেকে যাবে? উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১ জুন পর্যন্ত৷