ইয়ানুকোভিচের পলায়ন, টিমোশেঙ্কোর মুক্তি
কখনো কখনো সময়ের পরিবর্তন দেখে অবাক হতে হয়৷ ইউক্রেনের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ এখন পলাতক আর তাঁর প্রতিপক্ষ টিমোশেঙ্কো কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ক্ষমতায় ফেরার অপেক্ষায়৷ এই নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ভীষণ ক্লান্ত, তাতে কী!
কারাগারে আড়াই বছর কাটিয়ে ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো ভীষণ ক্লান্ত৷ তবে বড় কথা হলো, গত শনিবার থেকে তিনি মুক্ত৷ তাঁর রাজনৈতিক শত্রু বলে পরিচিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা হারানোর পরপরই রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে পালিয়েছেন৷ প্রায় একই সময়ে মুক্ত জীবনের আস্বাদ পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী টিমোশেঙ্কো ফিরেছেন কিয়েভে৷ কে বলবে কয়েকদিন আগেও পিঠের প্রচণ্ড ব্যথা সইতে না পেরে খারকিভের হাসপাতালে ভর্ত্তি হতে হয়েছিল তাঁকে!
ঐতিহাসিক সংসদ অধিবেশন
গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের আসন এমনিতেই টলে গিয়েছিল৷ তাই ইউক্রেনের সংসদ ভেরহোভনা রাডায় বিরুদ্ধে অভিসংশনের প্রস্তাব পাশ হওয়ায় পালানো ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর৷ একই অধিবেশনে কারাবন্দী টিমোশেঙ্কোকে মুক্তি দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়৷ ঐতিহাসিক এ অধিবেশনে ইউক্রেনের সংসদ সদস্যরা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনও চূড়ান্ত করেছেন৷ আগামী ২৫শে মে নির্বাচন হবে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে৷
সংগ্রামমুখর কয়েকটি বছর
নিজের মুক্তির দাবি আদায়ের জন্য এতদিন চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি ৫৩ বছর বয়সি টিমোশেঙ্কো৷ কারাগারে অনশন ধর্মঘট করেছেন বেশ কয়েকবার৷ পরিবারের সদস্যরা তাঁর পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন দেশে-বিদেশে৷ কারাগারে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন টিমোশেঙ্কো৷ অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিতে হয়েছিল বার্লিনের শারিটে হাসপাতাল থেকে৷
রাজনৈতিক সুবিচার
গত কয়েকবছর ধরে ইউক্রেন সরকার এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সম্পর্কের মাঝে কাঁটা হয়ে ছিলেন ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো৷ দু’দফা ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷ তখন ইউক্রেনকে ইইউ-র অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন অবিরাম৷ সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ইইউ-র সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর না করায় দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, সেই চুক্তির শর্তের মধ্যে টিমোশেঙ্কোর মুক্তির বিষয়টিরও উল্লেখ ছিল৷
স্ট্রাসবুর্গের ভর্ৎসনা
টিমোশেঙ্কোকে কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ইউক্রেনের আদালত শুধু যে ইইউ-র সমালোচনার শিকার হয়েছে, তা কিন্তু নয়৷ ২০১৩ সালে এক ঘোষণায় স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত জানায়, ইউক্রেনের আদালত টিমোশেঙ্কোর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে৷ ঘোষণায় আরো বলা হয়, টিমোশেঙ্কোকে অযৌক্তিকভাবে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত৷
ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত
২০১১ সালের আগস্ট মাসে টিমোশেঙ্কোকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাঁকে৷ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাশিয়ার গ্যাস কম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার কারণে এই শাস্তি দিয়েছিল আদালত৷
প্রতীকী ব্যক্তিত্ব
ইউক্রেনের অনেক মানুষের কাছে টিমোশেঙ্কো দশ বছর আগের ‘কমলা বিপ্লব’-এর প্রতীকী ব্যক্তিত্ব৷ গণতন্ত্র মুক্তির সেই আন্দোলনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল৷ সেই সুবাদে দু-দুবার প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন তিনি৷
ভালো-মন্দে মেশানো অতীত
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে টিমোশেঙ্কোর এখনো খুব সমাদর৷ তবে বিনুনি কাটা চুলের এই রাজনৈতিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হবার পর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি৷ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
বিক্ষোভেও তিনি ছিলেন
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে ছিল টিমোশেঙ্কোর ছবি৷ কারামুক্তির পর টিমোশেঙ্কো ফিরেছেন কিয়েভে৷ ফিরেই জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন৷ ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে শাস্তি পাওয়া টিমোশেঙ্কো তাই আবার ক্ষমতায় ফেরার অপেক্ষায়৷