1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ইসির সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না পাপুল’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

স্পিকারের চিঠি পেলেই পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিবে নির্বাচন কমিশন৷ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তিনি দেশের কোন আদালতে যেতে পারবেন না বলে জানান সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ৷

https://p.dw.com/p/3pdZu
Screenshot Website Bangladesh Parlament
ছবি: parliament.gov.bd

অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের৷ এরিমধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে রায়ের কপি এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন৷ শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘পাপুলের রায়টা আমরা পেয়েছি৷ আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় ৬১ পাতার রায়৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্পিকারের কাছে এগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ এখন তারা বিধি মোতাবেক অ্যাকশন নেবেন৷’’

রায়ের কপি আসার পর কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘এখন স্পিকারকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ তিনি দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নির্বাচন কমিশনকে বলতে পারেন৷ প্রথমটা হল, তার সংসদ সদস্যপদ বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্পিকার অবহিত করতে পারেন৷ দ্বিতীয়ত, রায়ের কপি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তিনি বলতে পারেন৷ এখানে আইনে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে৷ যেহেতু নির্বাচন কমিশনের গেজেটে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাই তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই৷ স্পিকারের চিঠি পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে৷’’

শফিক আহমেদ

স্পিকারের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনে এমন কোন চিঠি এসেছে কী-না, জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা মিডিয়া থেকে যদ্দুর জেনেছি, বৃহস্পতিবারই স্পিকারের কাছে রায়ের কপি এসেছে৷ এরপর তো তিন দিন বন্ধ৷ ফলে সোমবার হয়তো আমরা অফিসে গেলে বিষয়টি জানতে পারব৷ স্পিকারের চিঠি পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ আইনে যা আছে, সেটাই করবে নির্বাচন কমিশন৷’’

তবে নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, গেল সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ স্পিকারের চিঠি পেলেই পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাপুলের আসনে নির্বাচন করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়৷ এসব ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যাখাও তারা নিয়েছেন৷

সাবেক আইনমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনসুর হাবিবও জানিয়েছেন, তিনি যেহেতু কুয়েতের আইন ভঙ্গ করেছেন এবং সেই অপরাধে তার শাস্তি হয়েছে, সেই কারণে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে, ফলে দেশের আদালতে তিনি কোন আইনী প্রতিকার পাবেন না৷ ‘‘দেশের আদালতে শাস্তি হলে তার আইনী প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে৷ কিন্তু বিদেশি আদালতে শাস্তি হলে দেশের আদালতে আইনী প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই৷ কখনও যদি তিনি নির্দোষ প্রমান হয়ে আসতে পারেন তাহলে তিনি সংসদ সদস্যপদ ফেরত পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারেন৷ সেখানে প্রতিকার না পেলে তখন তিনি দেশের আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন৷ তখন তার জন্য আইনী প্রতিকারের পথ খুলবে৷’’

সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোন সংসদ সদস্য দুই বছরের অধিক সময়ের জন্য দণ্ডিত হলে এবং সেই রেকর্ড সংসদের কাছে পৌঁছালে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে৷ স্পিকার তার সদস্যপদ বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠাবেন৷ নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে৷

স্পিকারকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘‘সম্পূর্ণ রায়টি আমরা পর্যালোচনা করব৷ যেটা আরবিতে রয়েছে সেটির বঙ্গানুবাদ করে পর্যালোচনা করা হবে৷ আর মূল রায়টি শেষদিকে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে, সেটিও পর্যালোচনা করা হবে৷ সবকিছু দেখার পর দেশের সংবিধান, কার্যপ্রণালী বিধি ও আইন অনুযায়ী আমরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবো৷’’ এক প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, ‘‘যেহেতু এখন কুয়েতের আদালতের রায়ের কপি পাওয়া গেছে তাই পরবর্তী পদক্ষেপের সম্পূর্ণ এখতিয়ার স্পিকারের৷ অনেকদিন ধরেই সংসদ তার (পাপুল) বিষয়ে অফিসিয়ালি কিছু জানতে পারেনি৷ সেজন্য আমি নিজেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম৷ যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুয়েতের আদালতের রায়ের বিষয়ে অবহিত না হয়ে শুধু শুনে কিংবা পত্রপত্রিকায় দেখে তো সংসদ বা স্পিকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷ স্পিকার বা সংসদ এখন অফিসিয়ালি অবহিত হয়েছে, এখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’

সংসদের কার্যপ্রণালির ১৭২ বিধিতে বলা হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হলে কিংবা কোনো আদালতে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশক্রমে আটক হলে গ্রেফতারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে স্পিকারকে জানাবে৷ তবে পাপুলের বিষয়ে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ স্পিকারকে এতদিন কিছু জানায়নি৷

গত ২৮ জানুয়ারি পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে কুয়েতের একটি আদালত৷ বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা৷ ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল৷ পরবর্তীতে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্যপদ পান৷ পাপুল গ্রেফতারের পর তার এবং তার স্ত্রী, কন্যা ও শালিকার বিরুদ্ধে গত ১০ ডিসেম্বর মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ সেই মামলায় পাপুলের স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম জামিনে আছেন৷ যদিও গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের দেওয়া জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে দুদক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান