1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইসিতে ডিসি-এসপিদের হইচই, নির্বাচনকালীন ভূমিকা নিয়ে সংশয়

১০ অক্টোবর ২০২২

ডিসি-এসপিদের হইচই ও প্রতিবাদের মুখে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমানের বক্তব্য দিতে না পারাকে নির্বাচন কমিশন ভুল বোঝাবুঝি বলে মনে করে৷ তবে সাবেক এক নির্বাচন কমিশনার ও এক বিশ্লেষকের মত, এতে আইন ও সংবিধানের লঙ্ঘন হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4HxSX
Bangladesch | Büro der Wahlkommission von Bangladesch
ছবি: bdnews24.com

দায়িত্ব নেয়ার পর শনিবার প্রথমবারের মতো মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে ঢাকায় মতবিনিময় করে নতুন নির্বাচন কশিমন৷ এই সভায় দেশের সব জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপাররা (এসপি) উপস্থিত ছিলেন৷ নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন এবং নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মতো কাজ করার বার্তা দিতেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়৷

জানা গেছে, মত বিনিময় সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের ওপর দায় চাপান৷ তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপিদের তরফে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরেন৷ কোনো কোনো এমপি ইসি সদস্যদের প্রকাশ্যে গালি দিচ্ছেন বলেও জানান৷

কমিশনারকে বক্তব্য দিতে বাধা

ইসির পক্ষ থেকে আয়োজিত রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে ধারাবাহিক এই সংলাপে শনিবার বক্তব্য দিতে গিয়ে ডিসিদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আনিসুর রহমান৷ মাঠ প্রশাসনের কর্তাদের ‘নখদন্তহীন’ এবং তারা ‘মন্ত্রী-এমপিদের ছাড়া চলতে পারেন না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ ম্যাজিষ্ট্রেটদের জন্য বরাদ্দ গাড়ির জন্য তেলের টাকাও ডিসিরা দেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি৷

তার বক্তব্যের এই পর্যায়ে সভাকক্ষের মধ্যেই একযোগে ডিসি-এসপিরা হইচই শুরু করেন৷ এ সময় সিইসিসহ অন্য কমিশনার এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবও মঞ্চে ছিলেন৷ এ পর্যায়ে কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘তাহলে কি আপনারা আমার বক্তব্য শুনতে চান না৷’’ তখন সবাই একযোগে ‘না’ বললে নিজের বক্তব্য শেষ না করেই বসে পড়েন তিনি৷ আনিসুর রহমান সবশেষ জ্বালানি সচিব হিসেবে অবসরে যান৷

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে আনিসুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি৷

সামান্য একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে: রাশিদা সুলতানা

নির্বাচন কমিশন ও ডিসিরা যা বলছেন 

সভায় উপস্থিত দুই জন ডিসির সঙ্গে কথা বললে তারা দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনার আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা প্রকাশ করার মতো না৷ ফলে এর প্রতিবাদ জানানো হয়৷ এক পর্যায়ে তিনি যখন প্রশ্ন করেন যে, ‘আপনারা কি আমার বক্তব্য শুনতে চান না?' তখন সবাই না বললে তিনি বক্তৃতা শেষ না করেই বসে পড়েন৷ পরে আর এটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি৷ এই দুই জেলা প্রশাসকের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি৷

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন রাশিদা সুলতানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা এমন কিছু না৷ এটা সামান্য একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে৷ উনি বলাটাও দোষের হয় নাই৷ ...ওরা একটু রিয়্যাক্ট করেছে৷ এর বেশি কিছু না৷ এটার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন না৷ এটা একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা হয়ে গেছে৷ নানা কারণে সেটা হতে পারে৷’’

প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের আচরণের জন্য পরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘...ওটা ওখানেই শেষ, আমরা কেউ কিছু মনে রাখিনি৷ ওনারাও একবাক্যে সবাই বলেছেন, আপনারা যেভাবে নির্দেশনা দিবেন আমরা সেভাবেই কাজ করব৷’’

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে বলে আস্থা রাখছে ইসি৷ অন্যথায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান রাশিদা সুলতানা৷ তিনি বলেন, ‘‘যেখানে যেখানে নির্বাচন হচ্ছে সেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে তারা ইসির অধীনে৷ এক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ কোনো ব্যাত্যয় হলে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানানো  হয়েছে৷’’

কমিশনকেই পিছনে চলে যেতে বাধ্য করেছেন: রফিকুল ইসলাম

আইনের লঙ্ঘন?
তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম মনে করেন, জেলা প্রশাসকরা যা করেছেন তা সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন৷ হইচই করে একজন নির্বাচন কমিশনকে বক্তব্য দিতে না দেয়া সরকারি কর্মচারি আচরণবিধর লঙ্ঘন বলেও মত তার৷ এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের আদেশ নির্দেশ ওনারা শুনতে বাধ্য৷ নির্দেশ আইন সঙ্গত না হলে তারা তাদের উপরের কর্তৃপক্ষকে জানাবে৷ তখন সেখান থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

কিন্তু সেটি না করে সাংবিধানিক সংস্থার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের এমন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার৷ নির্বাচনকালীন সময়ে কর্মকর্তারা ইসির নির্দেশ অনুযায়ী আদৌ দায়িত্ব পালন করবেন কিনা এই ঘটনায় তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘ ওনারা যে আচরণ করলেন তাতে তো ওনারা বাধ্য নন৷ তারা শুধু প্রতিবাদ করেই পিছপা হননি বরং কমিশনকেই পিছনে চলে যেতে বাধ্য করেছেন৷’’

এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আমি হলে এটা মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, জন নিরাপত্তা সচিবকে জানাতাম৷ তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার ব্যবস্থা নিতাম৷’’

তবে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়া কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আনিছুর রহমানের ঠালাওভাবে মন্তব্য করা ঠিক হয়নি বলেও মনে করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার৷   

‘ডিসি-এসপিরা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করবে’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচনেই ডিসি-এসপিদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ ‘তারা রাতের ভোটে সহায়তা করেছে’ এমন মন্তব্য করেন তিনি৷ ডয়চে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা তো নির্বাচন কমিশনে৷ তারাইতো নিরপেক্ষ না৷ তারা যদি নিরপেক্ষ হতো তাহলে এ ধরনের আচরণ করতে সাহস পেত না৷ তাদের বিরুদ্ধে এই ঘটনার পর ব্যবস্থা নেয়া হতো৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে সামনের নির্বাচনে ডিসি-এসপিরা আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করবে৷ তারাই নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান