1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরান নিয়ে ট্রাম্পের দ্বিচারিতা

২০ এপ্রিল ২০২০

অ্যামেরিকায় মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়াল। তারই মধ্যে ইরান নিয়ে দ্বিচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। 

https://p.dw.com/p/3b9dw
ছবি: picture-alliance/dpa//CNP/AdMedia/T. Katopodis

ইরান নিয়ে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিচারিতা অব্যাহত। মধ্যপ্রাচ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইরান। মৃত পাঁচ হাজারেরও বেশি। এই অবস্থায় ট্রাম্প আবার ইরানকে সাহায্য করতে চাইলেন, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা তোলা নিয়ে একটা কথাও বললেন না। অথচ, ইরান এর আগে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা না তুললে তারা অ্যামেরিকার কাছ থেকে কোনও সাহায্য় নেবে না। রোববার সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প জানান, ''ইরান চাইলে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত অ্যামেরিকা।'' তবে একই সঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্য, ''করোনায় আক্রান্ত এবং মৃতের আসল সংখ্যা প্রকাশ করছে না ইরান।'' অর্থাৎ, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা থেকেও ট্রাম্প সরে আসছেন না। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাব নেহাতই লোক-দেখানো। ট্রাম্প নিযেধাজ্ঞা তুলে নিলে তাঁর সদিচ্ছা বোঝা যেত। তিনি জানেন, নিষেধাজ্ঞা থাকলে ইরান সাহায্য নেবে না। কারও কারও মতে সাহায্যের নামে আসলে ব্যবসার কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইরানকে তিনি ভেন্টিলেটর দিতে চেয়েছেন। বর্তমান সময়ে যার দাম এবং চাহিদা-- দুটোই আকাশছোঁয়া। বিশেষজ্ঞদের আরেক অংশের বক্তব্য, নির্বাচনের আগে ইরানকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনা ভোঁতা করতে চাইছেন ট্রাম্প।

এপ্রিলের গোড়ার দিকে আরও একবার ইরানকে মানবিক সাহায্যের কথা বলেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সে সময় ইরান তা নিতে রাজি হয়নি। ইরান প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ট্রাম্প যদি ইরানকে সত্যিই সাহায্য করতে চান, তা হলে তাদের ওপর থেকে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হোক। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে অনড় ডনাল্ড ট্রাম্প। রোববারের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ''করোনার প্রকোপে কাবু ইরান। বহু মানুষ আক্রান্ত। যদিও ওরা আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা গোপন করছে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকা ইরানকে সাহায্য করতে চায়। আমরা ইরানকে ভেন্টিলেটর পাঠাতে পারি। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য আরও কিছু প্রয়োজন হলে আমরা পাঠাতে পারি।'' কিন্তু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কি তোলা হবে? রোববার কিছু না বললেও, আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার কোনও প্রশ্নই নেই। বস্তুত, করোনা সংকট কালে এ নিয়ে দেশের ভিতরে এবং বাইরে যথেষ্ট সমালোচনার মুখোমুখিও হতে হয়েছে প্রেসিডেন্টকে। ডেমোক্র্যাটরা বার বার বলেছেন, বিপদের সময় অমানবিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত। পরমাণু শক্তির প্রশ্নে ২০১৫ সালে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।

ইরানকে ভেন্টিলেটর দিয়ে সাহায্য করতে চাইছেন ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর নিজের দেশে যথেষ্ট ভেন্টিলেটর আছে তো? নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সির মতো প্রবল ভাবে করোনা আক্রান্ত রাজ্য গুলির বক্তব্য, হাসপাতালে বেড নেই। প্রয়োজনের তুলনায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা নেহাতই অপ্রতুল। চিকিৎসকদের পিপিই বা সুরক্ষা পোশাকের অভাবও যথেষ্ট। বস্তুত সোমবার সকাল পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী অ্যামেরিকায় করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মৃত্যু হয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে সাড়ে সাত লাখ। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন ৪০ হাজারের কিছু বেশি লোক। কেবলমাত্র নিউ ইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজারের কিছু বেশি। তার পরেই রয়েছে নিউ জার্সি। তবে নিউ ইয়র্কের গভর্নরের বক্তব্য, আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য হলেও কমতে শুরু করেছে।

আশার আলো দেখছে ইউরোপ। রোববার গত এক মাসের মধ্যে এক দিনে সব চেয়ে কম মৃত্যু ঘটেছে স্পেনে। এখনও পর্যন্ত স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২০ হাজার। ইটালিতেও আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন কমছে। এখনও পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজার ৬৬০ জনের। জার্মানি সহ ইউরোপের বহু দেশেই ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিকের পথে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে। জার্মানিতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি থাকলেও একটি একটি করে নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যেও করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো।

আশার আলো চীনেও। গত দুই দিনে সেখানে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। গত তিন দিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কুড়ির নীচে নেমে গিয়েছে। মালয়েশিয়া পরীক্ষামূলক ভাবে আগামী ১৮ মে এক দিনের জন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন ডেকেছে। সোমবার বিকেলে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও লকডাউন বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। অস্ট্রেলিয়ায় বেশ কিছু অর্থনীতিবিদ সরকারের কাছে চিঠি লিখেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, লকডাউন না তুললে অর্থনীতি ধসে পড়বে। কিন্তু লকডাউন তুললেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় সামান্য স্বস্তির ছবি দেখা গেলেও ভারতীয় উপমহাদেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ বলছেন, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ এবং মে মাসের প্রথম সপ্তাহ সব চেয়ে ভয়ঙ্কর হতে পারে। বস্তুত গত এক সপ্তাহে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। প্রতিদিনই সংখ্যাটি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, পাকিস্তানে আক্রান্ত আট হাজার ৩৮৪, মৃত ১৬৮ জন। বাংলাদেশে আক্রান্ত প্রায় দুই হাজার ৫০০ জন। মৃত ৯১ জন। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লাখ। মৃত এক লাখ ৬৫ হাজার। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ছয় লাখ ২৫ হাজার।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)