1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরান নিয়ে ইউরোপের নারীদের ভাবনা

১৯ জুন ২০০৯

যেসব জার্মান মহিলা ইরানে বসবাস করছেন তারা প্রতিদিনের ইরান, সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা, নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ আবার একই সঙ্গে আতিথেয়তা - সবকিছুর এক অপূর্ব মিশ্রণ দেখছেন৷

https://p.dw.com/p/IUVH
পুরুষদের সমান অধিকার চায় ইরানের নারীরাছবি: picture-alliance / dpa

ইউরোপের অধিকাংশ মানুষের মনে ইরান সম্পর্কে ছবিটা নেতিবাচক৷ প্রচার মাধ্যমগুলোতে মূলত দেখা যায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিরোধ, পশ্চিম বিরোধী প্রেসিডেন্টের নানা বিতর্কিত বক্তব্য, মত প্রকাশে বাধা, বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত নারী - এসম্পর্কেই খবরা-খবর এবং প্রতিবেদন৷ এবারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থী প্রার্থী মুসাভির পক্ষে সমর্থন দেয় বহু মহিলা, বিশেষ করে বড় বড় শহরে৷ জয়ী ঘোষিত হয়েছেন অবশ্য আহমাদিনেজাদ৷ কিন্তু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে হয়েছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ৷কিন্তু ইরানে যেসব জার্মান মহিলারা বাস করছেন - তারা কি ভাবছেন ? তারা কোন ধরণের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন?

লাউরা হর্স্টমান একজন সাংবাদিক৷ তাঁর স্বামী কূটনীতিক৷ পেশাগত কারণে তাঁকে তেহরানে যেতে হয়েছে৷ সঙ্গে স্ত্রী লাউরা৷ গত দেড় বছর ধরে তাঁরা বাস করছেন তেহরানে৷ ৩০ বছর বয়স্ক লাউরা একবর্ণ ফার্সী জানেন না৷ এছাড়া তিনি অন্তঃসত্ত্বা৷ লাউরা জানাল, জার্মানিতে যে কেউ যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারে৷ কোন বাধা নেই৷ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া কোন ব্যাপারই না৷ কিন্তু এখানে পথ ঘাট চেনা বেশ ঝামেলার, প্রচুর যানবাহন৷ রাস্তায় প্রচন্ড ভীড়৷ কল্পনাই করা যায় না৷ দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগে৷ ভাষা জানা থাকলে যে কোন পরিবহনই ব্যবহার করা যায়৷ কিভাবে এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, কথা বলতে হবে তাও শেখা প্রয়োজন৷

লাউরা কিছুতেই চাচ্ছিলেন না তার সন্তান ইরানে জন্মগ্রহণ করুক৷ কিন্তু ইরানের চিকিৎসা ব্যবস্থায় তিনি ভীষণ অবাক হয়েছেন৷ তেহরানের ক্লিনিকের পরিবেশ, চিকিৎসকদের পেশাগত দক্ষতা বার্লিনের যে কোন ক্লিনিকের চেয়ে অত্যন্ত উচুমানের৷ বার্লিনের সঙ্গে কোন অবস্থাতেই তুলনা করা চলে না৷

তবে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বললেন আনিয়া জাকোবি৷ তিনি দীর্ঘদিন ধরে তেহরানে বসবাস করছেন৷ তাঁর স্বামী একজন পাদ্রী৷ আনিয়া বেশ শান্ত স্বভাবের৷ তবে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গেছিল তেহরানের একটি সুইমিং পুলে৷ তেহরানে পুরুষ এবং নারীদের সাঁতারের জায়গা ভিন্ন৷ আনিয়া এবং তাঁর স্বামী সাঁতার কাটতে গেছেন৷ টিকিট ছিল স্বামীর কাছে৷ পোশাক পাল্টে ফেলার পর টিকিট চেকার মহিলা তাঁর টিকিট দেখতে চায়৷ আনিয়া তাঁকে বোঝাতে ব্যর্থ হয় যে টিকিট স্বামীর কাছে৷ কিন্তু টিকিট চেকার ছিল নাছোড়বান্দা৷ একরোখা আনিয়া সাঁতারের পোশাক পরেই পুরুষদের সাঁতারের জায়গায় চলে যায় স্বামীর কাছে টিকিট আনতে৷ পেছনে টিকিট চেকার জুড়ে দিয়েছিল গলা ফাটিয়ে চিৎকার-হৈ চৈ, চেচাঁমেচি৷

আনিয়া আরো জানালেন, গত পাঁচ বছর ধরে আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ বাইরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থাকলেও আমি ঠিকই জিন্স পরে বের হই, এর ওপর থাকে আমার কোট৷ মাথা ঢেকে বের হয়ে যাই দুধ আনতে৷ এবং কোন কারণে স্কার্ফ যদি একটু ওপরে উঠে যায় তখন কোন মহিলা যদি আমার স্কার্ফ ঠিক করে দিতে আসে, আমি কিছু বলি না৷ আমি একজন বিদেশিনি৷ তবে কোন কোন সময় আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং তখন আমার মনে হয় অনেক হয়েছে আর না!

আনিয়া জাকোবি, লাউরা হর্স্টমানের মত আরো প্রায় ৩০ জন মহিলা তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে একটি বই লিখেছেন৷ বইয়ের নাম 'ওয়ান ওয়ে টিকিট টু তেহরান'৷ স্বামীর সঙ্গে কিছুদিনের জন্য তারা ইরানে ছিলেন৷ এদের মধ্যে অনেকেই আবার বিয়ে করেছেন ইরানীকে৷ যেমন করেছেন ইসোলডে সামী৷ ১৯৭২ সাল থেকে তিনি ইরানে বাস করছেন৷ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের কথাও তিনি ভুলে যাননি৷ যুদ্ধের টান-টান উত্তেজনায় ভরা সেই দিনগুলো৷ সে সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন৷ যদিও সন্তান তখনই চাচ্ছিলেনা৷ আর তাই অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটান তিনি৷ ইসোলডে সামী আরো জানান, সেই দিনগুলো ছিল খুবই কষ্টকর৷ সে সময় আমার পরিচিতের সংখ্যাও অনেক কম ছিল৷ আমার কোন জার্মান বান্ধবী ছিল না যার সঙ্গে আমি কথা বলতে পারতাম৷ এমন কেউ ছিল না যার কাছে আমি যেতে পারতাম, আমি প্রাণ খুলে কথা বলতে পারতাম৷ আমি ভীষণ নিঃসঙ্গ ছিলম, ভীষণভাবে একা৷

এই অভিজ্ঞতা অবশ্য পৃথিবীর অধিকাংশ অভিবাসীরই হয়ে থাকে৷ আজ আর ইজোলডে একা নয়৷ অনেক ইরানী বন্ধু-বান্ধবী রয়েছে তাঁর৷ গর্ভপাতও এখন আর নিষিদ্ধ বিষয় নয়৷

তিনি আরো জানান, ইরানের সমাজে এই বিষয়গুলো নিয়ে এখন আলোচনা হতে পারে৷ যখন কেউ এসব নিয়ে কথা বলে তখন সে বুঝতে পারে এই সমস্যা তার একার নয়, আরো অনেকেরই রয়েছে, এবং অনেকেই এসব নিয়ে আলোচনা করছে৷

তবে একথা ঠিক, যে মহিলারা 'ওয়ান ওয়ে টিকিট টু তেহরান' বইটি লিখেছেন তারা সবাই স্বেচ্ছায় ইরানে গেছেন, তাদের জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ তারা স্বাচ্ছন্দ্যে সেখানে বাস করছেন৷ তাদের সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে৷ কে কোন দেশ থেকে এল তাতে কিছু এসে যায় না৷ জার্মান নারীরা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন৷ তাঁরা ভালই আছেন৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক