1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব ঘিরে সেনেটে নাটক

২২ জানুয়ারি ২০২০

মঙ্গলবার মধ্য রাত পর্যন্ত ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব নিয়ে নাটকীয় বিতর্ক হল মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সেনেটে। আজ, বুধবার শুনানি শুরু হওয়ার কথা।

https://p.dw.com/p/3Wd6n
ছবি: picture-alliance/abaca/CNP/US Senate Television

নাটকীয়? না কি পূর্বপরিকল্পিত? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত অ্যামেরিকার পার্লামেন্টে যে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে এই প্রশ্নই তুলেছেন সাধারণ জনগণ। অনেকেই কটাক্ষ করে বলছেন, পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বা সেনেট ভেবেছিল মাঝরাত পর্যন্ত বিতর্ক চললে সাধারণ মানুষ ঘুমিয়ে পড়বেন। ফলে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ গুলি নিয়ে সেনেট কী বলছে, তা অনেকেই দেখতে পাবেন না। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটেছে। রাত ২ টো পর্যন্ত অ্যামেরিকা বসেছিল টেলিভিশন সেটের সামনেই।

গত মাসেই ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। এবার বিচার হওয়ার কথা উচ্চকক্ষ বা সেনেটে। যা মূলত রিপাবলিকানদের দখলে। এই কক্ষে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাব পাশ হলে তবেই প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রিপাবলিকান অধ্যুষিত সেনেটে প্রস্তাব পাশ হবে না। কিন্তু তাই বলে আগেই হার স্বীকার করতে রাজি হননি ডেমোক্র্যাট সাংসদরা। ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যানসি পেলোসি স্পষ্টই দাবি করেছিলেন, সেনেটের বিচারসভায় তাঁরা কয়েকজন সাক্ষী এবং বেশ কিছু জরুরি কাগজ পেশ করতে চান। সেনেট যেন তাদের সেই সুযোগ দেয়। পেলোসি বলেছিলেন, তাঁরা যে সাক্ষী উপস্থিত করবেন, তাতে দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে, ট্রাম্প দোষী। অন্য দিকে, সেনেটের কাছে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তাঁর ইমপিচমেন্টের বিচারই যেন না হয়। কারণ, তাঁর অভিযোগ পুরো বিষয়টিই ডেমোক্র্যাটদের চক্রান্ত।

এ হেন পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার সেনেটে প্রথম ইমপিচমেন্টের বিতর্ক শুরু হয়। চলে প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে। বিতর্কে উঠে আসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মূল দু'টি অভিযোগ। এক, পুনর্নিবাচনের সম্ভাবনা বাড়াতে ট্রাম্প বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন৷ ইউক্রেনের সরকারের উপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন৷ এবং দুই, তিনি জাতীয় নিরাপত্তার তোয়াক্কা করেননি এবং পার্লামেন্টের কার্যকলাপে বাধা দিতে অভূতপূর্ব অভিযান চালিয়েছেন৷ অভিযোগ, ডনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিয়ের জেলেনস্কিকে জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। চীনের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন।

ডেমোক্র্যাটদের দাবি, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির সাক্ষ্যপ্রমাণ তাঁদের কাছে আছে। সেনেটে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের সামনে তাঁরা তা প্রকাশ করতে চান। যার মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন জাতীয় উপদেষ্টা জন বোল্টন। ইউক্রেন বিষয়ে তাঁর সাক্ষ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গলবারের বিতর্কে সেনেটে রিপালবলিকনরা চেষ্টা করেছেন ডেমোক্র্যাটদের এই দাবি খারিজ করতে। বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে ডেমোক্র্যাটরা যে ফাইল নিয়ে আসার কথা বলছেন, তার বিরোধিতা করেন সেনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল। প্রাথমিক বিতর্কের দিনও তিনি ৩ থেকে ২ এ নামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।

মঙ্গলবার মাঝরাতে বিতর্ক শেষ হওয়ার পর আজ, বুধবার ফের সেনেটে বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা। সবার কাজ পরিচালনাককারী প্রধান বিচারপতি ৩ দিন ধরে সওয়াল জবাবের সময় ধার্য করেছেন।

তবে এ দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাভোস থেকে ফের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই গুজব। রিপাবলিকানদের সরকারি টুইট রিটুইটও করেছেন তিনি। যাতে বলা হয়েছে, সেনেটে নিরপেক্ষ ভাবে বিষয়টিকে দেখা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত কিছুর পরেও শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাশ হওয়া মুশকিল। এ কথা ডেমোক্র্যাটরা জানেন না তা নয়৷  কিন্তু নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যে ভাবে তাঁকে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে, তা তাঁর ভাবমূর্তির পক্ষে মোটেই সুখের নয়। তিনি হলেন দেশের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব এল। দেশ জুড়ে মানুষের মুখে মুখে এখন এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। রাত জেগে লোকের টিভির সামনে বসে থেকে বিতর্ক শোনাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, তাঁরা এ নিয়ে কতটা উৎসাহী৷  বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।

এসজি/জিএইচ (বিবিসি, সিএনএন, সিএনবিসি)