ইন্দোনেশিয়ায় মসজিদের নকশা নিয়ে হইচই
‘ইলুমিনাটি’ নামের গোপন এক সংগঠনের প্রতীকের সঙ্গে মসজিদের নকশার মিল আছে, এমন অভিযোগ জোরালোভাবে উঠেছে৷ কিন্তু মসজিদের নকশাকারীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
গোপন সংগঠনের প্রতীক?
পশ্চিম জাভা প্রদেশের শহর বান্দুংয়ে আল-সাফার মসজিদ৷ সেই মসজিদটির ভেতরে মূল বেদীর নকশাটি প্রাচীন এলিট ও গোপন সংগঠন ইলুমিনাটির অনুকরণে করা- এমন অভিযোগে সয়লাব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম৷
২. ইলুমিনাটি কি?
ব্রিটানিকা ও লাইভ সায়েন্সের তথ্যমতে, জার্মানির বাভেরিয়া অঞ্চলে ১৭৭৬ সালে ‘ইলুমিনাটি’ সংগঠনটি গড়ে তোলেন একজন খ্রিস্টান অধ্যাপক আডাম ভাইসহাউপ্ট৷ মূলত দর্শন ও বিজ্ঞানে ধর্মের (রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রভাবের) বিরোধিতা করেই এর ব্যুৎপত্তি৷ সবরকমের কুসংস্কার থেকে মানুষকে আলোকিত করবার উদ্দেশ্যেই এর যাত্রা৷ একটি ত্রিকোণ পিরামিডের ওপরের দিকে একটি চোখ - এর প্রতীক৷
অভিযোগের জবাব
অনেকে শুধু ‘ইলুমিনাটি’র সঙ্গে নয়, ত্রিভুজের ওপর চোখকে ইসলামে বর্ণিত একচোখা ‘দাজ্জাল’-এর সঙ্গে তুলনা করেন অনেকে৷ মসজিদটির নকশাকারী ও পশ্চিম জাভার গভর্নর রিদওয়ান কামিল এসব অভিযোগকে নাকচ করে দিয়েছেন৷
ইসলামিক কলা ও স্থাপত্য
ইনস্টাগ্রামে স্থপতি ও গভর্নর কামিল কিছু ঐতিহাসিক প্রমাণাদি তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন যে, মসজিদ নির্মাণে যুগে যুগে জ্যামিতিক আকার ব্যবহার করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, এই নকশাটি মূলত জাপানিজ আর্ট ফর্ম ‘ওরিগামি’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করেছেন তিনি৷
ত্রিকোণাকৃতি একটি মৌলিক বিন্যাস
ইন্দোনেশিয়ার আরো অনেক মসজিদে ত্রিকোণাকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে৷ দেশটির আরেক স্থপতি আভিয়ান্তি আরমান্দ বলেন যে এই মসজিদে যে জ্যামিতিক আকৃতিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তা খুবই সাধারণ ও নিরপেক্ষ৷ ‘লিমাসান’ বা পিরামিড আকৃতির ছাদ এই দ্বীপপুঞ্জে ঘর তৈরির খুব সাধারণ একটি বিষয়৷ মূলত বিরূপ আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়৷আভিয়ান্তি বলেন যে, জাকার্তার পন্দোক ইনদাহ মসজিদটিও একই আকৃতির৷
বৃষ্টি থেকে বাঁচতে
আরমান্দের মতে, ভারী বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে এই ত্রিকোণ নকশা করা হয়েছে৷ ওপরের ছবিতে পশ্চিম জাভার আগুং মসজিদের ছবি দেখানো হয়েছে, যেখানেও এই নকশা ব্যবহৃত হয়েছে৷
উত্তর মালুকুর পুরোনো মসজিদ
এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পর এমন ত্রিকোণ নকশা ব্যবহার করা হয়েছে, এমন অনেক মসজিদের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে৷ তার একটি দেশটির উত্তর মালুকুর পুরোনো এই মসজিদ৷ ইন্দোনেশিয়ার অসংখ্য মসজিদে কোনো মিনার নেই৷
আল-সাফার মসজিদ
যে মসজিদ নিয়ে এত বিতর্ক তা এবছর বিশ্বের ২৬টি মসজিদের নকশার সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০১৯ সালে আবদুললতিফ আল ফোজান পুরস্কার জিতে নিয়েছে৷ ২০১৩ সালে মূল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ২০১৭ সালে এটি চালু হয়৷ এখানে বারোশ’ মু্সু্ল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন৷