1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইনস্টলেশনের মাধ্যমে পৃথিবীর করুণ দশা তুলে ধরছেন তিনি

২৫ মার্চ ২০২১

বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে৷ সেই জরুরি বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে শিল্পও কি অবদান রাখতে পারে? অ্যামেরিকার এক শিল্পী ইনস্টলেশনের মাধ্যমে সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3r5ki
ছবি: DW

কয়েকশো কাগজের ছবির সমন্বয়ে প্রকৃতির একটি কোলাজ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ‘বায়োডাইভার্সিটি’ নামের ইনস্টলেশন পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য তুলে ধরছে৷ ক্লেয়ার সেলেস্ট তাঁর সৃষ্টির জগতে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছেন৷ শিল্পী হিসেবে নিজের বিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমি আসলে ছবি আঁকতাম৷ তারপর কোলাজের মাধ্যমে সেই ছবিগুলি পরিকল্পনা করতাম৷ একদিন বুঝলাম, যে সেই কোলাজ বরং মূল ছবির থেকে বেশি সুন্দর৷’’

ক্লেয়ার গোটা বিশ্বের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ঐতিহাসিক ছবি তুলে ধরেন৷ এই মার্কিন শিল্পী বার্লিনে ডেরা বেঁধে সেখান থেকেই বায়োডাইভার্সিটি-র মতো ইনস্টলেশন সৃষ্টি করে চলেছেন৷ প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘের সঙ্গে সতর্কবার্তাও শোনাচ্ছেন তিনি৷ ক্লেয়ার বলেন, ‘‘প্রথমে শুধু প্রকৃতিই ছিল বিষয়৷ তারপর বুঝলাম যে আমার ছবির কত জীব যে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বা গেছে, তখন আর বিষয়টি উপেক্ষা করা সম্ভব হলো না৷ তখন থেকেই এই বিষয়টিই আমার শিল্পসৃষ্টির প্রধান অংশ হয়ে উঠেছে৷’’

জীববৈচিত্র্য রক্ষার চেষ্টায় শিল্পী ক্লেয়ার সেলেস্ট

ক্লেয়ার চান না, যে তার সৃষ্টিকর্মগুলিকে নিছক সাজানোর উপকরণ হিসেবে দেখা হোক৷ তবে তিনি সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে কোনো রকম আপোশ করতেও প্রস্তুত নন৷ সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে তার সৃষ্টিকর্মের প্রদর্শনী হয়েছে৷

মিউনিখের এক বহুতল বিপণীতে তার তৈরি মিউরাল শোভা পাচ্ছে৷ ইলাস্ট্রেশন, ইনস্টলেশন থেকে শুরু করে কাচের ভাস্কর্যের মতো নানা শিল্পশাখায় তার অবাধ বিচরণ৷ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ক্লেয়ার বলেন, ‘‘ইনস্টলেশনের মধ্যে প্রবেশ করে মানুষ সত্যি নীরব হয়ে গেলে সেটাই আমার শিল্পসৃষ্টির সবচেয়ে বড় প্রশংসা বলে আমি মনে করি৷ তাদের চোখেমুখে বিস্ময়ও দেখা যায়৷ বিস্ময়ের সেই প্রাথমিক মুহূর্তই মানুষের সঙ্গে আমার শিল্পকর্মের সংযোগের সেরা অংশ৷’’

ক্লেয়ার সেলেস্ট বার্লিনের বোটানিকাল গার্ডেনের মতো সবুজ জায়গা থেকে প্রেরণা পান৷ কূটনীতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, ইটালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে বাস করেছেন এবং সে সব জায়গায় প্রকৃতির বৈচিত্র্য উপভোগ করেছেন৷ প্রকৃতির জন্য বর্তমান হুমকি তাঁকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে৷ করোনা সংকটের সময় নিজের উপলব্ধি সম্পর্কে ক্লেয়ার বলেন, ‘‘কোয়ারেন্টাইনের সময় প্রখম দুই বা তিন সপ্তাহে নিজের শিল্পকর্মগুলির দিকে তাকিয়ে মনে হতো, পৃথিবীতে এ সবের কোনো প্রয়োজন নেই৷ মনে হয় আমার আঠা ও কালি হয়তো তেমন পরিবেশবান্ধব নয়৷ আমার মনে সেই প্রশ্ন ঘোরে৷ তবে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে শিল্পসৃষ্টির কাজ চালিয়ে যাবো, কারণ পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে সেটি সত্যি গুরুত্বপূর্ণ৷ মনে হয় আমি মানুষকে একই সঙ্গে ইকোলজির জরুরি অবস্থা এবং আশার আলোর কথা শোনাচ্ছি৷ অন্তত সেই চেষ্টা করছি৷’’

আজকাল সেলেস্ট অনলাইন আর্কাইভ ব্যবহার করেন৷ তিনি কম্পিউটারে নিজের প্রকৃতির কোলাজের কাজ শুরু করেন৷ তারপর পুনর্ব্যবহৃত কাগজে সেগুলি প্রিন্ট করে কেটে নেন, যেমনটা তিনি তাঁর সর্বশেষ শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে করেছেন৷ সেটি এক ধরনের ঝাড়লণ্ঠন৷

ক্লেয়ার সেলেস্ট এখনো ঝুলন্ত ইনস্টলেশন নিয়ে কাজ করছেন৷ আলোর সাহায্যে তিনি সেটিকে উজ্জ্বল করতে তুলতে চান৷ একের পর এক প্রজাতির বিলুপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে তিনি সৃষ্টির পর আসলে সেটি জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন৷ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে আশার বার্তাও জরুরি৷ আমাদের নিজেদের বাঁচানোর সরঞ্জাম আমাদের হাতেই রয়েছে৷ সেই সত্যও আমি বার্তার মধ্যে তুলে ধরতে চাই৷ তাই আমি হয়তো এতে আগুন লাগাবো না৷’’

তার বদলে কাগজ দিয়ে আগুনের এমন শিখা তৈরি করেছেন তিনি, বার্তা অনুযায়ী যেগুলিকে মূল শিল্পকর্মে লাগানো বা সরানো যেতে পারে৷ ক্লেয়ার সেলেস্টের শিল্পসৃষ্টির মধ্যে প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়লেও আসলে বড়ই সুন্দর৷

আন্দ্রেয়াস লাইক্সনারিং/এসবি