ইতিহাসে সৌদি-মার্কিন বন্ধুত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পেয়ে থাকে কে? উত্তরে আসতে পারে ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েল, জর্ডান বা মিসরের নাম৷ কিন্তু বিশ্বরাজনীতিতে তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের সাথে মার্কিন বন্ধুত্ব একটু অন্যরকমই৷
বিশেষ বন্ধুত্ব
১৯৪৫ সালে সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট৷ তখন থেকেই বিশেষ এক বন্ধুত্ব শুরু দুই দেশের৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হলেও এই বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি৷ ১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন সমর্থিত শাহের পতন ঘটলে সৌদি আরব পরিণত হয় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বন্ধুতে৷
ইরানে ইসলামী বিপ্লব
১৯৭৯ সালে শাহকে সরিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইরানের ক্ষমতায় আসেন৷ অ্যামেরিকাকে ‘গ্রেট শয়তান’ আখ্যা দেন খোমেনি৷ তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে জিম্মি সংকট ও উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতার ফলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার আর পুনর্নির্বাচিত হতে পারেননি৷ আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় বরাবরই ইরানের বিপক্ষে সৌদি আরবের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
কুয়েত আক্রমণ
১৯৯০ সালের আগস্টে কুয়েত দখল করে সাদ্দাম হোসেনের ইরাক৷ সে সময় কুয়েতের রাজপরিবারকে আশ্রয় দেয় সৌদি আরব৷ যুক্তরাষ্ট্র কুয়েতকে ইরাকি বাহিনীর দখলমুক্ত করতে অভিযান চালায়৷ সে সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও মার্কিন বাহিনীকে নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷
টুইন টাওয়ার হামলা
সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং পরবর্তীতে বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের৷ ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা চালানোর পরও এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরেনি৷ ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর ইরাক আক্রমণেও সহায়তা করে সৌদি আরব৷
ইয়েমেন সংকট
হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবং প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সমর্থনে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালে ইয়েমেনে বোমা হামলা শুরু করে৷ তিন বছর ধরে চলা এ হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন৷ মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগও উঠেছে৷
কাতার
আরব বসন্তের পর থেকে এক সময়ের বন্ধু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল হয় কাতারের৷ অনেকটা বিপ্লবীদের পক্ষে কাতারের অবস্থান থাকলেও সৌদি আরব অবস্থান নেয় বিপক্ষে৷ তবে দুই দেশই বন্ধুপ্রতীম হওয়ায় বিরোধে পক্ষ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৭ সালে ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগে কাতারকে একঘরে করে দেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পায় সৌদি আরব৷
খাশগজি
তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার অভিযোগে বেশ বিপাকে পড়েছে সৌদি আরব৷ আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে এবং খাশগজি যুক্তরাষ্ট্রেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকায় বন্ধুর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্রও৷ তবে শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবকে এ বিপদ থেকেও উদ্ধারচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে৷ কোন প্রমাণ ছাড়াই খাশগজি ‘দুর্বৃত্তের’ হাতে নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷