ইতালিতে ৯৬ বছর বয়সে নতুন ‘যুদ্ধ’ জয়
শৈশবে বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন তিনি৷ দারিদ্র্যের কষাঘাতে ভেঙে না পড়া গুইসেপ্পে পাতের্নো করোনা সংকটেও সুস্থ থেকে অর্জন করেছেন ইতালির সবচেয়ে বেশি বয়সি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হওয়ার কৃতিত্ব৷ ছবিঘরে তারই গল্প...
‘যুদ্ধ’ময় জীবন
১৯৩০-এর দশকে বিশ্ব মহামন্দার সময় সিসিলিতে জন্ম গুইসেপ্পে পাতের্নোর৷ দারিদ্র্যের কারণে প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া৷ নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে অংশ নেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে৷ যুদ্ধ শেষে চাকরি নেন রেলওয়েতে৷
৩১ বছর বয়সে স্কুলে ফেরা
রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে বিয়েও করেন গুইসেপ্পে৷ তবে লেখাপড়া করার আকাঙ্খাটা ছিল৷ দুই সন্তানের বাবা হওয়ার পরও তাই স্কুলে ফিরতে অসুবিধা হয়নি৷ স্কুল গ্র্যাজুয়েট হওয়ার সময় গুইসেপ্পের বয়স ছিল ৩১৷
৯০ পেরিয়ে আরো অদম্য
বই পড়তে খুব ভালোবাসেন গুইসেপ্পে পাতের্নো৷ সেই অভ্যেস বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি নেয়ার স্বপ্নটাকেও বাঁচিয়ে রেখেছিল৷ স্বপ্ন পূরণের জন্য পালের্মো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ৯৩ বছর বয়সে৷
অসম সাহস, প্রবল ইচ্ছাশক্তি
৯৩ বছর বয়সে ইতিহাস ও দর্শনে স্নাতক পড়তে শুরু করার সময় গুইসেপ্পের মনে হয়েছিল, ‘‘ এখন না হলে আর কোনোদিনই হবে না৷’’ জীবনসায়াহ্নে এমন একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেখলেন সহপাঠীরা যে শুধু বয়সে তরুণ বলে শারীরিকভাবে বেশি সক্ষম তা-ই নয়, কম্পিউটারও জানে তারা৷ তবে গুইসেপ্পে কম্পিউটার শেখায় বাড়তি সময় না দিয়ে বসে পড়েছিলেন ৩৩ বছর আগে মায়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া টাইপ রাইটার নিয়ে৷
করোনাকালে স্বপ্নসৌধে
করোনার সময় ঘরে থেকেই ক্লাস করেছেন গুইসেপ্পে৷ টাইপরাইটারে খটখট শব্দ তুলেছেন লিখেছেন দিনভর৷ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন নিজেকে৷ অবশেষে ইটালির ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হয়েছেন গুইসেপ্পে পাতের্নো৷
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
গত জুনে মৌখিক পরীক্ষা শেষে সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফ্রাঞ্চেসকা রিজুতো ৯৬ বছর বয়সি ছাত্র গুইসেপ্পের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘‘আপনার চেয়ে কমবয়সি সব ছাত্রের জন্য আপনি একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷’’
এখনো স্বপ্ন দেখেন অমায়িক গুইসেপ্পে
বেশি বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকে বিশেষ কোনো কৃতিত্ব মনে করেন না গুইসেপ্পে৷ প্রশংসায় বিব্রত হয়ে শুধু বলেন, ‘‘আমি আর দশটা মানুষের মতোই অতি সাধারণ৷ বেশি বয়সে স্নাতক হয়ে আমি হয়ত অন্যদের ছাড়িয়ে গিয়েছি, তবে সেই কথা ভেবে কিন্তু আমি লেখাপড়া করিনি৷’’ লেখাপড়া তার কাছে এমন এক স্যুটকেস যাতে ‘অমূল্য রতন ভরে রাখা যায়’৷ ৯৬ বছর বয়সে তার নতুন পরিকল্পনা, ‘‘এখন আমি লেখালেখিতে মন দেবো৷’’