1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোলকধাঁধার মাঝে শিল্প সংগ্রহ

২৬ নভেম্বর ২০২০

কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা – মনে মনে নয়, বাস্তবেই পথ হারানোর সুযোগ করে দিচ্ছে বাঁশঝাড়ের এক গোলকধাঁধা ইটালিতে সেই বাগানের সঙ্গে রয়েছে অভিনব শিল্প সংগ্রহ দেখার সুযোগ৷

https://p.dw.com/p/3lqOW
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোলকধাঁধা
ছবি: DW

ইউরোপের সবচেয়ে বড় গোলকধাঁধার মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ছড়িয়ে রয়েছে৷ সেই বাঁশঝাড়ে ঢুকলে পথ হারাতেই হবে৷ প্রায় ৭০,০০০ বর্গ মিটার এলাকার কারণে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোলকধাঁধা৷ ইটালির উত্তরে পারমা শহরের কাছে অবস্থিত এই বাগানে দর্শকরা দিশাহারা হয়ে ওঠেন৷

প্রকাশনার কাজ থেকে অবসর নিয়ে ফ্রাংকো মারিয়া রিচি নিজের জমিতেই এই বাগান গড়ে তুলে একটি স্বপ্ন পূরণ করেছেন৷ সেখানে প্রায় দুই লাখ বাঁশের ঝাড় রয়েছে৷ এই উদ্ভিদ দ্রুত বেড়ে ওঠে, সবসময় সবুজ থাকে এবং ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে৷ ফলে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা৷

গোলকধাঁধায় প্রবেশ ও বের হবার আলাদা দ্বার রয়েছে৷ মাঝের অসংখ্য অলিগলিতে সহজেই পথ হারানো যায়৷ ডিডাব্লিউ সাংবাদিক হেন্ডরিক ভেলিং নিজে সেখানে গিয়ে হাঁটাচলা করে বলেন, ‘‘এখানে সবকিছু একই রকম দেখতে লাগছে৷ খালি মনে হবে – আরে, এই পথ তো আমি চিনি! পরে বোঝা যাবে এটা একেবারেই আলাদা এক জায়গা, আলাদা পথ৷ কোথায় যে আছি, সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই৷’’

ইটালিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোলকধাঁধা

‘লাবিরিন্তো দেলা মাসোনে’ নামের এই বাগানের বিন্যাস অত্যন্ত জ্যামিতিক, অনেকটা রোমান আমলের মোজাইকের মতো৷ ফলে সেখানে নিজের অবস্থান বোঝা বেশ কঠিন৷ একই সঙ্গে মনে বিস্ময় ও বিভ্রান্তি কাজ করে৷ তবে বিপদ থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থাও রয়েছে৷ সব জায়গায় অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য লেখা আছে৷ টেলিফোনে সেটা জানালে এদোয়ার্দো পেপিনো নিজে এসে পথভ্রষ্ট মানুষকে উদ্ধার করেন৷

তিনি এই গোলকধাঁধার প্রধান কর্ণধার৷ তিনিই পথ দেখিয়ে বিশাল এই এস্টেটের কেন্দ্রস্থলে নিয়ে গেলেন৷ সেখানে নব্য ক্লাসিকাল যুগের বেশ কয়েকটি ভবনের সমষ্টি শোভা পাচ্ছে৷ সব যুগেই মানুষ গোলকধাঁধা সম্পর্কে রোমাঞ্চ বোধ করে এসেছে৷ সাহিত্যেও তার উল্লেখ রয়েছে৷ এদোয়ার্দো পেপিনো বলেন, ‘‘ল্যাবিরিন্থ শব্দটির মূল অর্থ কিন্তু অত্যন্ত সিরিয়াস ও গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটি আমাদের জীবনের প্রতীক – অর্থাৎ আমাদের সামনে কঠিন বিষয়, জীবনের কঠিন পথ, উদ্ধারের পথ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস, মোক্ষপ্রাপ্তির আশা৷’’

ইটালির শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ফ্রাংকো মারিয়া রিচি জায়গাটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন৷ দ্রুতগতির গাড়ির প্রতি তাঁর ভালবাসা ছাড়াও সেখানে তাঁর সম্মিলিত সাহিত্যকর্ম শোভা পাচ্ছে৷ বর্ণাঢ্য বই ছেপে, শিল্প বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা করে এবং ডিজাইনার হিসেবেও তিনি যথেষ্ট খ্যাতি ও অর্থ উপার্জন করেছেন৷ তাঁর ব্যক্তিগত শিল্প সংগ্রহে পাঁচ দশকের ছবি দেখার সুযোগ পেলে গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাবার ক্লান্তি দূর হয়ে যায়৷

ফ্রাংকো মারিয়া রিচি ইতোমধ্যে মারা গেছেন৷ গোলকধাঁধাই তাঁর শেষ বড় প্রকল্প ছিল৷ তাঁর স্ত্রী লাউরা কাসালিস সেই কাজে সঙ্গ দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা ফ্রাংকোর স্বপ্ন ছিল৷ গত শতাব্দীর আশির দশকে সে একদিন হঠাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোলকধাঁধা তৈরির কথা বলেছিলো৷ তিরিশ বছর পর সে প্রকাশনা সংস্থাটি বিক্রি করে দিল৷ জানেন, সে চিরকালই সবকিছু অন্যভাবে করেছে৷ ফ্রাংকো তার জীবনে সব সময়ে অপ্রত্যাশিত কিছু করেছে৷’’

ইউরোপের সবচেয়ে বড় গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাবার মজাই আলাদা!

হেন্ড্রিক ভেলিং/এসবি