ইটালিতে একই ছাদের নীচে ইনফ্লুয়েন্সারদের কর্মকাণ্ড
২৮ মে ২০২১ইটালির প্রথম টিকটক কমিউনের সদস্যরা ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে একসঙ্গে থাকেন৷ মিলান শহরের কেন্দ্রস্থলে সুসজ্জিত ফ্ল্যাটই তাদের মঞ্চ৷ সোশাল মিডিয়ার কনটেন্ট তৈরি করাই তাদের লক্ষ্য৷ বয়স মাত্র ২১ হওয়া সত্ত্বেও সিমোনে বার্লিনি সবার বড়৷ সিমোনে বলেন, ‘‘ডেফহাউস শুধু আট জন টিকটক শিল্পীর বাসা নয়, এই জায়গাটি আমাদের আরও শিক্ষা দিচ্ছে৷ আমরা জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চাই, নিজেদের স্বপ্ন বাস্তব করতে চাই৷ যেমন অভিনেতা হওয়া আমার স্বপ্ন৷ প্রত্যেকের আলাদা স্বপ্ন রয়েছে, আইডিয়া রয়েছে৷ আমরা কিছু হাসিল করতে চাই৷''
বেশিরভাগ বাসিন্দাই ইতোমধ্যে টিকটক তারকা হয়ে উঠেছেন৷ সবারই দশ লাখেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে৷ প্রতিদিন তাঁরা ক্যামেরার সামনে নিজেদের দক্ষতার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করেন৷ মার্শাল আর্ট ও অভিনয়ের প্রশিক্ষণও চলছে৷ সবাই মিলে ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ তৈরি করেন৷ প্রত্যেকেই অন্যের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে নিজের পরিচিতি বাড়িয়ে নেন৷ ডেফহাউসের আর্ট ডিরেক্টর জন পেন্টাসুলিয়া বলেন, ‘‘ডেফহাউস গড়ে তোলার সময় টার্গেট গ্রুপ অর্থাৎ দর্শকদের পছন্দের ডিজাইন কনসেপ্ট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ অন্যান্য ‘কোল্যাব হাউস' বা গোষ্ঠীর টিকটকার, ইনফ্লুয়েন্সর ও শিল্পীরা বিলাসবহুল ভিলায় বাস করেন৷ এর মাধ্যমে কিছুটা হামবড়া ভাব, দূরত্ব সৃষ্টি হয় যা আমরা এড়িয়ে চলতে চেয়েছিলাম৷''
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের হাইপ-হাউস টিকটকারদের প্রথম ‘কোল্যাব হাউস' ছিল৷ ২০১৯ সালে সেটি গড়ে তোলা হয়েছিল৷ সাফল্যের সেই উদাহরণ ২০২০ সাল থেকে ইউরোপেও নকল করা হচ্ছে৷ ফ্রান্স ও ব্রিটেনে বেশ কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে৷
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ইটালিতেও এই ধারা পৌঁছে গেছে৷ ডেফহাউসে কে জায়গা পাবে, জুসেপে গ্রেকো সেই সিদ্ধান্ত নেন৷ তিনিও এক সময়ে সফল ইনফ্লুয়েন্সর ছিলেন৷ জুসেপে বলেন, ‘‘নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে প্রস্তুত এমন ইনফ্লুয়েন্সরদেরই বাছাই করা হয়৷ আমাদের কোর্সগুলিতে তারা নিজেদের মূল্যবোধ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন৷ শিক্ষক হিসেবে নয়, তরুণ প্রজন্মের মানুষ হিসেবে তারা নিজেদের দর্শকদের কাছে সেই মূল্যবোধ পৌঁছে দেবেন৷ গভীর কৌতূহলের ভিত্তিতে তারা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে এমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত তরুণদের সমৃদ্ধ করছেন৷''
লুকা কাসাদেই ‘ওয়েব স্টার্স চ্যানেল' নামে ইটালির এক ডিজিটাল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা৷ ইনফ্লুয়েন্সরদের পরিচিতি বাড়াতে মার্কেটিং-এর কাজে দক্ষ এই কোম্পানি৷ তথাকথিত ‘জেনারেশন জেড'-এর প্রভাব ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে চলায় বহু কোম্পানি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে মার্কেটিং-এর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে৷ লুকা মনে করেন, ‘‘এই হাউস নতুন এক মাধ্যম৷ সংবাদ পরিবেশনের নতুন এক উৎস এবং ইনফ্লুয়েন্সাররাই হলেন সাংবাদিক, যাদের কাছে নিজেদের প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর উপযুক্ত ভাষার সঠিক ‘কোড' ও সঠিক ব্যাকারণ রয়েছে৷ কোল্যাব-হাউসগুলি নতুন প্রকাশনা সংস্থার মতো৷ সেগুলির অর্থায়নের জন্য আমাদের বিভিন্ন ব্র্যান্ড, অর্থাৎ বিজ্ঞাপনের দিকে হাত বাড়াতে হচ্ছে৷''
বিজ্ঞাপন বাবদ আয়ের একটি অংশ ইনফ্লুয়েন্সারদের পকেটে যায়৷ কোনো কোনো দিন একশো পর্যন্ত কনটেন্ট তৈরি হয়৷ ফলে ব্যক্তিগত সময় প্রায় থাকে না বললেই চলে৷ তবে এই মুহূর্তে সেটা তেমন জরুরি নয়৷ তারা সবাই এখানে এসে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়৷ ডেফহাউসের বাসিন্দা আলেসিয়া লান্সা বলেন, ‘‘ইনফ্লুয়েন্সরদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলতে এবং মূল্যবান ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরি করতে হয়৷ অর্থাৎ, আমাদের বড় দায়িত্ব রয়েছে৷ সেটা সত্যি ভালো৷ কারণ বাকি সমবয়সিদের তুলনায় আমরা আরও অনেক বেশি মানুষের নাগাল পাই৷ আমরা মূল্যবান বিষয়, আইডিয়া ও মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে পারি৷ এভাবে আমরা আমাদের ফলোয়ারদের সাহায্য করতে পারি৷''
ডেফহাউসে থাকার ভাড়া ইনফ্লুয়েন্সরদের গুনতে হয় না৷ তবে যে জীবনযাত্রাকে অফুরন্ত বড় পার্টি বলে মনে হয়, তা আসলে বেশ কঠিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম৷
ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি