ইউরোপের পরিবর্তে আফ্রিকায় জীবন গড়ছেন টিউনিশীয়রা
১৩ আগস্ট ২০২২তিন মাসের পরীক্ষামূলক মেয়ার শেষে প্যান-আফ্রিকান ফার্মার্স অর্গানাইজেশনের প্রেস বিভাগে দুই বছরের চুক্তিতে এখন কাজ করছেন বুঘদিরি৷
বুঘদিরির মতো টিউনিশিয়ার হাজার হাজার মানুষ এখন উন্নত জীবনের আশায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন৷ টিউনিশিয়ার আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ৭০ শতাংশই দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে৷
তবে বুঘদিরি যখন দেশ ছাড়ার কথা ভাবছিলেন তখন ইউরোপে যাওয়ার কথা ভাবেননি৷ ‘‘ওখানে যেতে অনেক ধরনের কাগজনের প্রয়োজন হয়৷ এসব না থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
রুয়ান্ডা যাওয়ার আগে দেশটি সম্পর্কে বেশি কিছু জানতেন না বুঘদিরি৷ এখন সেখানে কাজ করতে গিয়ে দেশটি ভালো লেগেছে তার৷
সাম্প্রতিক সময় টিউনিশিয়ার প্রায় ১৭ লাখ নাগরিক কাজের সন্ধানে বিদেশ গিয়েছেন৷ এদের ৮০ ভাগই গেছেন ইউরোপে৷ এছাড়া চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও ভারতেও গেছেন অনেকে৷
ঠিক কতজন টিউনিশীয় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গেছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না৷ তবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল টিউনিশীয়দের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা৷
টিউনিশিয়ান ফোরাম ফর সোশ্যাল অ্যাণ্ড ইকোনমিক রাইটসের রমাদান বেন ওমর ডয়চে ভেলেকে জানান, টিউনিশিয়ার চাকরিপ্রার্থীরা এখন শুধু উত্তরের দিকে (ইউরোপ) তাকিয়ে থাকেন না৷ ‘‘আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ও শ্রমিকদের অনেক চাহিদা তৈরি হয়েছে,'' বলে জানান তিনি৷
আনিস বেলিদি ২০১৮ সালে টিউনিশিয়া ছেড়ে গ্যাবনে যান৷ তার প্রথম লক্ষ্য ছিল তিনি প্যারিস যাবেন৷ কিন্তু সেটা কঠিন হওয়ায় তিনি গ্যাবন যান৷ এখন তিনি সেখানে টিউনিশিয়ার চেয়ে ভালো আছেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানান৷
চীনের নতুন সিল্ক রুট নেটওয়ার্কের কারণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বর্তমানে ভালো আর্থিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে বলে জানান বেন ওমর৷ চলতি দশকেও এই ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করছেন তিনি৷
সেনেগালের ডাকারে বাস করা টিউনিশীয় নাগরিক সোনিয়া মুনির বেন ওমরের সঙ্গে একমত পোষণ করেন৷ মুনির একজন সাইকোথেরাপিস্ট৷ ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্সের হয়ে তিনি ১১ বছর পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন৷ বর্তমানে ডাকারে ঐ সংস্থার প্রজনন স্বাস্থ্য বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন৷
শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে মুনির চাইলে হয়ত ইউরোপে কাজ পেতেন৷ কিন্তু তিনি নিজে সেটা চাননি৷ ‘‘আমি সেনেগালে বাস করতে চেয়েছি৷ আমার এখানে কাজ করতে ভালো লাগে৷ জীবন এখানে আনন্দময়৷ অবসর সময় কাটানোর অনেক সুযোগ এখানে আছে'' ডয়চে ভেলেকে বলেন মুনির৷
টিউনিশিয়ার অনেক কোম্পানিও এখন আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক কার্যালয় ও শাখা খুলছে৷ সেসব অফিসেও টিউনিশিয়ার নাগরিকরা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন৷
তারাক গুইজানি/জেডএইচ