ইউরোপের দৃষ্টিনন্দন ১১টি সেতু
সেতু কেবল চলার পথ নয়, কোনো কোনো সময় সেটি হয়ে উঠে ক্ষমতা আর প্রভাব দেখানোর মাধ্যমও৷ আবার কোনো সময় চমৎকার স্থাপত্যের নিদর্শন হিসাবে বিপুল পর্যটক সমাগমও ঘটায় অনেক সেতু৷ ইউরোপের দৃষ্টিনন্দন কিছু সেতু দেখে নেওয়া যাক ছবিঘরে৷
পোন্তে ভেকিও সেতু, ফ্লোরেন্স
ইতালির ফ্লোরেন্সের এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল ১৩৪৫ সালে৷ প্রথমদিকে মাংসবিক্রেতা আর চামড়ার ব্যবসায়ীরা সেখানে পণ্য বেচাকেনা করত৷ তাঁরা আবর্জনা ফেলে নদী দূষিত করার কারণে ১৫৬৫ সালে এক ডিক্রির মাধ্যমে তাঁদেরকে সেখান থেকে সরানো হয়৷ এরপর সেখানে জায়গা হয় স্বর্ণকারদের৷ বর্তমানে স্বর্ণকারদের সঙ্গে চিত্রশিল্পীদের মিশেলে বিশেষ পরিবেশ তৈরি হয়েছে ওই সড়কে৷
রিয়ালতো সেতু, ভেনিস
ইতালির ভেনিসের সান পোলো ও সান মার্কো ডিস্ট্রিক্টকে সংযুক্ত করেছে গ্র্যান্ড ক্যানেলের উপরের নির্মিত রিয়ালতো সেতু৷ সেতুর অবকাঠামোকে ধরে রাখতে দেয়া আছে ওক গাছের ১২ হাজার খুঁটি৷ সেতুটির চারপাশে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷ পণ্যের পসরা সাজিয়ে সেতু এলাকায় অবস্থান করে অনেক জাহাজ৷ ছাদবিশিষ্ট ওই সেতুর দেয়ালের দৃষ্টিনন্দন সব চিত্রকর্ম নজর কাড়ে পর্যটকদের৷
চার্লস সেতু, প্রাগ
ভিয়ালিতাভায় ১৬ একর এলাকা জুড়ে প্রকাণ্ড আর অভিজাত আকৃতি নিয়ে চার্লস সেতু৷ এটি সংযুক্ত করেছে পুরান শহরের সঙ্গে নতুন শহরকে, যেখানে প্রাগ প্রাসাদের অবস্থান৷ সেতুর রেলিংয়ে আছে অনেক সেন্টের প্রতিকৃতি৷ এর মধ্যে বিখ্যাত একটি প্রতিকৃতি নেপুমুকা এলাকার ‘সেন্ট জন’-এর৷ ধারণা করা হয়, এই স্থানেই তাঁকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল৷
চ্যাপেল সেতু, লুসার্ন
এক সময় যোদ্ধাদের আসা-যাওয়ার রাস্তা ছিল চ্যাপেল সেতু৷ এখন এটি সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন শহরে পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম জায়গা৷ ১৩৩২ সালে নির্মিত এই স্থাপনা ইউরোপের সবচেয়ে পুরাতন কাঠবেষ্টিত সেতু হিসাবে বিবেচিত হয়৷ ১৯৯৩ সালের অগ্নিকাণ্ডে সেতুটির একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়, সিগারেটের আগুনে ওই ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছিল বলে মনে করা হয়৷ এরপরের বছর পুনর্নির্মাণের পর সেতুটি খুলে দেয়া হয় পথচারীদের জন্য৷
ওল্ড ব্রিজ, হাইডেলব্যার্গ
জার্মানির শুদ্ধতম রোমান্টিক শহর হচ্ছে হাইডেলব্যার্গ৷ কেবল পুরাতন শহর আর পুরাতন প্রাসাদ নয়, হাইডেলব্যার্গের বিখ্যাত ওল্ড ব্রিজও তেমন প্রেমময় আবেশ তৈরি করে৷ যুদ্ধ আর বন্যায় আগের কাঠের সেতু নষ্ট হয়ে গেলে ১৮ শতকে এটিকে পাথর দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়৷
মার্চেন্টস ব্রিজ, এয়ারফুর্ট
এটা কি সেতু, না বাড়িঘর? দুটোই বলা যেতে পারে৷ ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বাসভবন নিয়ে গড়া হয়েছে জার্মানির এয়াফুর্টের মার্চেন্টস ব্রিজ৷ প্রথমে সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল কাঠ দিয়ে, পরবর্তীতে ১৩২৫ সালে এটিকে রূপান্তর করা হয় পাথুরে স্থাপনায়৷ সেখানে মসলা ও দামি মেটালসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন হকাররা৷ সেতুর উপরে বিশেষ পণ্যের দোকান আর গ্যালারি দেখাও পাবেন আপনি৷
ওবারবাউম সেতু, বার্লিন
বার্লিনের সুদৃশ্য ও আড়ম্বরপূর্ণ সেতু ওবারবাউম, যেটি ক্রয়েৎসব্যার্গ ও ফ্রিডরিশহাইন ডিস্ট্রিক্টকে সংযুক্ত করেছে৷ সেতুর আশপাশে রয়েছে অগণিত ক্লাব আর ডিসকো বার৷ এমন পরিবেশের কারণে এটি যেমন পার্টির জন্য জনপ্রিয়, তেমনি সূর্যস্নানকারীদেরও পছন্দের জায়গা৷ ক্ষণে ক্ষণে বার্লিন মেট্রোর আসা-যাওয়া দুর্গের আবহ দেয় স্প্রে নদীকে৷
পঁ নউফ, প্যারিস
যদিও ‘পঁ নউফ’-এর মানে নতুন সেতু, কিন্তু এটি সিন নদীর উপরে নির্মিত সবচেয়ে পুরাতন সেতু৷ ১৬০৭ সালে যখন সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়, তখন এটি ছিল এক যুগান্তকারী ব্যাপার৷ কারণ এই ধরনের সেতুতে অনেক সময় বসবাসের ভবন থাকলেও ‘পঁ নউফ’ ছিল ভিন্ন৷ এটি পথচারীদের চমৎকার নদী আর শহরের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দেখার সুযোগ করে দেয়৷
টাওয়ার ব্রিজ, লন্ডন
বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত টানাসেতু টাওয়ার ব্রিজ৷ সেতুটির উপরে দু’টি টাওয়ার থাকলেও মূলত এর নামকরণ করা হয়েছে ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ থেকে৷ প্রতিদিন ৪০ হাজার যানবাহন চলে সেতুটির উপর দিয়ে, আর নীচ দিয়ে রয়েছে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা৷ বড় জাহাজ পার করতে সেতুর মধ্যভাগ যখন উঁচিয়ে তোলা হয়, তখন এটি মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা করে৷
গ্লেনফিনান রেলসেতু, স্কটল্যান্ড
অভিজাত ও প্রেমময় এই রেলসেতু ‘হ্যারি পটার’ সিনেমার মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ বাস্তবে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেল ‘দ্য জ্যাকোবিট’ এই সেতু দিয়ে পার হলেও সিনেমায় দেখানো হয়েছে হগওয়ার্টস এক্সপ্রেস৷ ২১ একর জায়গা নিয়ে ৩৯০ মিটার লম্বা গ্লেনফিনান৷
থ্রি ব্রিজেস, এডিনবরা
থ্রি ব্রিজেসের বিস্তৃতি ‘ফার্থ অফ ফোর্থে’, যেটি ফাইফ এলাকাকে এডিনবরা-র সঙ্গে সংযুক্ত করেছে৷ লাল রঙের ‘ফোর্থ রেল ব্রিজ’ পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ একক খিলানের সেতু৷ ১৮৯০ সালে নির্মিত এই সেতু এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷ এই সেতুর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালে চার লেনের ‘ফোর্থ রোড ব্রিজ’ নির্মাণ করা হয়৷ আর ২০১৭ সালে নির্মিত ‘কুইন্সফেরি ক্রসিং’ উত্তরাধুনিক প্রকৌশল শিল্পের অন্যতম নির্দেশকে পরিণত হয়েছে৷