ইউরোপে ৩০ বছরের যুদ্ধ
প্রথমে ক্যাথলিক বনাম প্রোটেস্টান্ট, পরে আঞ্চলিক সংঘাত থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল ইউরোপের কলঙ্কজনক যুদ্ধ ‘দ্য থার্টি ইয়ার্স ওয়ার’৷ ৩০ বছর মেয়াদি এ যুদ্ধ চলে ১৬১৮ থেকে ১৬৪৮ পর্যন্ত৷ দেখুন ৪০০ বছর আগের সেই যুদ্ধের সারসংক্ষেপ৷
লুটপাট ও সহিংসতা
খাবার পাওয়া যায় বা খাবার মজুদ রাখা যায় – এমন জায়গা ঘিরেই বেশিরভাগ যুদ্ধ হয়েছে ইউরোপে৷ জানা যায়, সে সময় কৃষকদের ওপর অত্যাচার করা হতো, যাতে তারা নিজেদের মজুদ রাখা শস্য বের করে দেয়৷ সুইডিশ ভাড়াটে সেনাদের অত্যাচারের কথাও ইতিহাসে কুখ্যাত৷ তারা ‘সুইডিশ ড্রিংক’ নাম দিয়ে মলমূত্র আর নোংরা পানির একটি মিশ্রণ তৈরি করেছিল, যা কারাবন্দি বা আটকদের মুখে জোর করে ঢেলে দেওয়া হতো৷
ক্যাথলিক বিজয় ঠেকালেন সুইডিশ রাজা
জার্মান প্রোটেস্টান্টদের বাঁচাতে সুইডিশ রাজা দ্বিতীয় গুস্তাভ অ্যাডল্ফ ১৬৩০ সালে যুদ্ধে যোগ দেন৷ এ সময় ইউরোপজুড়ে তাঁর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে৷ পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের নেতৃত্বের ক্যাথলিকদের বিজয়ের পথে তিনি বাধা হয়ে দাঁড়ান৷ এছাড়া যুদ্ধের ময়দানে তিনি নিজেই ছিলেন দলের সেনাপতি৷
রাজার মৃত্যু
‘দ্য থার্টি ইয়ার্স ওয়ার’-এর অন্যতম বড় যুদ্ধ হয়েছিল জার্মানির লুৎসেন নামের একচি জায়গায়, ১৬৩২ সালের ১৬ নভেম্বর৷ এই যুদ্ধে প্রচুর জানমালের ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও কোনো পক্ষ জেতেনি৷ এই যুদ্ধে রোমান ক্যাথলিকদের নেতৃত্ব দেন জেনারেল আলব্রেশ্ট ফন ভালেনস্টাইন৷ অশ্বারোহী বাহিনীর হাতে রাজা দ্বিতীয় গুস্তাভ নিহত হন৷ তাতে অবশ্য ক্যাথলিক বাহিনী একটি সাময়িক প্রচারণামূলক জয় পায়৷
মৃত্যুর মুনাফাখোরেরা
‘দ্য থার্টি ইয়ার্স ওয়ার’ কারো কারো জন্য প্রচুর মুনাফা নিয়ে আসে৷ বিশেষ করে সেনা নিয়োগ ও সংগঠিত সামরিক বাহিনী তৈরির অছিলায় মুনাফা পকেটে ভরেন অনেকেই৷ এদের মধ্যে আলব্রেশ্ট ফন ভালেনস্টাইন ছিলেন অত্যন্ত সফল৷ তিনি নতুন করে শুল্ক দেওয়ার একটি নিয়ম চালু করেন, যাতে কৃষক, বণিক ও সাধারণ নাগরিকরা সেনাদের সমস্ত খরচ দিতে বাধ্য হয়৷ তাঁর মূল দর্শন ছিল – যুদ্ধ তার নিজের খরচ তুলে আনবে৷
ফাঁসি
ফাঁসি আর নির্যাতন তখনকার নিত্যদিনের ব্যাপার ছিল৷ সেই সময়কার ফরাসি শিল্পী জাক কালো-র যুদ্ধ নিয়ে আঁকা ছবিগুলিতে তা স্পষ্ট ফুটে ওঠে৷ কলো তাঁর ছবিতে নাগরিকদের একই সাথে পরিস্থিতির শিকারের পাশাপাশি অপরাধী হিসেবেও দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ তাঁর আঁকা ছবি ‘দ্য হ্যাঙ্গিং’ এ সময়কার অন্যতম একটি ছবি৷
মে ১৬৪৮: শান্তির ঐতিহাসিক শপথ
অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি যে দীর্ঘ এই যুদ্ধের পরও শান্তি সম্ভব৷ কিন্তু জার্মানির প্রোটেস্টান্ট শহর ওসনাব্র্যুক এবং ক্যাথলিক শহর ম্যুনস্টারে পাঁচ বছর ধরে শান্তি আলোচনা চলে৷ পরে ম্যুনস্টারে যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষই শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে৷ ‘দ্য পিস অফ ওয়েস্টফেলিয়া’ নামের ঐ শান্তিচুক্তিকে এ যুগে সংঘাত সমাধানের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হয়৷