1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিফ্রান্স

ইউরোপ নিয়ে মাক্রোঁর দৃষ্টিভঙ্গি কি বাস্তবসম্মত?

১৪ এপ্রিল ২০২৩

তাইওয়ান নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর মন্তব্যে আলোড়ন পড়ে গেছে। ইইউ-র সার্বভৌমত্ব নিয়ে মন্তব্য করেছেন মাক্রোঁ।।

https://p.dw.com/p/4Q1za
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সার্বভৌমত্ব নিয়ে মাক্রোঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সার্বভৌমত্ব নিয়ে মাক্রোঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। ছবি: Robin van Lonkhuijsen/ANP/IMAGO

ছয় বছর আগে মাক্রোঁ প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে বলেছিলেন। ইইউ-তে বারবার 'কৌশলগত স্বশাসন' কথাটা ব্যবহার করা হয়। দুটোর মানে একই, তা হলো, গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থিক বিষয়ে অন্য কোনো দেশের মুখাপেক্ষি না থেকে ইইউ নিজের মতো করে নীতি নিতে পারা। এটাই ইইউ পার্লামেন্টের থিংক ট্যাংকের বক্তব্য। 

সম্প্রতি চীন সফর সেরে ফেরার পথে মাক্রোঁ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে আবার ইইউ-র সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটি তুলেছেন। তাইওয়ান নিয়ে তার মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। মাক্রোঁ সেখানে বলেছেন, ইইউ-কে অ্যামেরিকার উপর নির্ভরতা কম করতে হবে। সব বিষয়ে অ্যামেরিকার লাইন নেয়ার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে।

এই সপ্তাহের গোড়ায় ইইউ-র সার্বভৌমত্ব নিয়ে তার ভিশন কী, সেটা বলেছেন মাক্রোঁ। গত মঙ্গলবার হেগ-এ মাক্রোঁ আর্থিক সার্বভৌমত্বের কথা বলেছেন। প্রশ্ন হলো, তার এই মত কি রূপায়ণ করা যেতে পারে?

চীনের উপর ইইউ-র নির্ভরতা

মাক্রোঁর আর্থিক স্বনির্ভরতার পাঁচটি স্তম্ভ আছে, প্রতিযোগিতা, শিল্প নীতি, বাজার সুরক্ষা, বাণিজ্যিক সম্পর্কে পারস্পরিক সুবিধা দেয়ার নীতি এবং সহযোগিতা।

তার মত হলো, ইইউ-কে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে ভালো মানের জিনিস উৎপাদন করতে হবে। এজন্য ইইউ-র প্রতিটি দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দরকার। তিনি ইইউ-র দেশগুলির সাধারণ শিল্প নীতির পক্ষে। এই নীতি বাজারকে আরো শক্তিশালী করবে। আর পরিবেশ নিয়ে ইইউ-র লক্ষ্যপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির উপর জোর দিতে হবে।

আর এখানেই চীনের উপর ইইউ-র নির্ভরশীলতা সামনে আসে। কলম্বিয়ার বার্সেলোনা সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের গবেষক কারণে কোলোমিনা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ডিজিটাল ও গ্রিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইইউ চীনের উপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি ইইউ কমিশন একটা নতুন আইন প্রস্তাব করেছে। সেই আইনে খুব জরুরি কাঁচামাল নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকবে।''

এই গবেষকের মতে, ''এই ধরনের আইন দ্রুত রূপায়ণ করা সম্ভব কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশেষ করে, ইইউ যখন ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে চীনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।''

নিরাপত্তা নিয়ে অ্যামেরিকার উপর নির্ভরশীল

২০১৭ সালে মাক্রোঁ যখন ইউরোপের সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তখন তিনি ইউরোপের যৌথ বাহিনী, সাধারণ প্রতিরক্ষা বাজেট, অ্যাকশনের জন্য যৌথ পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার একমাস পর ইউরোপের নেতারা আবার তাদের সার্বভৌমত্বের কথা বলেন। তারা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইইউ-র শক্তি বাড়াবার কথা বলেন। ন্যাটোর দায়বদ্ধতা মেনে নিয়ে এই কাজ করার কথা বলেন।

জার্মান কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনসের গবেষক বেঞ্জামিন তালিস বলেছেন, ''মাক্রোঁ যে পথের কথা বলেছেন তা বাস্তসম্মত নয়। এই যে সার্বভৌমত্বের কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়। তার মতে মাক্রোঁ অ্যামেরিকার থেকে আরো স্বশাসন চেয়েছেন।''

তার মতে, ''নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা ইউরোপের নেই। ইউরোপের হাতে আধুনিক কামান আছে, সেনা আছে, কিন্তু তাও তারা অ্যামেরিকার উপর নির্ভরশীল। অ্যামেরিকার পরমাণু অস্ত্রসম্ভার তাদের সুরক্ষা দেয়।''

ইউরোপের ভিতর বিরোধ

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ইউরোপ গিয়ে বলেছেন, অ্যামেরিকার সঙ্গে জোট হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিত্তি।

তালিস মনে করেন, ''মাক্রোঁও গোটা ইউরোপের হয়ে কথা বলেননি। জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস তো রাশিয়া-ইউকত্রেন সংঘাতের আগের পরিস্থিতিতে ফিরতে চান। আর মাক্রোঁ চান, ফ্রান্সকে বড় শক্তি বানাতে।'' তালিসের দাবি, ''মাক্রোঁর এই দাবি, ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে বিভেদ বাড়াতে পারে।''

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্রোঁ যা বলছেন, তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। মাক্রোঁ শুধু এটা বলতে পারেন, 'আমি স্বপ্ন দেখি'। তবে তার স্বপ্ন সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।

লুসিয়া শুলটেন/জিএইচ/ডিডাব্লিউ