ইউক্রেনের যে গ্রামের চাষিদের যুদ্ধও থামাতে পারেনি
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর দেশের সব নারী, শিশু এবং ষাটোর্ধ পুরুষদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে বলেছিল ইউক্রেন সরকার৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ যানি৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গম চাষ করছেন তারা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
কৃষকদের গ্রাম
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভের কাছে ইয়াকভলিভকা গ্রাম৷ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী৷ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে দেশ ছেড়েছেন অন্তত ৪০ লাখ ইউক্রেনীয়৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকার অধিকাংশ মানুষ কোথাও যাননি৷ কৃষক অধ্যুষিত ছোট্ট গ্রামটির অনেকে এখনো সুযোগ পেলেই নেমে পড়েন কৃষিকাজে৷
মৃত্যুঝুঁকি
হামলা শুরুর এক সপ্তাহ পর খারকিভেও বোমা ফেলতে শুরু করে রাশিয়া৷ ইয়াকভলিভকা গ্রামে বোমার আঘাতে মারা যান চার জন, আহত হন ১১ জন৷
আতঙ্কের সেই রাত
প্রথম বোমা হামলার মনে পড়লে নিনা বোনদারেঙ্কো এখনো আঁতকে ওঠেন৷ জানালেন, সেদিন সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন তারা, ‘‘ সেদিন সেলারে বসে বসে শুধু ঈশ্বরকে স্মরণ করছি৷ বাচ্চাগুলোকে কম্বল জড়িয়ে শুইয়ে দিয়েছিলাম৷কিন্তু আমরা বড়রা ভোর তিনটা কি চারটা পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনি৷’’
গ্রামে কেন হামলা?
গ্রামের স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷ধারণা করা হয়, সেখানেই বোমা ফেলতে চেয়েছিল রুশ সৈন্যরা৷ কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় স্কুল ভবনটি প্রায় অক্ষত থেকে যায়৷ রয়টার্স অবশ্য বলছে, রুশ বাহিনী ইয়াকভলিভকা গ্রামে সত্যিই হামলা চালিয়েছিল কিনা তা তারা যাচাই করে দেখতে পারেনি৷রাশিয়া দাবি, তারা বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালায়নি৷
কৃষিপণ্য উৎপাদনে ইউক্রেন
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন৷ রুটির জন্যও বিখ্যাত দেশটি৷ইয়াকভলিভকা গ্রামে এখনো গম চাষ চলছে৷ তবে ক্ষেতে গমের বীজ বপণ করা হলেও গম শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলা সম্ভব হবে তো? এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান ‘গ্র্যানারি অব স্লোবোদা’র পরিচালক ভাদিম আলেকসান্দ্রোভিচ৷ অথচ গত মৌসুমে ৩০০০ টন গম, ৩০০০ টন সূর্যমুখী এবং ১০০০ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছিল তার প্রতিষ্ঠান!
অজানা ভবিষ্যৎ
আলেকসানদ্রোভিচ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ আমরা জানি না কী হতে চলেছে৷আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে কী কী হতে চলেছে তা-ও বুঝতে পারছি না৷’’
তবুও স্বপ্ন দেখেন ভেরা বাদেঙ্কো
যুদ্ধ শুরুর আগে ৫৩৩ জনের গ্রাম ছিল ইয়াকভলিভকা৷ ১৩৩ জন প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন৷ কিন্তু পরে অন্য এলাকা থেকে কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়ায় গ্রামের লোক সংখ্যা এখন ৪৩৬৷ বেঁচে থাকলে আবার নিজের গ্রামকে সুন্দর করে সাজাতে চান তারা৷ ৬৬ বছর বয়সি ভেরা বাদেঙ্কোর চাওয়া অবশ্য এত বড় কিছু নয়৷ তার ঘর এখন প্রায় ধ্বংস্তূপ৷ সুসময় এলে ঘরটা নতুন করে বানাবেন, সবার আগে ঠিক করবেন রান্নাঘরটা৷