1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আড়ংকে বাঁচাতে হবে

৪ জুন ২০১৯

আড়ং নিয়ে আমি গর্ব করি৷ নিজেদের একটি ফ্যাশন হাউসের ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে, কাছাকাছি বিদেশগুলোর সকলে চেনে, এর চেয়ে শ্লাঘার আর কী আছে?

https://p.dw.com/p/3JmnD
Kleidung der Marke Aarong aus Bangladesch
ছবি: DW/A. Islam

আমাদের অনেকেই ডনাল্ড ট্রাম্পের টাই বাংলাদেশে তৈরি, লিভাইস বা রালফ লরেন-এর বানানো পোশাকের বেশিরভাগই বাংলাদেশে বানানো হয়েছে বলে খুশি হই, খুশি হওয়াই উচিত৷

কিন্তু এসব তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে আমরা দর্জির দায়িত্ব পালন করি মাত্র, ডিজাইন বা সেলস্-মার্কেটিং- এর কোনোটাই আমরা করি না৷ তাই বিশাল ওই বাণিজ্য যজ্ঞে এত কষ্ট করেও আমাদের পাওনা নামমাত্র৷ যতদিন আমরা নিজস্ব ব্র্যান্ড না তৈরি করব, নিজেরা নেবো সব দায়িত্ব, ততদিন পর্যন্ত কিন্তু এই খুঁদ-কুড়ো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আমাদের৷ 

আড়ং তার যাত্রার শুরু থেকে প্রায় তিন দশক ধরে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে৷ ডিজাইনের স্বকীয়তায় প্রায় রুখে দিয়েছে ভারতীয় আধিপত্য৷ অভিজাত বা দামি ব্র্যান্ড বলতে ভারত-পাকিস্তান, এমনকি অ্যামেরিকা ক্যানাডার পোশাক নয়, আমরা আড়ংকেই বুঝি৷ শুধু তাই নয়, আড়ংকে অনুসরণ করে বা হাত ধরে আরো অনেকগুলো দেশি ফ্যাশন আউটলেট এসেছে৷ সেই দেশি ১০ কুড়ি বা ত্রিশ ভালো ব্যবসাও করেছে৷ 

কথা হচ্ছে আড়ং বেশি দাম রাখে কিনা? অবশ্যই বেশি দাম রাখে এবং রাখাই উচিত৷ আমি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স দেই, কিন্তু আড়ংয়ের জামাকাপড় আমার হাতে গোণা কয়েকটাই, আমার স্ত্রী বা মেয়ের আরো কম৷ মূলত দামের জন্যই আমরা আড়ংয়ে কেনাকাটা কম করি, আরেকটি কারণ ভিড়; সারাক্ষণই সেখানে মানুষ গিজগিজ করে, অন্য দোকানে গেলে বিক্রয়কর্মীরা খুশি হয়, আড়ংয়ে হয় বিরক্ত; এত এত বেচাকেনা করতে গিয়ে তারা হয়ত ক্লান্ত হয়ে পড়েন! 

আমি মনে করি, ফ্যাশন হাউসের জন্য দাম বেঁধে দেওয়া  হাস্যকর৷ দাম বেশি মনে হলে কিনবেন না সেখান থেকে৷ মিটে গেল! এখন যদি কেউ বলে যে, এইসবের জন্যই দেশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে, দেশে দুর্নীতি হচ্ছে, তবে তার সঙ্গে দ্বিমত করা ছাড়া আমার করার কিছু নেই৷ আড়ংয়ের শাড়ি-পাঞ্জাবির বেশি দাম সত্ত্বেও যে আমরা তা কিনতে চাই বিপণনের বিবেচনায় সেটাই ওর ব্র্যান্ড ভ্যালু৷ 

আমি জোর দিয়ে বলি, ১০০ টাকার কাপড় ২০০ টাকা মজুরির একটি পোশাকের দাম হাজার টাকার বেশিও হতে পারে৷ ভাল না লাগলে তা না কেনার অপার স্বাধীনতা আপনার রয়েছে৷ 

এবার গতকালের প্রসঙ্গে আসি৷ জানলাম, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গতকাল আড়ংয়ের একটি আউটলেটে গেছেন, হঠাৎ দাম বেশি রাখার অভিযোগে জরিমানা করেছেন, বন্ধ করে দিয়েছেন সারা দিনের জন্য৷ আমার প্রশ্ন– এই কাজটি ঈদের দুই দিন আগে কেন করতে হলো? এই অভিযোগে দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তই বা কেমন করে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব? যাঁরা আড়ংয়ের জামা কিনবেন ঠিক করেছিলেন, দাম বেশি দিতেও যাঁরা রাজি ছিলেন, তাঁদের বঞ্চিত করার এই আইনি শক্তি কোথায় পেলেন তিনি? বলা হচ্ছে, এই সাহসিকতার জন্য নাকি তাকে বদলি করা হয়েছে? 

মজার বিষয় হলো কর্তৃপক্ষ গতকাল বলেছিল এই বদলির সঙ্গে আড়ংয়ে অভিযানের কোনো সম্পর্ক নেই৷ আজ আবার বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়েছে! মানে কী? কী বার্তা আমাদের দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকেরা! 

DW Bengali Teamleiter - Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগছবি: DW/A. Islam

প্রসঙ্গে ফিরে আসি, আমি খেয়াল করেছি, প্রতি বছর ভারতীয় কেতা পাকিস্তানি কায়দার নানা পোশাক নানা নাম ধরে আমাদের দেশে আসে৷ আমরা হুমড়ি খেয়ে দ্বিগুণ তিনগুণ দাম দিয়ে সেগুলো কিনি৷ কিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই৷ আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডগুলো না দাঁড়ালে এই কেনা আর কাটা পড়া আমাদের অব্যাহত থাকবে৷  এই যুদ্ধে আড়ং আমাদের পথপ্রদর্শক৷

তবে আরো একটা বিষয় আমাদের একটু নজর করা উচিত৷ গতকাল আড়ং কাহিনির পর সামাজিক গণমাধ্যম আড়ং নিন্দায় ভরে গেছে৷ দেশের প্রধান ফ্যাশন ব্র্যান্ড হওয়া সত্ত্বেও কেন তারা এতটা অজনপ্রিয়, ন্যায়ভিত্তিক ব্যবসা তারা করছে কিনা এটিও নিশ্চয়ই তারা ভেবে দেখবেন৷ 

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান।
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য