1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসল অঙ্গের মতো হয়ে উঠছে কৃত্রিম হাত

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

দুর্ঘটনা বা অন্য কারণে হাত-পা কাটা গেলে দৈনন্দিন জীবন কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷ তবে আশার কথা হলো, বর্তমানে আর্টিফিশিয়্যাল ইন্টেলিজেন্সের কল্যাণে কৃত্রিম অঙ্গ বিকল্প হিসেবে আরো কার্যকর হয়ে উঠছে৷

https://p.dw.com/p/40H2i
Tiere mit Prothesen Schildkröte
ছবি: Getty Images/AFP/T. Kitamura

হাতটি কৃত্রিম হলেও সেটির শেখার ক্ষমতা রয়েছে৷ অতএব সেটিকে বুদ্ধিমান বলা চলে৷ শিক্ষক ও মালিক একই ব্যক্তি৷ ভল্ফগাং বাউয়ার অনায়াসে এবং প্রায়ে খেলাচ্ছলে নিজের কৃত্রিম হাত অনেকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারেন৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে সেটা সম্ভব হচ্ছে৷ ফলে অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এই সিস্টেমের বিশাল সুবিধা হলো, এটি আমার সঙ্গে মানিয়ে নেয় – আমাকে সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয় না৷ এটাই বিশাল পার্থক্য৷ কৃত্রিম হাত দিয়ে কিছু করার সময়ে আমাকে কার্যত কিছুই ভাবতে হয় না৷ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই প্রক্রিয়া চলে৷''

ভল্ফগাং বাউয়ার একজন চাষি৷ বাভেরিয়ায় তার খামার৷ সেখানে তিনি চাষবাস ও পশুপালন করেন৷ সেটাই চিরকাল তার স্বপ্ন ছিল, অন্য কোনো কাজের কথা ভাবতেই পারেন নি৷ কিন্তু তারপর সেই স্বপ্ন বড় বিপদের মুখে পড়লো৷ চপার যন্ত্রের চলমান ব্লেডের আঘাতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন৷

অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও সেই হাত রক্ষা করা সম্ভব হয়নি৷ তবে চাষি হিসেবে তার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে কৃত্রিম হাতের প্রয়োজন দেখা দিলো৷ ডুডারস্টাট শহরে অটোবক নামের কৃত্রিম অঙ্গ প্রস্তুতকারক কোম্পানির শরণাপন্ন হলেন তিনি৷ সেখানে থেরাপিস্ট হিসেবে ডানিয়েলা ভ্যুস্টেনফেল্ড ভল্ফগাং বাউয়ারের মতো রোগীদের কৃত্রিম বুদ্ধামত্তাযুক্ত প্রস্থেসিস ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেন৷ কয়েক সপ্তাহের মৌলিক প্রশিক্ষণের শুরুতেই বিশেষ এক কাফ পরানো হয়৷ তার মধ্যে আট জোড়া ইলেকট্রোড রয়েছে৷ ভল্ফগাং বাউয়ারের নিঃসাড় হাত থেকে সেগুলি পেশির স্পন্দন রেকর্ড করে৷

জটিল প্রযুক্তির প্রয়োগ

একটি অ্যাপ সেই ইম্পাল্স দৃশ্যমান করে তুলে সঞ্চালনের গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে৷ ডানিয়েলা ভ্যুস্টেনফেল্ড বলেন, ‘‘এই কাফ ও অ্যাপের মধ্যে ব্লুটুথ সংযোগ রয়েছে৷ কাফের মধ্যে অসংখ্য ইলেকট্রোড পরিমাপ করে চলেছে৷ ভল্ফগাং-এর সেই মাস্কিউলার টেনশনের সংকেত অ্যাপে পাঠানো হচ্ছে৷''

বাউয়ার তাঁর কাটা হাত নড়াচড়া করতে শিখছেন৷ এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চালনের জন্য মাসেল ইম্পাল্স যতটা সম্ভব আলাদা হতে হবে, যাতে কৃত্রিম হাত প্রত্যেক ইম্পাল্সের সঙ্গে নির্দিষ্ট সঞ্চালনের যোগসূত্র বুঝতে পারে৷ অ্যাম্পুটেশন সত্ত্বেও হাত খোলা বা বন্ধ করার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য মস্তিষ্কে জমা থাকে বলে সেই কাজে সুবিধা হয়৷

সঞ্চালন অনুযায়ী মাসেল ইম্পাল্স একবার স্পষ্ট হয়ে গেলে কৃত্রিম হাত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে মুভমেন্ট প্যাটার্ন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া শিখতে পারে৷ অ্যাপের সাহায্যে চিহ্নিত প্যাটার্নগুলি নির্দিষ্ট সঞ্চালন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় ও সেই তথ্য জমা রাখা হয়৷

রোগী অনুযায়ী প্রস্থেসিস ও প্রশিক্ষণ

ভল্ফগাং বাউয়ার বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রশিক্ষণ নেবার সময় প্রযুক্তিবিদরা নির্দিষ্ট মাপ ও প্রয়োজন অনুযায়ী কৃত্রিম হাত তৈরি করছেন৷ রোগীর নিজস্ব মুভমেন্ট প্যাটার্নের সঙ্গে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে৷ অর্থোপেডিক্স টেকনিশিয়ান হিসেবে এরিক আন্ডার্স বলেন, ‘‘রোগীকে শুধু কাটা হাতের সঞ্চালন কল্পনা করতে হয়৷ সেই অনুযায়ী সিস্টেম তখন বিভিন্ন ধরনের চিন্তার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে এবং শেষে সেই মুভমেন্ট সম্ভব করতে পারে৷''

এমন সুযোগ পেয়ে ভল্ফগাং বাউয়ারের জীবনযাত্রা আবার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কৃত্রিম হাত চালানো খুবই সহজ, কারণ শুধু মনে মনে হাতের মুঠো খুলতে, বন্ধ করতে বা ঘোরাতে চাইলেই বাস্তবে সেটা ঘটবে৷ ফলে প্রস্থেসিসকে কোন সংকেত পাঠাতে হবে, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করার কোনো প্রয়োজনই নেই৷''

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে জার্মানির এই কোম্পানি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে৷ এখনো পর্যন্ত শুধু ফোরআর্ম প্রস্থেসিসের ক্ষেত্রে এই ‘মিয়ো প্লাস স্টিয়ারিং' প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে৷ তবে ভবিষ্যতে অন্য কৃত্রিম অঙ্গের ক্ষেত্রেও এমন ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম সৃষ্টি হতে পারে৷ অন্য কিছু ক্ষেত্রেও উন্নতির লক্ষ্যে গবেষণা চলছে৷ এরিক আন্ডার্স বলেন, ‘‘বর্তমানে এমন সিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে কাজ চলছে, যা রোগীকে অনুভূতির ফিডব্যাক দেবে৷ অর্থাৎ কৃত্রিম অঙ্গ সত্ত্বেও অনুভূতি পাওয়া যাবে৷ কোনো এক সময়ে উত্তাপও অনুভব করা যাবে অথবা কোনো বস্তু হাতে নিলে তার সারফেস অনুভব করা যাবে৷''

কৃত্রিম অঙ্গের লাগাতার উন্নতি

মোটকথা প্রস্থেসিসকে যতটা সম্ভব আসল হাতের মতো করে তোলার চেষ্টা চলছে৷ বর্তমানে কৃত্রিম অঙ্গের ক্ষমতার উদাহরণ দেখতে হলে জুরিখ শহরে সাইব্যাথলনের মতো ইভেন্টের উপর নজর রাখতে হবে৷ প্রতি চার বছর অন্তর গোটা বিশ্ব থেকে অ্যাম্পুটেড বা অঙ্গচ্ছেদের শিকার হয়েছেন এমন মানুষ এই প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে অংশ নেন৷ তারা কৃত্রিম অঙ্গের ক্ষমতার উদাহরণ তুলে ধরেন৷

ভল্ফগাং বাউয়ারকে অনেক মাস ধরে থেরাপি করিয়ে তাঁর ইন্টেলিজেন্ট ও সেল্ফ-লার্নিং কৃত্রিম হাতকে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে৷ তিনি বেশ দ্রুত অগ্রগতি করছেন৷ তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা সত্ত্বেও প্রস্থেসিস নিয়ে জীবনে অভ্যস্ত হতে বাউয়ারের অনেক ধৈর্য ও স্ট্যামিনার প্রয়োজন হচ্ছে৷ ভল্ফগাং বলেন, ‘‘আমি বলি, মানুষ সবসময় কিছু খেলা করে৷ যা করা যাচ্ছে না, সেগুলির জন্য বার বার চেষ্টা করতে হবে৷ কিছু ব্যাপার আবার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায়৷ আবার কিছু কাজের জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, অনুশীলন করতে হয়৷''

লাগাতার অনুশীলন করে গেলে তবেই প্রস্থেসিস নতুন গুণাগুণ আয়ত্ত করে৷ থেরাপি, কাফ-ট্রেনিং ও রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী রদবদলসহ এই হাইটেক যন্ত্রের দাম ৬০,০০০ ইউরো৷ কৃষক সংঘ সেই ব্যয়ভার বহন করেছে৷ ভল্ফগাং বাউয়ার বলেন, ‘‘স্বীকার করতেই হবে, যে আমি প্রস্থেসিস ছাড়া জীবনের কথা ভাবতেই পারি না৷ সারা দিন এই প্রস্থেসিস ব্যবহার করি৷ দৈনন্দিন জীবন, ব্যক্তিগত জীবন, খাওয়ার মতো স্বাভাবিক কাজ... যাই হোক না কেন, প্রস্থেসিস ছাড়া চলে না৷''

সৌভাগ্যবশত ভল্ফগাং বাউয়ারকে চাষের স্বপ্ন ছাড়তে হচ্ছে না৷

নিল্স ভাইবেল/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য