আল্লামা আহমদ শফী: পদত্যাগের পর জীবনাবসান
হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা আল্লামা আহমদ শফী শুক্রবার মারা গেছেন৷ এর আগে বৃহস্পতিবার ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান৷
পড়াশোনা
আল্লামা শফী রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায় পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসা এবং হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসাতেও চার বছর লেখাপড়া করেন৷ ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি৷ এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন৷
আলোচনা-সমালোচনা
বাংলায় ১৩টি ও উর্দুতে নয়টি বইয়ের রচয়িতা তিনি৷ আলেমদের বড় একটি পক্ষের কাছে খুব শ্রদ্ধার পাত্র৷ তবে নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বিভিন্ন সময় হয়েছেন সমালোচিত৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে তিনি বেশি আলোচনায় আসেন৷ ২০১৭ সালে তার সঙ্গে বৈঠকের পর কওমির সনদের স্বীকৃতি এবং সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
‘বড় হুজুর’
হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আহমদ শফী, যাদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত৷তিনি কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি৷ এছাড়া হেফাজতে ইসলাম নামে সংগঠনের আমিরের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন৷
অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব
দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালকের পদে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী৷ অসুস্থ আল্লামা শফীর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে কয়েক মাস আগে বাবুনগরীর সঙ্গে শফী সমর্থকদের দ্বন্দ্ব বাঁধে৷ চলতি বছরের জুনে সহকারি পরিচালকের পদ হারান বাবুনগরী৷ আহমদ শফী আজীবন মুহতামিম পদে থাকবেন বলেও সেসময় শূরা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়৷
ছাত্র বিক্ষোভ
বুধবার কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন৷ তারা আল্লামা শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুরও চালান৷ সেই সঙ্গে আনাস মাদানি কর্তৃক অব্যাহতি দেওয়া তিন শিক্ষককে পুনর্বহাল, তার নিয়োগ দেয়া ‘অযোগ্য ও বদ আখলাকের’ শিক্ষক ও স্টাফদের ছাঁটাই এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের উপর জুলুম ও হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানায়৷
পদত্যাগ
বৃহস্পতিবার রাতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বৈঠকে আল্লামা শফী পদত্যাগ করেন৷ তার ছেলেসহ দুই শিক্ষককে অব্যাহতিও দেয়া হয়৷ বৈঠকের পর আহমদ শফীকে মাদ্রাসাটি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম শহরের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ এর মধ্য দিয়ে মাদ্রাসাটিতে আহমদ শফীর সুদীর্ঘ কর্তৃত্বের অবসান ঘটে৷
মৃত্যু
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ এই নেতা মৃত্যুবরণ করেন৷ চিকিৎসার জন্য শুক্রবার বিকালে হেলিকপ্টারে করে তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, আহমদ শফীর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতায় ভুগছিলেন।