1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাটুক আঁধার

দেবারতি গুহ১৩ ডিসেম্বর ২০১২

বিজয়ের মাসে প্রতি বছরের মতো এবারও মুক্তিযুদ্ধে হারানো স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমের আলো জ্বালালো বাংলাদেশে নারী আন্দোলন জগতের অন্যতম সংস্থা ‘নারীপক্ষ’৷

https://p.dw.com/p/171Us
Bangladesh is paying homage to the martyrs of the historic Language Movement of 1952 to mark 'Amar Ekushey' – the Language Martyrs Day and UNESCO's International Mother Language Day. The Central Shaheed Minar is the main location of the celebrations. Copyright: DW/Harun Ur Rashid Swapan 21.02.12, Bangladesh
ছবি: DW

৮ই ডিসেম্বর, শনিবার, ২০১২৷ সময় বিকেল পাঁচটা৷ সেই হবু হবু সন্ধ্যাতেই মোমের আলো দিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আলোকিত করলো নারীপক্ষ৷ প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হলো ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার' কর্মসূচি৷ সেখানে দেশের সকল অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানালো তারা৷ মোমের আলোয় সুরতীর্থের শিল্পীদের কণ্ঠে কবিগুরুর ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে' গানটি যেন স্বপ্নের আবেশ ছড়ালো৷ উপস্থিত সকলেরই হৃদয় গেল ছুঁয়ে...৷

‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার' শিরোনামে এই শ্রদ্ধাঞ্জলির অনুষ্ঠান ১৯৮৮ সাল থেকে আয়োজন করে আসছে নারীপক্ষ৷ কী রয়েছে এর প্রেক্ষাপটে? সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা শিরীন হক বললেন, ‘‘এটা একটা ‘মেমোরিয়াল' অনুষ্ঠান, যেখানে আমরা আমাদের হারানো স্বজনদের স্মরণ করি৷ সেই সঙ্গে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধের কিছু চিন্তা ও দর্শন৷ শুরুতে এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য৷ আমরা সাধারণত বক্তা হিসেবে যাঁদের ডাকি, তাঁরা নাম করা কোনো রাজনৈতিক নেত্রী নন, নন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা৷ আসলে সাধারণের কথাকে তুলে ধরার একটা মঞ্চ হিসেবে আমরা এই অনুষ্ঠানটাকে দেখি৷ সাধারণ মানুষের যুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতাই তুলে ধরার চেষ্টা করি আমরা৷''

এ বছর অনুষ্ঠানটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল: ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে'৷ কিন্তু কেন? শিরীন হক জানালেন, ‘‘সম্প্রতি রামুতে, টেকনাফে যে ঘটনা ঘটে গেল .... বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর যে হিংসাত্মক একটা আক্রমণ হলো, সেটার সাথে সাথে এ দেশে আরো যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের ওপর যে আক্রমণ, আহমেদিয়াদের ওপর আক্রমণ – এগুলো সব মাথায় রেখেই অসাম্প্রদায়িক বোধটাকে জাগ্রত করা যে, আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে কোনোভাবে অটুট রাখবো৷ এই বোধটা যদি প্রতিটা মানুষের মধ্যে থাকে, তাহলে আর এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে না৷ মানুষ যদি ‘কমিটেড' থাকে, ‘ডিটারমাইন্ড' থাকে যে সাম্প্রদায়িকতা তারা মেনে নেবে না, একমাত্র তাহলেই সেটা সম্ভব৷ এই জিনিসটাকেই তুলে ধরার জন্য আমরা এবার এই বিষয়টি নিয়েছিলাম৷''

Week 50/12 Women 2: Naripokko's annual program on those who died in 1971 - MP3-Mono

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নারীপক্ষের সভানেত্রী ইউএম হাবিবুন নেসা জানান যে, তাঁরা অন্যায়-অবিচারের অন্ধকারকে দূর করতে মোমবাতি জ্বেলেছেন, যাতে এ আলো এনে দেয় একাত্তরে নির্যাতিত সেই অসংখ্য নারীর জীবনে প্রশান্তি, ফিরিয়ে দেয় সম্মান ও আত্মমর্যাদা৷

তিনি বলেন, সে সময়কার বর্বর পাকিস্তানি সেনারা এ দেশের নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে৷ জঘন্য অপরাধ করেছে৷ কিন্তু এর ৪১ বছর পরও আমরা নির্যাতিত নারীদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে পারিনি৷ তাই এবার নারীপক্ষ উত্থাপন করে তিন দফা দাবি – যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধর্ষিতা, ইজ্জতহানি, সম্ভ্রমহানি ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার বন্ধ করা এবং বীরাঙ্গনাদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা৷

নারীপক্ষের অন্যতম সদস্যা শিরীন হকের কথায়, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আমরা যখন প্রথমে এ দাবি তুলি, তখন এই যুদ্ধকালীন ধর্ষণকে যুদ্ধাপরাধই কেউ কখনও বলেনি৷ এখনও রাজনৈতিক বা সামাজিক নেতৃবৃন্দ বলুন, সবাই এক কথায় একে মা-বোনের ইজ্জতহানি বলেই বর্ণনা করেন৷ কেউ কিন্তু সরাসরি ওভাবে উল্টিয়ে দেয় না জিনিসটা৷ আমি মনে করি, প্রথমত আমার ইজ্জত, আমার সম্ভ্রম, আমার ‘চ্যাসটিটি'-র মধ্যে পড়ে না৷ এই যে ‘চ্যাসটিটি' বা ‘অনার' – এই জিনিসটাকেই আমরা ‘চ্যালেঞ্জ' করছি৷ দ্বিতীয়ত এত বড় একটা অপরাধ, সেটাকে মা-বোনের ইজ্জতহানি বলে বর্ণনা করলে নারীকে আরো বেশি অপমান করা হয়৷ আর তৃতীয়ত, এর বিচার হওয়া দরকার৷ এটাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ‘প্রসিকিউশন'-এ যাওয়া দরকার৷ ধর্ষণের শিকারকে ধর্ষিতা বলে চিহ্নিত না করে যে ধর্ষণ করছে, তাকে অপরাধী বলে চিহ্নিত করা প্রয়োজন৷''

প্রসঙ্গত, শনিবারের ঐ অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মনীষা মজুমদার৷ শারমিন সাথী ইসলাম গেয়ে শোনান ‘জয় হোক, জয় হোক' গানটি৷ ছিল ‘ছোটদের বড়দের সকলের' এবং ‘এমন মানব জনম আর কী হবে' গান দুটির পরিবেশনাও৷ এছাড়া, অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরচিত ‘তালাশ' উপন্যাসের কিছু অংশ পড়ে শোনান লেখিকা শাহীন আখতার আর মুক্তিযু্দ্ধের স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ড. লায়লা বানু, সাফিনা লোহানী ও মোজাহেরুল হক৷

মোমের আলো, গান আর স্মৃতিচারণের মাধ্যমে আবারো প্রকাশিত হয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, যেখানে আলোর স্মরণে কেটে যাবে আঁধার, অধিকার নিশ্চিত হবে সকলের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য