1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলিয়ার ভিসি-কে ছাত্রনেতা: গালে দুইটি চড় মারব

৪ এপ্রিল ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাকে অকথ্য ভাষায় হুমকি ছাত্রনেতা গিয়াসুদ্দিন মণ্ডলের।

https://p.dw.com/p/49QD4
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রতিবাদ। ছবি: Subrata Goswami/DW

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাকে ছাত্রনেতা গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল বলে, ''ওই গালে দুটো চড়িয়ে দেব। আমার চড়ে প্রচুর লাগে। তোর যে কয়টা ছেলে আছে, জিজ্ঞাসা করে নিবি।'' গিয়াসুদ্দিন তৃণমূলের সাবেক ছাত্রনেতা বলে অভিযোগ। তৃণমূল অবশ্য জানিয়েছে, সে এখন আর তাদের সঙ্গে যুক্ত নয়। আর এই প্রথম নয়, এর আগেও দুই বার সে আলিয়ার উপাচার্যকে নিগ্রহ করেছে।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তবে ডিডাব্লিউ সেই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। তবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও তার টুইটে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উপাচার্যের চেয়ার ঘিরে তিনজন বেসরকারি নিরস্ত্র রক্ষী দাঁড়িয়ে আছে। গিয়াসুদ্দিন তার দিকে আঙুল তুলে একেবারে মুখের সামনে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিল। পরে গিয়াসুদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছে, সে উপাচার্যকে হুমকি দিয়েছিল এবং ওই ভাষায় কথা বলেছিল।

উপাচার্য পুলিশকে ডেকেছিলেন। কিন্তু পুলিশ আসেনি বলে অভিযোগ। তবে পরে গিয়াসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গিয়াসুদ্দিন কে?

গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিল। পরে বিভিন্ন পরীক্ষায়  সে সাপ্লিমেন্টারি পেয়েছিল এবং পড়া শেষ করেছিল কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে বলে আনন্দবাজার জানাচ্ছে। 

২০১৪ সালে গিয়াসুদ্দিনকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি করা হয়। ২০১৭ সালে আলিয়া ক্যাম্পাসের হস্টেল থেকে টাকা আদায় করা ও ক্যান্টিনের টাকা নয়ছয় করা নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।  পরপর দুই জন উপাচার্য আবু তালেব খান ও মহম্মদ আলিকেও হেনস্থা করে গিয়াসুদ্দিন। তারপর তাকে আলিয়া থেকে বহিষ্কার করা হয়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকেও গিয়াসুদ্দিন বহিষ্কৃত হয়। তারপরেও সে কী করে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায়, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

Indien Westbengalen | Aliah Universität
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাস। ছবি: Subrata Goswami/DW

গিয়াসুদ্দিনের দাবি, উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। পাঁচজনকে তিনি বেআইনিভাবে পিএইচডি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তারা আগে থেকে প্রশ্নপত্র জানত। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সে আলিয়ায় উপাচার্যের ঘরে গেছিল।

তবে ছাপার অযোগ্য ভাষা ব্যবহার করা, উপাচার্যকে অকথ্য ও অভদ্র হুমকি দেয়া প্রতিবাদের কোন পথ, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতারা।

মুখ্যসচিবকে ডাকলেন রাজ্যপাল

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন এমনই, যেখানে আইন লঙ্ঘনকারীরা বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে তাদের পথে চলে। যারা আইন মানেন তাদের কাছে এটা ভয়ংকর বিষয়।

Indien Westbengalen | Aliah Universität
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ টাউন ক্যাম্পাস। ছবি: Subrata Goswami/DW

বিরোধী নেতাদের প্রতিক্রিয়া

বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটাই এখন পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। উপাচার্যকে ঘেরাও করা, বিক্ষোভ দেখানো রাজ্যে প্রায়ই হয়। কিন্তু আলিয়াতে যা হয়েছে তা নজিরবিহীন।''

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ''একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল কী করতে পারে, এটা তার প্রমাণ। একটা কেস সাজানো হচ্ছে। আনিস খানকে নিয়ে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে। তার থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে এই ঘটনা। সেলিমের মতে, তৃণমূল আলিয়ার ঘটনার দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না।''

কংগ্রেসের ছাত্র শাখা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ছাত্র পরিষদের সভাপতি সৌরভ প্রসাদ দাবি করেছেন, ''গিয়াসুদ্দিনের দৃষ্টান্তযোগ্য শাস্তি হোক।''

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''তিন বছর আগে গিয়াসুদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার অভিযোগ, এটা বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের চক্রান্ত। ইচ্ছেকৃতভাবে এই কাজ করে, তার ভিডিও তুলে তা বাজারে ছাড়া হয়েছে। তৃণমূলের বর্তমান ছাত্র সংসদ ঘটনার নিন্দা করেছে। তারা উপাচার্যকে সমর্থন করেছে।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, আনন্দবাজার)