আল সালাম গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযান
২৩ মে ২০১৯অভিযানে পুলিশ আল-সালাম গ্রুপের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে৷ গ্রুপটির বেশিরভাগ সদস্যই ইরাকি ও সিরিয়ান বংশোদ্ভুত শিয়া মুসলিম৷ তাঁরা অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চোরাচালান এবং পাসপোর্ট জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
একইসঙ্গে তাঁরা ধর্মীয় উগ্রবাদে জড়িত বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে৷ ‘‘বুধবারের বড় এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আল-সালাম-৩১৩ বাইকার দল সম্পর্কে প্রমাণ সংগ্রহ ও প্রস্তুত করা৷ অভিযানের প্রস্তুতি চলেছে বিগত কয়েক মাস ধরে,’’ বলেছেন এনআরডাব্লিউ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হ্যারবার্ট রয়েল৷
এই পর্যন্ত আল-সালাম গ্রুপের ৩৪ সদস্যকে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ, যাদের সবাই ইরাকি ও সিরীয় বংশোদ্ভুত৷ ‘সংগঠিত অপরাধকে সমূলে' উৎপাটনের উদ্দেশ্যে অভিযান চালানোর কথা বলেছেন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী৷
পুলিশি অভিযান চালানোর আগে থেকেই এই গ্রুপের সদস্যদের অপরাধ ও হুমকি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিল ডয়চে ভেলের একটি টিম৷ ইরাকি বংশোদ্ভুত একজন নারী তাঁদের কাছে দাবি করেছেন, আল-সালাম গ্রুপের সদস্যরা তাঁদেরকে পশ্চিমা পোশাক পরা নিয়ে হুমকি দিয়েছিল৷
গত ১০ মে এমন হুমকির বিষয়টি রাজ্যের প্রধান তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হলেও ‘গোপনীয় বিষয়’ হিসাবে অভিহিত করে এক্ষেত্রে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি তারা৷
‘আলসালাম-জার্মানি’ নামে একটি ফেসবুক পাতা রয়েছে ‘আল-সালাম-৩১৩’ গ্রুপের, যেখানে ২০১৭ সালের মে মাসের পর থেকে আর কোনো পোস্ট দেওয়া হয়নি৷ সেখানে বাইক চালানোর বেশ কিছু ভিডিও রয়েছে৷
ইউটিউবে গ্রুপটির সাত মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও রয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট পোশাক ও সানগ্লাস পরা অবস্থায় দেখা যায় এর সদস্যদের৷ তাতে বিলাসবহুল গাড়ি, মোটরবাইকও প্রদর্শন করেছে আল-সালাম গ্রুপের সদস্যরা৷
ভিডিওতে গ্রুপটির নেতা নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক৷ আমি সালাম ক্রু ৩১৩-এর আবু মেহদি৷’’
সেখানে আল-সালাম গ্রুপের নেতা নিজের নাম আবু মেহদি হিসেবে উল্লেখ করলেও তার নাম মোহাম্মদ বুনিয়া বলে পরবর্তী অনুসন্ধানে উঠে আসে৷
ভিডিওতেই তিনি জানান, ২০১৬ সালে গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে কার্যক্রম থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি৷
‘‘কোনো মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই,’’ বলেন গ্রুপের নেতা৷ এরপর ইউরোপে আসা ইরাকিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘যারা ইউরোপে এসেছে, তাঁদের অবশ্যই কাজ করতে হবে৷’’
এরপর আবু মেহদি বলেন, এই গ্রুপ ‘মানুষকে সাহায্যের জন্য, সমস্যা তৈরির জন্য নয়৷’ একইসঙ্গে হুমকির সুরে তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের কাউকে কাউকে ব্যাপক পিটুনি দেওয়া দরকার, আরব স্টাইলে৷ এবং তোমরা জানো, আমি এর মাধ্যমে কী বুঝাতে চেয়েছি৷’’ কিছুটা সময় নিয়ে আবু মেহদি বলেন, এই গ্রুপ কোনো মাফিয়া দল নয়৷
গ্রুপের নেতার আবু মেহেদি ডাকনামের বিশেষ ধর্মীয় অর্থ রয়েছে৷ শিয়া ধর্মমতে: ইমান ‘মাহদি’ বা ‘মেহেদি’ শেষ বিচারের দিনের আগে পৃথিবীতে আসবেন এবং অশুভকে দূর করবেন৷
আর এই গ্রুপের নামে ৩১৩ সংখ্যার সঙ্গেও ধর্ম বিশ্বাসের মিল রয়েছে৷ শিয়ারা বিশ্বাস করেন, ৩১৩ জন অনুসারী নিয়ে পৃথিবীতে পুনরুত্থান হবে ইমাম মেহেদির৷
এরা কি ইরাকি ‘মাহদি আর্মির’ অনুগামী?
এনআরডাব্লিউ'র অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় বলছে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আল-সালাম-৩১৩ গ্রুপ কেবল সাধারণ অপরাধীদের দল নয়৷ এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও ধর্ম-প্রভাবিত অপরাধের সংশ্লেষ থাকতে পারে৷ এরা ইরাকের ধর্মীয় জঙ্গিদের সাহায্য করছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে৷
আল-সালাম গ্রুপটি ইরাকের শিয়া ধর্মীয় নেতা মুকতাদা আল-সদরের অনুগত ‘মাহদি আর্মির’ সঙ্গে সম্পর্কিত বলেও গুজব রয়েছে৷ এর সদস্যরা এক ধরনের সাদা পরিচয়চিহ্ন পরে থাকেন, যার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় মাহদি আর্মির৷
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, ২০০৩ সালে অ্যামেরিকা ইরাক আক্রমণের পর মাহদি আর্মি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এই সংগঠনের রয়েছে কয়েক হাজার সদস্য৷ ওই হামলায় ইরাকের পুলিশ ও আর্মি ভেঙে যাওয়ার পর শূণ্যস্থান পূরণ করা হয় মাহদি আর্মির সদস্যদের দিয়ে৷ ইরাকে মাহদি আর্মির পাশাপাশি বেশ কিছু মিলিশিয়া বাহিনী এখনো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এখনো৷
এসথার ফেলডেন, মাটিয়াস ফন হাইম/এমবি