1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর্থিক মন্দা ও সিনেমা শিল্প

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৭ অক্টোবর ২০১৯

ভারতের এক মন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে চলচ্চিত্র নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে৷ দেশের আর্থিক মন্দাকে নস্যাৎ করতে তিনি বিপুল টাকার সিনেমা ব্যবসাকে হাতিয়ার করেছেন৷ চলচ্চিত্র শিল্প দেখে কি সত্যিই মন্দার আঁচ পাওয়া সম্ভব?

https://p.dw.com/p/3RRTV
পশ্চিমবঙ্গের অনেক হলে ‘ওয়ার’ ছবির শো হাউসফুল হচ্ছেছবি: DW/P. Samanta

আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বজনীন আর্থিক মন্দার প্রভাব পড়ছে ভারতে৷ এতে দেশের অর্থনীতিতে বড় আঘাত লাগতে পারে৷  যার অর্থ শিল্পের হাল রুগ্ন হবে, বাড়বে বেকারত্ব৷ ইতিমধ্যেই বেকারত্ব আকাশ ছুঁয়েছে৷ গত ৪৫ বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার এখন সবচেয়ে বেশি৷ জিডিপি আশানুরূপ নয়৷ সব শিল্পেই মন্দা দেখা যাচ্ছে৷ যদিও বিজেপি সরকারের মন্ত্রীরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে নেতিবাচক ভাবনাকে আমল দিতে রাজি নন৷ সেই সূত্রেই বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, টেনে এনেছেন সিনেমার প্রসঙ্গ৷ তিনি বলেন, ‘‘২ অক্টোবর তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে৷ এই তিনটি ছবি ১২০ কোটি টাকা আয় করেছে৷ দেশের অর্থনীতি নিশ্চয়ই ভালো অবস্থায় রয়েছে, না হলে এত টাকা উঠত না৷’’

Kartenverkauf Paradise Cinema, Kolkata
কলকাতার একটি সিনেমা হলছবি: DW/P. Samanta

মন্দা সত্ত্বেও উৎসবের মরসুমে সিনেমার ব্যবসায় ভাঁটা পড়েনি, এ কথা ভুল নয়৷ হল কর্তৃপক্ষ, চলচ্চিত্র পরিবেশক ও প্রযোজনা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বক্স অফিসে সুদিনের ছবিই তুলে ধরছে৷ হৃত্বিক রোশন অভিনীত ‘ওয়ার' এখন চলছে ভারতের বিভিন্ন সিনেমা হলে৷ এই ছবিটি গত দু'সপ্তাহে খুব ভালো ব্যবসা করেছে৷ প্রথম সাত দিনে ২০০ কোটি টাকা তুলেছে এই ছবি৷ পশ্চিমবঙ্গের অনেক হলে এই ছবির শো হাউসফুল হচ্ছে৷ এই রাজ্য থেকে সাত দিনে ‘ওয়ার’ ব্যবসা করেছে সাড়ে চার কোটি টাকা৷ শো সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও হলিউডের ছবি ‘জোকার’ ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে বেশ আগ্রহ রয়েছে৷ বাংলা ছবিও একেবারে পিছিয়ে নেই৷ দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবি ‘গুমনামি’, ‘মিতিনমাসি’, ‘সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ’, ‘পাসওয়ার্ড’ দেখতে কমবেশি ভিড় করেছেন দর্শকরা৷ প্রথম সাত দিনে ‘গুমনামি' ২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছে৷ ‘মিতিনমাসি’ দেখার জন্য একই সময়ে এক কোটি ৭৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে৷ হিন্দি ছবির সঙ্গে তুলনীয় না হলেও বাংলা ছবি যথেষ্ট সংখ্যায় দর্শকদের হলে টেনে এনেছে, এ কথা বলাই যায়৷ 

সিনেমা তৈরি বন্ধ হলে বলতে হবে মন্দার প্রভাব পড়েছে: অনিন্দ্য সেনগুপ্ত

কিন্তু বক্স অফিসের এই সাফল্য দেখে কি বোঝা সম্ভব, দেশের আর্থিক হাল কেমন?এ বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র শিক্ষার অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনগুপ্তর বক্তব্য, ‘‘সিনেমা এক ধরনের ভোগ্যপণ্য৷ মন্দার সময়েও তার ব্যবসা থাকবে৷ মন্দার জের এই শিল্পে পড়ল কি না, তা সিনেমা হলের ভিড় দেখে বোঝা সম্ভব নয়৷ সিনেমা তৈরি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তখন বলতে হবে মন্দার প্রভাব পড়েছে৷’’ বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীর মতে, ‘‘আর্থিক মন্দা নিয়ে যতটা হইচই হচ্ছে, ততটা টের পাওয়া যাচ্ছে না এখনো৷ মানুষ বিনোদনের জন্যই সিনেমা দেখতে আসে৷ কয়েক ঘণ্টা সব ভুলে থাকতে চায়৷ কোনো কোনো ছবি থেকে আবার একটা মেসেজ নিয়ে যান দর্শক৷’’

মন্দা তুঙ্গে উঠলে বিনোদনের আয়োজন বেশি করা হয়: হরনাথ চক্রবর্তী

এই দুজনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, আর্থিক দুরবস্থার সঙ্গে সিনেমা হলে ভিড়ের সরাসরি সম্পর্ক নেই৷ যেমন নেই সমৃদ্ধির সঙ্গেও৷ হলিউডই তার প্রমাণ৷ ২০০৯ সালে মন্দার সময় হলিউডে ১৭০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়েছিল৷ টিকিট বিক্রি বেড়েছিল প্রায় ১৮ শতাংশ৷ বিশ্বযুদ্ধ বা পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় বাংলায় হল ফাঁকা যায়নি৷ অর্থনীতির সঙ্গে সিনেমা শিল্পের কোনো সমানুপাতিক সম্পর্ক নেই, রবিশঙ্কর প্রসাদ সেটা বুঝতে পেরে দ্রুত নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷ হরনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মন্ত্রীমশাই শুধু ফিল্মের ব্যবসা কেন দেখছেন, থিমের পুজো থেকে উৎসব ঘিরে যে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষও অংশীদার৷ এমন অনেক ক্ষেত্রেই বিপুল টাকা লেনদেনের উদাহরণ তুলে ধরা যায়৷’’ যন্ত্রণা ভুলতে কি তাহলে মানুষ বিনোদনে ঝুঁকে পড়ে না? অনিন্দ্য সেনগুপ্তর মন্তব্য, ‘‘মন্দা তুঙ্গে উঠলে বিনোদনের আয়োজন বেশি করা হয়৷ হলিউডে সত্যি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা থাকে৷ আবার সত্যিটাও দেখানো হয়৷ আমাদের দেশে মন্দার আঁচ মানুষের গায়ে সেভাবে এখনো লাগেনি৷ তাই জীবনযুদ্ধের যন্ত্রণা ভুলতে মানুষ হলে যাচ্ছে, এটাও এখনই বলা যায় না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য