1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমরা কি নিজেরাই প্রতারিত হতে চাই?

হারুন উর রশীদ স্বপন
৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

এখন বাংলাদেশে আলোচনার তুঙ্গে আছে ই-অরেঞ্জ আর ই-ভ্যালির প্রতারণা৷ দুটিই নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাবি করছে৷ কিন্তু এরই মধ্যে তাদের প্রতারণা স্পষ্ট হয়েছে৷ তারা গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না৷ পণ্যও দিতে পারছে না৷

https://p.dw.com/p/3ztTr
Symbolbild Online Shopping
ছবি: Colourbox

এখন বাংলাদেশে আলোচনার তুঙ্গে আছে ই-অরেঞ্জ আর ই-ভ্যালির প্রতারণা৷ দুটিই নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাবি করছে৷ কিন্তু এরই মধ্যে তাদের প্রতারণা স্পষ্ট হয়েছে৷ তারা গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না৷ পণ্যও দিতে পারছে না৷

এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কথায় আসার আগে একটি পুরনো গল্প শোনাই৷ আমরা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর নামে ডেসটিনির নাম জানি৷ তার মালিক এখন কারাগারে৷ প্রতিষ্ঠান বন্ধ৷ সম্পদ যা আছে, তা আদালতের রিসিভারের হাতে৷ তারা যেটা করেছিল, তা হলো, পণ্য বেচা-কেনার নামে গ্রাহকদের কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল৷ একটি পণ্য কেনা এবং নতুন ক্রেতা জোগাড় করলে লাভের লোভ দেখানো৷ আর সেই লোভ ছিল ভয়াবহ৷ পিরামিড পদ্ধতিতে গ্রাহক জোগাড় করা আর লাভের পর লাভ৷ তখন পণ্যটি আর মূখ্য থাকেনি৷ পণ্যটি প্রয়োজন আছে কিনা তা বিবেচনা করা হয়নি৷ মাথায় ছিল ব্যবসা৷ কিন্তু এটা যে অসীমভাবে চলতে পারে না তা অনেককেই বোঝানো যায়নি৷ অনেকেই তখন মনে করেছেন অন্যরা প্রতারিত হলেও তিনি নিজে ব্যবসা করতে পারবেন৷ শেষকালে দেখা গেছে প্রতারিত মানুষের সংখ্যাই বেশি৷ আর এই লোভকে পুঁজি করেই ডেসটিনি বিনা পুঁজিতে ব্যবসা ফেঁদেছিল৷ তাদের সাথে যুক্ত ছিল, রথীমহারথীরা৷

ই-কমার্সের নামে প্রতারণার কৌশলটি ভিন্ন৷ উৎপাদন খরচের চেয়েও অনেক কম দামে পণ্য বিক্রির অফার৷ আর তাতেই বাজিমাত৷ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়লো৷ শুধু তাই নয়, পণ্য দিতে না পারলে ক্যাশব্যাক৷ আর সেটাও যে টাকা পণ্যের জন্য দেয়া হয়েছে, তারা চেয়ে বেশি৷ কখনো দ্বিগুণ৷ ফলে যা হয়েছে, এখানেও পণ্যের প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক অনেকে ব্যবসার লোভেই ওই সব মন ভোলানো অফারের ফাঁদে পা দিয়েছেন৷ প্রতারিত হয়েছেন৷

ই-কমার্সের নামে যা হয়েছে তা-ও এক ধরনের জুয়া৷ যেমন এমএলমও ছিল পিরামিড জুয়া৷ কোনো একটি অফার যেমন মোটর বাইক প্রায় অর্ধেক দামে যখন অফার দেয়া হয়, ধরুন এক হাজার ক্রেতা সেটার জন্য টাকা দিলেন৷ তিন মাসের মধ্যে ডেলিভারি দেয়া হবে৷ তিন মাসের মধ্যে ১০০ জনকে ঠিকই দেয়া হলো৷ আর সেটার প্রচার শুরু হয়ে গেল৷ যারা পেলেন তারা প্রচার শুরু করলেন৷ প্রতিষ্ঠানও প্রচার করলো৷ আর সেই প্রচারে বাকি ৯০০ জন ডুবে গেলেন৷ তারা যে পেলেন না তা আর তেমন প্রচার পেলো না৷ শুধু তাই নয়, তাদের নতুন আশ্বাস দেয়া শুরু হয় নানা কৌশলে৷ তারা মনে করেন, হোক না আরেকটু দেরি, তাকে কী? অনেক কম দামে তো পাবো৷ এরমধ্যে আরো অফার আসে৷ আরো কিছু লোক পণ্য পান৷ কিন্তু না পাওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ আর প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্রেতার টাকা হুহু করে বাড়তে থাকে৷ তা থেকেই আবার নতুন পণ্য, সামান্য ডেলিভারি৷ এটা একটা চক্রাকার প্রক্রিয়া৷ এই প্রক্রিয়ায় অনেক ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিছু ক্রেতাকে পণ্য বা ক্যাশব্যাক করা হয়৷  বাকি টাকায় প্রতিষ্ঠানের চাকচিক্য বাড়ে৷ খেলাসহ নানা খাতে স্পন্সর করা হয়৷ বড় বড় মানুষ আসেন৷ তারাও টাকার বিনিময়ে প্রচার করেন৷ কিন্তু এটা খুব বেশি দিন চলে না৷ কারণ, উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে সব ক্রেতাকে পণ্য দেয়া সম্ভব নয়৷ যারা উৎপাদন করেন তারাও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বিনা লাভে পণ্য দিতে পারেন না৷ দেনও না৷ তাহলে এই বিশাল গ্যাপ পুরণ হবে কীভাবে? আসলে শেষ পর্যন্ত পুরণ হয় না৷ বিপুল সংখ্যক গ্রাহক প্রতারিত হয়৷ কিছু ক্রেতা লাভবান হন৷ যেমন, এমএলএম ব্যবসায়ও হয়৷

আসলে এটা হলো সাধারণের টাকা নিজেদের পকেটে নিয়ে এক পর্যায়ে কেটে পড়ার প্রতারণার কৌশল৷ এ ধরনের প্রতারাণার আরো কৌশল আছে৷ যেমন এক লাখ টাকায় বছরে আরো এক লাখ ২০ হাজার টাকা মুনাফা দেয়ার কৌশল৷ বছরে টাকা দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়! সেটা কি সাধারণ কোনো ব্যবসায় সম্ভব? সম্ভব নয়৷ কিন্তু এই ধরনের অফারে যেটা হয় তাতে মাসভিত্তিক মুনাফা দেয়া হয়৷ এক লাখ টাকায় মাসে ১০ হাজার টাকা৷ যখন দুই-একজনকে দেয়া হয়, তখন খবর ছড়িয়ে পড়ে৷ টাকায় টাকা৷ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে৷ জমিজমা বিক্রি করেও টাকা দেয়৷ আর ওই প্রতিষ্ঠান  গ্রাহকদের টাকা থেকেই গ্রাহকদের মুনাফা দেয়৷ আসলে তাদের আর কোনো ব্যবসা নাই৷ গ্রাহক বাড়তে থাকে৷ ধাপে ধাপে তারা আসেন৷ বছরের শুরুতেও আসেন শেষেও আসেন৷ আর এক পর্যায়ে হিসাবনিকাশ করেই প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমান টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়৷

Harun Ur Rashid Swapan DW Korrespondent in Dhaka
হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলেছবি: DW

এই যেমন ই-অরেঞ্জ, ই-কমার্সের নামে এক লাখ মানুষের এক হাজার ১০০  কোটি টাকা নিয়ে গেছে নানা অফারের নামে৷ কিন্তু তাদের ব্যাংক হিসেবে পাওয়া গেছে মাত্র তিন কোটি টাকা৷ আর ই-ভ্যালির চলতি সম্পদ আছে ১০৫ কোটি টাকার৷ দায় ৫৪৪ কোটি টাকা৷ এই হিসাব তারা নিজেরাই করে ১৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে৷ তাহলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অফারের নামে নেয়া নগদ টাকা কোথায় গেল?

এর আগে গত জুনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল তাদের সম্পদের পরিমান ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা৷ দায় ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা৷
এরকম আরো অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা এখন প্রকাশ পাচ্ছে৷ কিন্তু সরকার যখন সক্রিয় হয় তখন কিন্তু প্রতারণা পর্ব শেষ হয়ে যায়৷ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন৷ আর যারা এই ফাঁদে পা দেন তারা কেউ না বুঝে আবার কেউ বুঝেই মনে করেন তিনি দাও মারতে পারবেন৷ আসলে প্রতারকরা মানুষের লোভকে টার্গেট করে৷ আমাদের সেটা বুঝতে হবে৷ আর সরকারকেও দায়িত্ব নিতে হবে৷ শুরুতেই ব্যবস্থা নিতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য