আবাসিক এলাকায় সন্ত্রাসীর বসবাস, জনমনে আতঙ্ক
১৩ জুন ২০২১ভারতের পূর্ব প্রান্তের প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ৷ বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা৷ সেখান থেকে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় কলকাতায়৷ খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর তদন্তে উঠে আসে জেএমবি জঙ্গিরা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বাংলায়৷ এবার পশ্চিম সীমান্তের দেশ পাকিস্তানের জঙ্গিরও এ রাজ্যে তৎপর হয়ে উঠছে কিনা এ প্রশ্ন উঠেছে৷
কলকাতার উপকণ্ঠে নতুন নগরী নিউটাউন৷ সেখানকার অভিজাত আবাসন সুখবৃষ্টি৷ বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ রাজ্য পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) অভিযান চালায় আবাসনে৷ পুলিশের দাবি, দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার এই আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে এমন খবর পেয়েছিলেন তারা৷ এসটিএফ দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে গেলে গুলি চালাতে শুরু করে৷ পাল্টা গুলি চালায় এসটিএফ৷ কয়েক মিনিট চলে গুলির লড়াই৷ তাতে মারা যায় পাঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টার জয়পাল সিং ভুল্লার ও যশপ্রীত জসসি৷ এই ঘটনায় শুধু আবাসনের বাসিন্দারা নন৷
ক্ষোভ
নতুনভাবে গড়ে ওঠা রাজারহাট-নিউটাউন উপনগরী বলতেই বোঝায় অসংখ্য বহুতল আবাসন৷ এখনো বহু আবাসন নির্মীয়মান৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষজন নয়া আবাসনে বসবাস শুরু করেন৷ অধিকাংশই একে অপরের অপরিচিত৷ নিউটাউনের ‘এনকাউন্টার’ এবং তাতে দু'জনের মৃত্যু নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ এ ঘটনায় আবাসনের বাসিন্দারা এখন আতঙ্কিত৷
সল্টলেকের এক আবাসনের বাসিন্দা পাপিয়া দাঁ বলেন, ‘‘সত্যি বলতে তো আমাদের কতটা নিরাপত্তা আছে, সেটা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি৷ কাকে আর ভরসা করতে পারবো?’’
ভাড়া ফ্ল্যাটে গ্যাংস্টার
নিউটাউনের অভিজাত আবাসনের অনেক ফ্ল্যাটেই মালিকরা থাকেন না৷ সেই ফ্ল্যাট ভাড়ায় দেওয়া অনেক দিনের রেওয়াজ৷ এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকের মধ্যস্থতা হয়৷ ভুল্লার ও যশপ্রীত এজেন্টের মাধ্যমেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার ওই ফ্ল্যাটের মালিকদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেন৷ তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় নথিপত্র বিনিময় থেকে চুক্তি ও আর্থিক লেনদেন পুরোটাই হয়েছে অনলাইনে৷ তাদের সঙ্গে ভুল্লার বা যশপ্রীতের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি৷ মালিকদের দাবি, ভাড়াটেদের সম্পর্কে খোঁজখবর পুলিশও নিয়েছিল৷ তাই আবাসিকরা প্রশ্ন তুলছেন, এই নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে কীভাবে দুই গ্যাংস্টার অভিজাত আবাসনে ঘাঁটি গাড়লো? অনেকেই মনে করছেন, গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য এই পরিণতি৷ এ বিষয়ে প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত বড় একটা শহরে নিয়মিত বাইরের লোকজন আসে৷ কে মন্দ, কে ভালো, এরকম নজরদারি সম্ভব নয়৷ তাই গোয়েন্দা বিভাগগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে৷ তথ্যের আদানপ্রদানও বাড়াতে হবে৷ বিশেষ করে মেট্রোশহরগুলির মধ্যে৷ তবেই এই ধরনের অপরাধীদের দ্রুত পাকড়াও করা সম্ভব হবে৷”
কলকাতা পুলিশের তথ্যে পাকিস্তান যোগ
দুই গ্যাংস্টার গুলি যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর ফ্ল্যাট থেকে নানা সামগ্রী উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ৷ এর মধ্যে কিছু সামগ্রী রয়েছে যা পাকিস্তানে তৈরি৷ উর্দু ভাষায় লেখা পাকিস্তানের ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে জিনিসপত্রের গায়ে৷ তদন্তকারীদের অনুমান ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রের একটি পাকিস্তানে তৈরি৷ এরই সূত্রে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পাক-জঙ্গিদের যোগসাজশের আশঙ্কার কথা উঠে আসছে৷ কিন্তু গ্যাংস্টারদের সঙ্গে জঙ্গিদের কী সম্পর্ক? পাঞ্জাব পুলিশের প্রধান দিনকর গুপ্তা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অসংখ্য অপরাধমূলক মামলায় অভিযুক্ত ভুল্লার গত কয়েক বছরে মাদক পাচারে হাত পাকিয়েছে৷ পাকিস্তানের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে সে কাজ চালাতো৷ এই নারকো-টেররিজম পাকজঙ্গিদের সঙ্গে ভুল্লারের যোগসূত্র হয়ে উঠেছিল বলে অনুমান তদন্তকারীদের৷ প্রাক্তন ন্যাশানাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) কর্তা দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মাদক কারবারকে ব্যবহার করে টাকা পাচার জঙ্গি নেটওয়ার্কের কৌশল হয়ে উঠেছে৷ এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা খুবই বেপরোয়া হয়৷”