1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার চলচ্চি‌ত্র নিয়ে বিতর্ক এবং অসহিষ্ণুতা

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৬ জানুয়ারি ২০১৯

এবার মনমোহন সিংয়ের বায়োপিককে ঘিরে রাজনীতির আঙিনা উত্তাল৷ আবার বিতর্ক, আবার প্রেক্ষাগৃহ ভাংচুর৷ তবে এবার বজরং দল বা শিবসেনা নয়, ভাংচুরের কালিমা এবার বিরোধী দল কংগ্রেসের গায়ে৷

https://p.dw.com/p/3BcId
Indien Film The Accidental Prime Minister
ছবি: Imago/Zuma/A. Khan

‌ছবির নাম ‘‌দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার'৷ পরিচালনায় বিজয় রত্নাকর গুট্টে৷ মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনুপম খের৷ ছবিটি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বায়োপিক৷ শুরু হয়েছে তুমুল বিক্ষোভ৷ চলছে প্রক্ষাগৃহ ভাঙচুর৷ ভারতে তা নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় জনতা পার্টির ‘‌অসহিষ্ণুতা'‌,  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘‌স্বৈরতন্ত্র'‌ নিয়ে এতদিন যাঁরা সরব হয়েছেন, সেই বিরোধী কংগ্রেস পার্টির কর্মী, সমর্থকরা কেন শিল্পকে শিল্প হিসেবে দেখছেন না?‌

মনমোহন সিংয়ের প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর লেখা বইয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই চলচ্চিত্র৷ কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর চরিত্রে সুজান বার্ণনার্ট, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর চরিত্রে আহানা কুমারা, রাহুল গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুনরা মাথুর এবং লেখকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় খান্না৷

উল্লেখ্য, ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং৷ ওই এক দশকে ভারত সরকারের অলিন্দে অলিন্দে ঘটেছে বহু নাটকীয় ঘটনা৷ একেবারে শুরুতে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ার মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী৷

‘মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই তো ভাংচুর শুরু হয়েছে পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত’

তাঁর প্রস্তাবেই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছিলেন মনমোহন সিং৷ তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা ছিলেন সঞ্জয় বারু৷ তিনিই ‘‌দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাই মিনিস্টার'‌ বইটি লিখেছিলেন৷ বইয়ে মনমোহন, সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, প্রণব মুখার্জি‌সহ বহু মানুষ সম্পর্কে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন৷ এবার সেই বইয়ের প্রেক্ষিতে সিনেমা৷ ছবিতে নেতা-মন্ত্রীদের নামগুলিও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে৷ এই পর্যন্ত ঠিক ছিল৷ কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছবিটির প্রদর্শন রুখতে সক্রিয় হয়েছেন কংগ্রেস সমর্থকরা৷ রীতিমতো দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে, মুখে ‘‌বন্দে মাতরম'‌ শ্লোগান দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ভাংচুর চালাচ্ছেন তাঁরা৷ ফলে নিরাপত্তার কারণে বহু প্রেক্ষাগৃহে বন্ধ রাখতে হয়েছে ছবির প্রদর্শন৷ এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেনন, ‘‌‘‌এতদিন ধরে একটা হাওয়া তৈরি করা হয়েছিল, দেশে কথা বলার অধিকার নেই৷ গণতন্ত্র নেই৷ বিজেপি নাকি অসহিষ্ণু৷ এখন উল্টো ঘটনা ঘটছে৷

অথচ, সিনেমাটি বিজেপি তৈরি করেনি৷ বইটি যিনি লিখেছেন, তিনি কংগ্রেসের কাছের মানুষ৷ তবুও গুন্ডাগিরি চলছে৷ প্রদর্শন বন্ধ করা হচ্ছে৷ শিল্পীর স্বাধীনতা বলেও একটা বিষয় আছে৷ ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই তো ভাংচুর শুরু হয়েছে৷ পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত৷ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ছবি তৈরি হলে বিতর্ক থাকবেই৷''‌ কলকাতার স্টার থিয়েটার, রক্সি, প্রাচী, হিন্দ,মেনকা, অশোকা প্রেক্ষাগৃহে বন্ধ হয়েছে ‘‌দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার'‌-‌এর প্রদর্শন৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য শিল্পী ও শিল্পের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের পক্ষপাতী নন৷ তবে একইসঙ্গে সাধারণ নির্বাচনের আগে এমন একটি সিনেমার মুক্তিকে মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না তিনি৷

নিন্দনীয় ছবি, এতে পরিচালকের নিম্ন মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে'

 

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‌‘‌দলের রাজনৈতিক বা সামাজিক চিন্তাধারা অত্যন্ত স্পষ্ট৷ দলের তরফে কাউকে সিনেমা হলে হামলার নির্দেশ দেয়নি৷ কেউ যদি এমন কাজ করে থাকে তারা নিজেদের দায়িত্বে করেছে৷ সিনেমা নিয়ে কংগ্রেসের মাথাব্যথা নেই৷ মনে রাখতে হবে, সঞ্জয় বারুর বই প্রকাশিত হওয়ার পর সেই বই কেউ পুড়িয়ে দেয়নি৷ ‌ছবিটা নিন্দনীয় ছবি৷ সিনেমাতে পরিচালকের নিম্ন মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে৷''‌

এখন প্রশ্ন হলো, কেমন হয়েছে সিনেমা?‌ মনমোহনের চরিত্রে অনুপম খেরকে বড্ড ভালো মানিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে৷ মনমোহনকে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকরণ করেছেন তিনি৷

তবে‌ সমালোচকদের কেউ কেউ বলছেন, পরিচালক বিজয় রত্নাকর গুট্টে সিনেমায় যে সময়ের উল্লেখ করেছেন, সেখানে একাধিক প্রেক্ষাপট থাকা বাধ্যতামূলক ছিল৷ সেদিক মাড়াননি তিনি৷ ছবিতে আমলাতন্ত্রের রাজনীতি ছোঁয়া হয়নি৷ তাছাড়া কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর মতো পদ অনায়াসে ছেড়ে দিলেন, সে-কথাও বলা হয়নি৷ অথচ ভারতীয় রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ অন্যকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা বিরল৷