1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফ্রিকার রাখালবালকদের জীবনযাত্রা

৪ জুলাই ২০১৮

রাখালবালকের কাজের মধ্যে অনেকে রোমান্টিক জীবনের সুর খুঁজে পেলেও আফ্রিকার দক্ষিণে ক্ষুদ্র দেশ লেসোথোয় তাদের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন৷ কঠিন পরিশ্রম, একাকিত্ব, শিক্ষার অভাবের মতো সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাদের৷

https://p.dw.com/p/30mwZ
Kolumbien Cowboys
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Vergara

শিষ বাজালেই গরুর পাল অনুসরণ করে৷ প্রতিদিন জেরেমানি লেসোথোর মালভূমিতে গরু চড়াতে বেরোয়৷ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ঘাস ও পানির সন্ধান করতে হয়৷ ক'দিন পরেই তার বয়স হবে ১৪৷ অর্ধেক জীবন ধরেই সে রাখাল হিসেবে কাজ করছে৷ জেরেমানি বলে, ‘‘প্রতিদিন আমি পশু চরাতে বেরোই৷ তারা যাতে যথেষ্ট খাদ্য পায়, তা আমাকে নিশ্চিত করতে হয়৷ কাজটা ভালোই লাগে৷ এখানে এটাই বাঁচার একমাত্র উপায়৷''

লেসোথোর মধ্যভাগে সেমনকং নামের ছোট শহরে এক চাষির পরিবারের গরু চরায় জেরেমানি৷ পারিশ্রমিক হিসেবে সে মাথার উপর ছাদ ও বছরের শেষে একটি গরু হাতে পায়৷ তার স্কুলে যাবার সময় নেই৷ বাবা-মার মৃত্যুর পর নিজের দায়িত্ব নিজেকেই সামলাতে হচ্ছে৷

লেসোথোয় স্কুলে যাবার বয়সের প্রতি ৩টি ছেলের মধ্যে একটি সারাদিন রাখাল হিসেবে কাজ করে৷ প্রায়ই তাদের পরিবার ছেড়ে কয়েক মাইল দূরে থাকতে হয়৷ কাজ ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হবার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়৷ বেশিরভাগ ছেলেই নিরক্ষর, বাকি জীবনটাও সেভাবেই থেকে যাবার সম্ভাবনা বেশি৷

জুলিয়াস মাজোরো এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন৷ পরিবারে মা ও দুই বোনের দেখাশোনার জন্য উপার্জনের তাগিদে দ্বিতীয় শ্রেণির পরেই তাঁকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিলো৷ তাঁর মতে, লেসোথোয় এমনটা প্রায়ই ঘটে৷ কিন্তু তিনি এমন জীবনের আশা করেন নি৷ জুলিয়াস বলেন, ‘‘আমি রাখাল হিসেবে কাজ করতে চাইনি৷ কিন্তু পরিস্থিতি ও দারিদ্র্যের চাপে আমার সামনে কোনো বিকল্প ছিল না৷ যে চাষিদের জন্য কাজ করতাম, তারা আমার সঙ্গে কুকুরের চেয়েও খারাপ আচরণ করেছে৷ এমনকি খেতেও দেয় নি৷ ক্রীতদাসের মতো রেখেছিল৷''

জুলিয়াস বুঝেছিলেন, শিক্ষা না থাকলে নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করা কঠিন৷ বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি দুই বোন ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য নিজের উপার্জনের টাকা খরচ করেছেন৷ নিজের শিক্ষা শেষ করার জন্যও তিনি সামান্য সঞ্চয় করেছেন৷ এখন প্রতি সন্ধ্যায় তিনি কিশোর রাখালদের কাছে নিজের জ্ঞান তুলে ধরেন

পশু চরানোর কাজের শেষে তারা জুলিয়াসের ‘রাখাল স্কুল'-এ চলে আসে৷ জেরেমানিও সেখানে যায়৷ তারা পড়া, লেখা ও অংক শেখে৷

স্বাস্থ্যও আরেকটি বিষয়৷ বিশেষ করে এইডস প্রতিরোধ লেসোথোয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ গোটা বিশ্বে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে সে দেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ যথেষ্ট চাঁদা জোগাড় হলে ছাত্রদের একবেলার খাবারও দেওয়া হয়৷ অনেকের কাছে সেটাই দিনের একমাত্র খাবার৷ পরস্পরের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগও এই সমাবেশের অন্যতম লক্ষ্য৷ জুলিয়াস মাজোরো বলেন, ‘‘কাজটা একাকিত্বে ভরা৷ পশুদের দেখাশোনা করতে হয়৷ অন্যদের সঙ্গে কথা বলার উপায় নেই৷ এই রাখালদের স্কুলেই সেটা সম্ভব হয়৷ এখানেই তারা সামাজিক স্তরে মেলামেশার শিক্ষা পায়৷''

রাখালরা অনেক দূর থেকে আসে৷ জেরেমানি প্রতি সন্ধ্যায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে এখানে আসে৷ জেরেমানি বলে, ‘‘ভালো করে লিখতে-পড়তে শিখে আমিও শেখাতে চাই৷ যা পারি দিতে চাই৷''

কিন্তু জেরেমানির সামনে এখনো দীর্ঘ পথ বাকি৷ বাকি রাখালদের মতো তাকেও পরের দিন সকালে পাহাড়ে কাজে ফিরতে হবে৷

ইওয়ানা ইয়েশকে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য