আফ্রিকার বৃহত্তম অভয়ারণ্যের বিপদ ঘনাচ্ছে
তানজানিয়ার সেলু গেম রিজার্ভ গত ৩৫ বছর ধরে ইউনেস্কোর ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে৷ তানজানিয়া সরকার সেখানে একটি ইউরেনিয়ামের খনি ও একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা করছেন – পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা সন্ত্রস্ত৷
আদিম প্রকৃতি
সেলু গেম রিজার্ভ আফ্রিকার বৃহত্তম অভয়ারণ্য, অর্থাৎ পশুপাখিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা৷ দক্ষিণ-পূর্ব তানজানিয়ার ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার তৃণভূমি ও বনপ্রান্তর জুড়ে এই গেম রিজার্ভ৷ হাতি থেকে শুরু করে জলহস্তি, জিরাফ, সিংহ বা চিতাবাঘ কিংবা হরিণ, সব ধরনের জীবজন্তু, এখানে পাওয়া যায় – এছাড়া ৪০০ প্রজাতির পাখি৷
জার্মান ঔপনিবেশিক ইতিহাসে যার উৎস
জার্মান ঔপনিবেশিক শক্তি ১৮৯৬ সালে এই সংরক্ষিত এলাকা প্রতিষ্ঠা করে৷ ব্রিটেনের হাতে যাবার পর গেম রিজার্ভটির আয়তন বাড়ানো হয় ও ফ্রেডেরিক সেলু নামের এক ব্রিটিশ অফিসার ও শিকারির নামে তার নামকরণ করা হয়৷ সেলু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ হারান; তাঁর সমাধি এই গেম রিজার্ভেই৷ ইউনেস্কো ১৯৮২ সালে সেলু গেম রিজার্ভকে বিশ্ব প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করে৷
সেই উত্তরাধিকার আজ বিপন্ন
ইউনেস্কো ও অপরাপর প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠনের তা-ই অভিমত – যে কারণে বিপন্ন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলির ‘রেড লিস্টে’ গত তিন বছর ধরে সেলু গেম রিজার্ভের নাম রয়েছে এবং আপাতত সেখানেই থাকবে, বলে ইউনেস্কো সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
সংরক্ষিত এলাকার মাঝখানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প?
সেলু গেম রিজার্ভের ভিতর দিয়ে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার যাবার পর রুফিজি নদী দার-এস-সালামের কাছে ভারত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে৷ রুফিজি নদীতে বাঁধ দেবার পরিকল্পনা বেশ কয়েক দশক ধরেই আছে; তানজানিয়ায় বিদ্যুৎ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট মাফুগুলি এবার ঘোষণা করেছেন যে, ‘‘যত শীঘ্র সম্ভব’’ সেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে৷
বার্লিনের চেয়ে বড় একটি এলাকা পানিতে ডুবে যাবে
ডাব্লিউডাব্লিউএফ পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠনের মতে ঐ বাঁধ প্রকল্প ‘‘প্রকৃতির গুরুতর হানি ঘটাবে’’৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী রুফিজি নদীর তথাকথিত ‘স্টিগলার ক্যানিয়ন’ গিরিখাতে ১৩০ মিটার উঁচু ও ৭০০ মিটার চওড়া একটি বাঁধ দেওয়া হবে, যার ফলে এক হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি আয়তনের একটি হ্রদ সৃষ্টি হবে৷ অর্থাৎ বার্লিনের চেয়ে বড় একটি এলাকা পানিতে ডুবে যাবে৷
‘‘প্রকৃতির ক্রোড়ে শিল্পায়ন’’
বাঁধপ্রকল্পের জন্য রাস্তাঘাট, কারখানা ও মালগুদাম, মজদুরদের বস্তি ইত্যাদি বানাতে হবে সেলু গেম রিজার্ভের ঠিক মাঝখানে৷ এর ফলে আদিম বনভূমি ও বহু বিপন্ন প্রজাতির বাসস্থান বিনষ্ট হবে, বলে ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর আশঙ্কা৷ জার্মান সরকারও এ ব্যাপারে চিন্তিত৷
জার্মানির তরফ থেকে এক কোটি আশি লাখ ইউরো
মাগুফুলি সেলু গেম রিজার্ভে বাঁধ নির্মাণের অভিপ্রায় ঘোষণা করার পরদিনই তানজানিয়া সরকার ও জার্মান রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ‘‘সেলু সংরক্ষণ ও বিকাশ কর্মসূচি’’ বা ‘সেকাড’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ জার্মান সরকার এই কর্মসূচিতে ১ কোটি ৮০ লক্ষ ইউরো প্রদান করছেন৷
সেলু গেম রিজার্ভে ইউরেনিয়ামের খনি?
তানজানিয়া সরকার ইতিমধ্যেই একাধিক কোম্পানিকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সন্ধানের অধিকার দিয়েছেন – সেই সঙ্গে সেলু গেম রিজার্ভের দক্ষিণ প্রান্তে একটি ইউরেনিয়ামের খনির কাজ শুরু হতে চলেছে, বলে প্রকাশ৷ রুফিজি নদীর অববাহিকার উপরিভাগে পাথর ভেঙে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ইউরেনিয়াম বার করা হবে৷ এর ফলে সেলু গেম রিজার্ভের মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হবে, বলে ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর আশঙ্কা৷