আফ্রিকার দেশটি কি চীনা হয়ে উঠছে?
জাম্বিয়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেড়েই চলেছে চীনা প্রভাব৷ বিশাল অংকের বিনিয়োগ দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের ছাপ রেখে চলেছে৷ শুরুতে খুশি হলেও এখন সাধারণ জাম্বিয়ানরাও এই প্রক্রিয়াকে ভালো দৃষ্টিতে দেখছেন না৷
মৈত্রী রেলওয়ে
১৯৭৬ সালে শেষ হয় তাঞ্জানিয়া-জাম্বিয়া রেলওয়ে (টাজারা) প্রকল্প৷ তখন এটিই ছিল বৈদেশিক সাহায্যে চীনের সবচেয়ে বড় প্যাকেজ৷ আফ্রিকা মহাদেশের নব্য স্বাধীন হওয়া দেশগুলোর প্রতি চীনের সহযোগিতার এক দৃষ্টান্তও ছিল সেটি৷ চীনের প্রায় ৫০ হাজার প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এই প্রকল্পের কাজে জড়িত ছিলেন৷
নতুন যুগ, বন্ধুত্বের প্রতীক
জাম্বিয়া সম্প্রতি চীনা সহায়তায় এক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ ৩২১ কিলোমিটার দীর্ঘ লুসাকা-এন্ডোলা ডুয়াল ক্যারেজওয়ে নির্মাণ করছে চায়না জিয়াংসি করপোরেশন৷ চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নেয়া হয়েছে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ প্রেসিডেন্ট আডগার লুঙ্গু প্রকল্পটিকে বর্ণনা করেছেন ‘চীন-জাম্বিয়া বন্ধুত্বের এক নতুন দিগন্ত’ হিসেবে৷
‘হাতি পালার’ প্রকল্প
বিপুল অর্থ ব্যয়ে রাজধানী লুসাকায় অবস্থিত কেনেথ কাউন্ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে জাম্বিয়া সরকার৷ এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এই অর্থও দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক, বাস্তবায়ন করছে জিয়াংসি করপোরেশন৷ অনেক জাম্বিয়ানই এই প্রকল্পকে অপ্রয়োজনীয় ‘হাতি পোষার’ সঙ্গে তুলনা করছেন৷
মুদ্রা বিনিময়
ব্যাংক অব চায়না পুরো জাম্বিয়া জুড়ে শাখা চালু করেছে৷ ২০১১ সাল থেকে সরাসরি জাম্বিয়ার মুদ্রা কোয়াচা ও চীনের মুদ্রা ইউয়ান বিনিময়ের মাধ্যমে সাহায্য করা হয় দেশটিতে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক বিভিন্ন চীনে প্রতিষ্ঠানকে৷ তবে স্থানীয় জাম্বিয়ানদের এ ব্যাংক কোনো সহায়তা করে কি না, তা স্পষ্ট নয়৷
তামার খনি
তামা জাম্বিয়ার একটি অন্যতম খনিজ সম্পদ এবং প্রধান রপ্তানি পণ্য৷ দীর্ঘদিন ধরেই চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসায় অর্থলগ্নি করে এসেছে৷ কিন্তু সুইজারল্যান্ডের গ্লেনকোর, ক্যানাডার ফার্স্ট কুয়ান্টাম মিনারেলস এবং বারিক, ভারতের ভেদান্ত এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে৷ সবাইকে পেছনে ফেলতে মরিয়া চীন এবার খনিতেও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে৷ চাম্বিশি খনিতে সম্প্রতি বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
অবৈধ মালিকানা
জাম্বিয়ায় শুধু পাইকারি ব্যবসাতেই বিদেশিদের অনুমতি রয়েছে৷ কিন্তু ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানী লুসাকার অনেক খুচরা বিক্রির দোকানের আসল মালিকই চীনা নাগরিক৷ স্থানীয় কোনো ব্যক্তির নামে দোকান নেয়া হলেও মূল বিনিয়োগকারী সেই চীনে নাগরিকের হাতেই মাস শেষে যায় বড় অঙ্কের অর্থ৷
স্থানীয় কর্মসংস্থানে হুমকি
লুসাকার শহরতলীর বাজারে মুরগি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ট্রাকগুলোর মালিকও চীনা বিনিয়োগকারীরা৷ ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কাজও চীনাদের হাতে চলে যাওয়ায়, তাঁদের জীবিকা পড়েছে হুমকির মুখে৷ জাম্বিয়া সরকার অবশ্য এসব কাজে চীনাদের জড়িত থাকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে৷