1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজসেনেগাল

আফ্রিকার অভিন্ন মুদ্রার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সেনেগালের শিল্পী

২২ ডিসেম্বর ২০২২

কোনো শিল্পী কি রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক বাস্তব বদলে দিতে পারেন? সেনেগালের এক শিল্পী আফ্রিকার একাংশের জন্য অভিন্ন মুদ্রা ও বিশ্ববাসীর জন্য অবাধ ভ্রমণের স্বপ্নকে বাস্তব করে তোলার লক্ষ্যে অভিনব উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/4LKda
মনসুর সিস আফ্রিকার একাংশের জন্য অভিন্ন মুদ্রা ও সেখানে অবাধ ভ্রমণের স্বপ্ন বাস্তব করার চেষ্টা করছেন
মনসুর সিস আফ্রিকার একাংশের জন্য অভিন্ন মুদ্রা ও সেখানে অবাধ ভ্রমণের স্বপ্ন বাস্তব করার চেষ্টা করছেনছবি: DW

আফ্রিকাকে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার থেকে মুক্ত করাই মনসুর সিসের স্বপ্ন৷ নিজের সৃষ্টি করা মুদ্রা ‘আফ্রো'-র সাহায্যে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চান তিনি৷ সেনেগালের শিল্পী সিস সেই প্রকল্পের মাধ্যমে আফ্রিকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিজের ইউটোপিয়ান দাবি তুলে ধরছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আফ্রো আসলে আফ্রিকার এক শৈল্পিক মুদ্রা৷ আফ্রিকার যে ১৪টি দেশ ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিলো, সেগুলির জন্যই এই মুদ্রার কথা ভাবা হয়েছে৷ আজও সেখানে ফ্রান্সে তৈরি মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে৷ সেই মুদ্রার নাম ‘আফ্রিকায় ফরাসি কলোনিগুলির কারেন্সি'৷ আমি সেটা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম৷ আফ্রোই হলো ভবিষ্যৎ৷''

২০ বছর ধরে মনসুর আফ্রো প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন৷ কত যে নোট ছেপেছেন, সেটা আর তাঁর মনে নেই৷ প্রত্যেকটি আফ্রোর নোট শিল্পের নিদর্শন৷ একই সঙ্গে তিনি নিজের মুদ্রার মাধ্যমে শিল্পের সীমানাও ভেঙে দিতে চান৷ মাল্টিমিডিয়া শিল্পী হিসেবে মনসুর সিস জানান, ‘‘দাকার শহর জুড়ে আমরা এক্সচেঞ্জ কাউন্টার খুলেছি৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল সাড়া পাচ্ছি৷ মানুষ এটিকে সত্যি প্রচলিত মুদ্রা ভাবায় বরং আমাদের প্রায় একটা সমস্যা হতে যাচ্ছিল৷ কিন্তু স্বীকৃত রাজনীতিকদের কাঁধেই অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্ব রয়েছে৷ আমার টাকাও ডলারের মতো কাগজ দিয়ে তৈরি৷ আফ্রো কাগজ দিয়ে তৈরি, তবে এখনো স্বীকৃতি পায় নি৷''

১৯৯৩ সালে মনসুর সিস যখন দাকার থেকে জার্মানির রাজধানীতে বাস করতে এসেছিলেন, সে সময়ে তিনি পরিচয় ও ঐতিহ্যের মতো বিষয় নিয়ে চর্চা করছিলেন৷ তাতে হাস্যরসের ছোঁয়াও ছিল৷ বার্লিন শুধু তাঁর কাজকে আরও জোরালো ও রাজনৈতিক করে তুলেছিল৷

সেনেগালের এক স্বপ্নচারী শিল্পী মনসুর সিস

১৮৮৪ ও ১৮৮৫ সালে সেখানে তথাকথিত ‘বার্লিন কনফারেন্স' অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সেখানে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি নিজেদের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের বিভাজন স্থির করেছিল৷ বলা বাহুল্য, আফ্রিকানদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি৷ মনসুর বলেন, ‘‘এটা সত্যি অকল্পনীয়৷ বার্লিনের কঙ্গো কনফারেন্স আমাদের পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বের চর্চা করতে এক ধরনের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা জুগিয়েছিল৷ আমরা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে বাস করতে পারি, কীভাবে এই উপনিবেশবাদ থেকে নিজেদের মুক্তি দিতে পারি?''

২০০০ সালে মনসুর আরও দুই শিল্পীর সঙ্গে মিলে ‘ল্যাবোরেটরি অফ ডিবার্লিনিফিকেশন' প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেই থিংক ট্যাংক থেকে শুধু অভিন্ন মুদ্রা ‘আফ্রো' নয়, ‘গ্লোবাল পাসপোর্ট' নামের এক আইডিয়াও উঠে এসেছে৷ সেই পাসপোর্টের সাহায্যে সব মানুষের জন্য মুক্ত ও অবাধ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে৷ এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে মনসুর সিস বলেন, ‘‘আইভরি কোস্ট বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোকো উৎপাদনকারী দেশ৷ সব জায়গায় কোকো রপ্তানি করা হয়৷ গোটা বিশ্বে চকোলেট পাওয়া যায়, অথচ কোকো চাষির ভ্রমণের অধিকার নেই৷ এমনটা কেন হবে? আমার গ্লোবাল পাসপোর্ট ছোট চাষিদের বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে৷''

নিজের শিল্পের সাহায্যে মনসুর সিস অন্যায় তুলে ধরতে এবং মুক্ত ও স্বাধীনচেতা আফ্রিকার স্বপ্ন আরও জোরদার করতে চান৷ আজ সেটা ইউটোপিয়া বা স্বপ্নলোক মনে হলেও কোনো এক সময়ে বাস্তব হয়ে উঠবে বলে তাঁর মনে আশা রয়েছে৷

ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি