আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট চরম রূপ নিচ্ছে৷ বেকারত্ব বাড়ছে, বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম৷ চাকরি হারানো অনেকের পেশা এখন ভিক্ষা৷ ডাব্লিউএফপি, আইএমএফ, ইইউ শঙ্কিত৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট
গত আগস্টে কাবুলের দখল নেয় তালেবান৷ তারপর মোটামুটি সারা দেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও অর্থনীতি দ্রুত চরম বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে৷ আন্তর্জাদিক দাতা সংস্থাগুলো আফগানিস্তান ছেড়েছে৷ বিদেশি সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর থেকে দৃশ্যত বিদেশের কোনো অর্থনৈতিক সহায়তাও পাচ্ছে না তালেবানের আফগানিস্তান৷ প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের নাগরিক সেবা সংশ্লিষ্ট খরচের তিন চতুর্থাংশই বিদেশি সহায়তা নির্ভর৷
ব্যাংকে টাকার অভাব
আশরাফ গনি সরকারের রেখে যাওয়া ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সম পরিমান অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে আছে৷ তালেবান সরকার তা তুলতে পারছে না৷ অন্যদিকে সরকার নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অনেকে নিজের জমানো টাকাও প্রয়োজনমতো তুলতে পারছেন না৷ ওপরের ছবিতে এক ব্যাংকের সামনে টাকা তুলতে আসা মানুষদের দীর্ঘ লাইন৷
বেকারত্ব এবং বেতন-সমস্যা
গনি সরকারের আমলের অনেক সরকারি-বেসরকারি কর্মচারি তালেবান আমলে চাকরি হারিয়েছেন৷ এ কারণে আগে থেকেই ধুঁকতে থাকা আফগানিস্তানে বেকারত্ব আরো বেড়েছে৷ তাছাড়া কর্মরতদের অনেকেই বেতন নিয়মিত পাচ্ছেন না বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন৷ ছবিতে বেকারত্ব ও নারীদের ওপর আরোপিত নানা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে আফগানদের বিক্ষোভ মিছিল৷
খাদ্যের জন্য আসবাব বিক্রি, ভিক্ষা
খাদ্যপণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে আফগানিস্তানে৷ দাম বাড়ছে হু হু করে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, খাবার কেনার টাকা জোগাড় করতে তারা এখন ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করছেন৷ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আজমল (ছদ্মনাম) জানান, তিনি এমন কয়েকজন সাবেক চাকুরিজীবীকে চেনেন, যারা ‘‘এখন বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করছেন, কিংবা দিনমজুরের কাজ করছেন৷’’
দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
খরা এবং করোনা মহামারির মাঝে আফগানিস্তান এখন এমন এক অবস্থায় যে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, সেখানে চরম মানবিক সংকট অত্যাসন্ন৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)-র আফগানিস্তান শাখার প্রধান মেরি-এলেন ম্যাকগ্রোয়ার্টি মনে করেন, আফগানিস্তানের অন্তত ৮৭ লাখ মানুষ এ মুহূর্তে ‘‘অনাহার থেকে এক পা দূরে৷’’ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আফগানিস্তানে অচিরেই ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে৷
আইএমএফ-এর হুঁশিয়ারি
এদিকে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে শরণার্থী সংকট চরম রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)৷ সংস্থাটি বলেছে, আফগানিস্তানের অর্থনীতি এ বছর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হতে পারে। এর প্রভাবে লাখ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যকে বরণ করে নিতে বাধ্য হবে৷ এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতেও নানাভাবে পড়বে বলে মনে করে আইএমএফ৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশঙ্কা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি নির্ধারণ কমিটির প্রধান ইয়োসেপ বোরেল-ও আফগানিস্তান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ গত অক্টোবরে এক ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর এক মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান৷ সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় চরম রূপ নিচ্ছে৷ এ পরিস্থিতি আফগানদের এবং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে৷’’