1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্পের আফগান খনিজ সম্পদের লোভ?

৩০ আগস্ট ২০১৭

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রাক-নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ভেঙে মার্কিন সৈন্যদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আফগানিস্তানে রাখতে চলেছেন৷ সেটা কি আফগান খনিজ সম্পদের লোভে? 

https://p.dw.com/p/2j4xj
Afghanistan US-Marines in Helmand
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar

ট্রাম্প গত সপ্তাহে তাঁর বহুল প্রত্যাশিত আফগানিস্তান নীতি ঘোষণা করার সময় বলেন যে, তিনি শুধুমাত্র তাঁর ‘সহজাত প্রেরণার' উপর নির্ভর করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যদের পুরোপুরি অপসারণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এই সিদ্ধান্তের মুখ্য কারণ হিসেবে তিনি আফগানিস্তানে ইসলামপন্থি সন্ত্রাসের কথা বলেন৷ কিন্তু কাহিনির সেখানেই সমাপ্তি নয়৷

নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, ট্রাম্প আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ নিয়ে কথা বলেন ও গনি ‘‘তাঁদের প্রথম পর্যায়ের একটি আলাপচারিতায় খনিশিল্পকে অর্থনৈতিক সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেন৷''

‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেশটিতে উত্তরোত্তর লিপ্ত থাকার পক্ষে এটা একটা যুক্তি হতে পারে'', এনওয়াইটি গত মাসে জানিয়েছিল৷ পত্রিকাটি লিখেছে, ‘‘(জুলাই মাসে) যখন আফগানিস্তান নীতিকে কেন্দ্র করে হোয়াইট হাউসে ক্রমেই আরো বেশি বিভাজনপূর্ণ বিতর্কের অবতারণা ঘটছে, তখন ট্রাম্পের তিনজন উচ্চপদস্থ সহকারী যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক শিল্পের মাইকেল এন. সিলভার নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে মিলিত হয়ে আফগানিস্তানে রেয়ার আর্থ আকরিক খননের সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন৷ মিস্টার সিলভারের কোম্পানি ‘অ্যামেরিকান এলিমেন্টস' বিশেষ করে এই রেয়ার আর্থ আকরিকের ব্যবসা করে থাকে, যা বিভিন্ন হাই-টেক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়৷''

স্বভাবতই আফগানিস্তানের অব্যবহৃত খনিজ সম্পদ খনন করা হলে, দেশটি স্বয়ং তা থেকে উপকৃত হবে৷ অপরদিকে ট্রাম্প এই অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে আফগানিস্তান যুদ্ধের প্রভূত খরচ অংশত পুষিয়ে নিতে পারবেন৷

আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের মূল্য এক থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলার বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান৷ দেশটিতে বিপুল পরিমাণ তামা, লোহা, ক্রোমাইট, পারদ, দস্তা, মূল্যবান রত্ন ও সেই সঙ্গে সোনা ও রুপা আছে – আরো বড় কথা, আফগানিস্তানে লিথিয়াম ও বিভিন্ন রেয়ার আর্থ এলিমেন্টের ডিপোজিট আছে, যা ব্যাটারি তৈরিতে কাজে লাগে৷

আফগান অর্থনীতির জন্য সুখবর

গত সপ্তাহে আফগান প্রেসিডেন্ট গনি একটি ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আফগানিস্তান নীতিকে স্বাগত জানানোর সময় বিশেষ করে মার্কিন-আফগান অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন৷ ‘‘আমাদের এই দীর্ঘ ১৪ বছরের আফগান সংঘাতের অবসান ঘটানো উচিত, যাতে আগামী প্রজন্মেরা দেশের সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে'', বলেন গনি৷

গনি উল্লেখ করেন যে, আফগানিস্তানের সবচেয়ে সমস্যাকর এলাকাগুলি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ; তাঁর সরকার ভবিষ্যতে খনিশিল্পের দিকে আরো বেশি নজর দেবেন৷

খনিজ সম্পদ উদ্ধার সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে কোনো যৌথ পরিকল্পনা করা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে খনি ও খনিজ তেল মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মির আহমদ জাওয়িদ সাদাত ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, সে বিষয়ে কোনো সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি৷ আফগান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বলে সাদাত জানান৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, খনিশিল্প থেকে আফগান-মার্কিন দু'পক্ষেরই লাভবান হওয়া প্রয়োজন; ট্রাম্প যদি আফগান খনিশিল্পকে ‘যুদ্ধের মুনাফা' হিসেবে গণ্য করেন ও এ বিষয়ে তাঁর নীতি স্বচ্ছ না হয়, তাহলে আফগানিস্তানে সহিংসতা ও মার্কিন সৈন্যদের উপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে, বলে তাদের ধারণা৷ 

জিহাদিরাও ভাগ চায়

২০০৭ সালে মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে ঘোষণা করে যে, আফগানিস্তানে অতুলনীয় খনিজ সম্পদ আছে৷ কিন্তু দুর্নীতিতে ডুবে থাকা খনিশিল্প তালিবানের অর্থসংগ্রহের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস – খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাগুলিতে সহিংসতার একটা কারণই হলো তাই৷ দৃশ্যত আফগান সীমান্তে সরকারি চেকপয়েন্ট দিয়ে খোলাখুলি ভাবে আকর পাচার হয়ে থাকে৷

অপরদিকে মার্কিন সংস্থারা আফগানিস্তানে মাইনিং কন্ট্র্যাক্ট পেতে শুরু করলে, তালিবান নিজেদের প্রচারণার কাজে তা ব্যবহার করবে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ এছাড়া তারা তাদের অর্থসংগ্রহের এমন একটি উৎস বিনাযুদ্ধে ছেড়ে দেবে না৷ তালিবান ও ইসলামিক স্টেট ছাড়া আফগান গোষ্ঠীপতিরাও এই খনিজ সম্পদে তাদের ভাগ চাইবেন, বলে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়েছেন৷ কয়েক হাজার বাড়তি মার্কিন সৈন্য পাঠিয়ে খনিশিল্পে কোনো ব্যাপক পরিবর্তন আনা যাবে, বলে তারা মনে করেন না – যদিও খনিশিল্প থেকে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি ঘটার আশা আছে৷

ওয়াসলাত হজরত-নাজিমি/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য