আফগানিস্তানে একবেলা খাওয়াও যাদের জন্য পরম সৌভাগ্য
শীতে পরিবারের সবাই খাবে কী, চুলা জ্বলবে কিভাবে- এসব ভেবেই দিন কাটে কুবরার৷ নাজিব আলী, মাসুমা, ইয়াসিন মোসাউইদেরও একই দুশ্চিন্তা৷তারা সবাই যেন ক্ষুধার রাজ্যের বাসিন্দা৷বিস্তারিত ছবিঘরে...
৫৫ ভাগ মানুষ অনাহারে
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষ এখন চরম খাদ্যসংকটে৷ দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৫ ভাগ মানুষের অনেকের জন্যই দিনে একবেলা খাওয়াও কঠিন ব্যাপার৷ শীত বাড়লে আফগানিস্তানের অন্তত নয় লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়বে বলেও মনে করে জাতিসংঘ৷
কুবরার দুর্ভাবনাময় জীবন
বিধবা কুবরার বাড়ি আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে৷ এক রুমের বাড়ি তার৷ সেখানেই আট সদস্যকে থাকেন৷ ৫৭ বছর বয়সি কুবরা বলেন,‘‘আমরা গত বসন্তে দুই বস্তা ময়দা কিনেছিলাম৷ তা শেষ হয়ে গেলে আল্লাহ জানেন কী খেয়ে বাঁচবো!’’
সামনে ত্রিমুখী সংকট
ময়দা শেষ হতে বেশি বাকি নেই৷ এদিকে চুলা জ্বালানোর কাঠও শেষের পথে৷ শীত আরো বাড়লে পরিবারের সবাইকে কী খাওয়াবেন, চুলা জ্বলবে কী করে, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচারই বা উপায় কী! বরফ পড়লে ঘরটাও যেন জমে যায় ঠান্ডায়৷ দেয়ালে ময়দার খালি বস্তা ঝুলিয়ে দিয়েছেন কুবরা, তাতে যদি শীতের আঁচড় গায়ে একটু কম লাগে!
শীতে কাজ নেই, কাঠও নেই
গত বসন্তে কুবরার পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা খামারে কাজ করেছে৷ বামিয়ান প্রদেশের বেশিরভাগ মানুষের হাতেই নগদ টাকা নেই৷ তাই কাজের বিনিময়ে আলু পেয়েছিলেন তারা৷আলুর বিনিময়ে ময়দা এসেছিল ঘরে৷ তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেয়ার সময় যুদ্ধ এড়াতে সপরিবারে এলাকা ছেড়েছিলেন কুবরা৷ চুলা জ্বালানোর কাঠ চুরি হয়ে যায় তখন৷শীতে জ্বালানি কাঠ পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷
নাজিব আলীও সংকটে
ফলবিক্রেতা নাজীবের দোকানে বিক্রিবাট্টা প্রায় বন্ধ৷ দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া৷ মানুষের হাতে টাকা নেই, ফল কিনবে কী করে! ওপরের ছবিতে বানিয়ান প্রদেশের একটি দোকান৷
তার পরিবারে একবেলা খাওয়াও সৌভাগ্যের!
মাসুমার বাড়ি বামিয়ানের পাশের প্রদেশ ময়দান ওয়ারদাকে৷ চার সন্তানের মুখে আহার তুলে দেয়া মাসুমার জন্যও বড় এক চ্যালেঞ্জ৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ২৬ বছর বয়সি এই নারী বলেন, ‘‘অনেক রকমের খাবার কখনোই আমরা খেতে পারি না৷ তারপরও অতীতটা ভালোই ছিল৷বাড়িতে চাল থাকতো, রান্নার তেল থাকতো৷তখন দিনে একবেলা অন্তত রান্না হতো৷ এখন তো সপ্তাহে একবার রান্না করি৷ কোনো কোনো দিন খাওয়ার মতো রুটিই থাকে না ঘরে৷’’
পর্যটক না থাকায় সংকট চরমে
বামিয়ান প্রদেশ এক সময় বৌদ্ধ মন্দির এবং বৌদ্ধ মূর্তির জন্য বিখ্যাত ছিল৷২০ বছর আগে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে বিশাল দুটি বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সমর্থনপুষ্ট গনি সরকারের আমলে তবু বানিয়ানে কিছু পর্যটক আসতেন৷ সেই সুবাদে সামান্য আয়-রোজগার হতো স্থানীয়দের৷ এখন তা-ও পুরোপুরি বন্ধ৷
সংকট সম্পর্কে তালেবানের ব্যাখ্যা
তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ দুই দশকের তালেবানবিরোধী সরকারের অব্যবস্থাপনা৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ‘ব্লক’ করে রাখা ৯০ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্যোগ নিলে এ সংকট অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করে তালেবান৷
শর্তের চাপে তালেবান
বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের বিদেশি সাহায্যনির্ভর অর্থনীতির সংকট ধীরে ধীরে কাটবে তালেবান সরকার বিদেশি সহায়তা পেলে৷কিন্তু তালেবান অংশগ্রহণমূলক সরকার গড়ে সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করলে এবং মেয়েদের কাজ ও লেখাপড়ার ওপর থেকে সব বিধিনিষেধ তুলে নিলেই কেবল সহায়তার হাত বাড়াতে চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷