1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আপিলেও নিজামীর ফাঁসি

সমীর কুমার দে, ঢাকা৬ জানুয়ারি ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত৷ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চ উল্লাস প্রকাশ করলেও, বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী হরতাল ডেকেছে জামাত৷

https://p.dw.com/p/1HZC2
Bangladesh Matiur Rahman Nizami
ছবি: picture alliance/AP Photo

[No title]

বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের একটি বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে৷ রায়ের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল-মালুম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আল-বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন নিজামী৷ সে সময় সারা দেশে যে হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন চলেছিল তার দায় তিনি এড়াতে পারেন না৷ এ সমস্ত বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ আদালত তিনটি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছে৷ এছাড়া অন্য দু'টি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷''

মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আল-বদর বাহিনীর প্রধান নিজামীকে ২০১৪ সালের ২৯শে অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়৷ এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যাসহ চারটি অভিযোগে (২, ৪, ৬ এবং ১৬) নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ এছাড়া হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতা করার চারটি অভিযোগে (১, ৩, ৭ এবং ৮) তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ তবে বাকি আটটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সেগুলো থেকে তাকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল৷

নিজামীর করা আপিলে পাঁচটি অভিযোগে (২, ৬, ৭, ৮ এবং ১৬) সাজা বহাল রেখেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত৷ এর মধ্যে ২, ৬ এবং ১৬ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷ তবে আপিলে অন্য তিনটি অভিযোগ (১, ৩ ও ৪) থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়৷

নিজামীর আপিলের রায়টি জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পঞ্চম রায়৷ অপর চারটি রায় হয়েছে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, দুই সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে৷ এদের মধ্যে রায়ে ফাঁসি বহাল থাকায় মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকর হয়েছে৷ সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় ৩১শে ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯শে জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর ঐ বছরেরই ২রা আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷

এদিকে রায়ের পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে একাত্তরের সব যুদ্ধাপরাধী এবং ফেরত পাঠানো ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ‘লড়াই' অব্যাহত রাখার শপথ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ৷ শপথটি পড়ান নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান৷ শপথে বলা হয়, ‘আমরা শপথ করছি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি – রাজাকার, আল-বদর, জামায়াতে ইসলামীসহ যারা অপরাধ করেছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এবং ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, দুই লাখ মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে, আমাদের সম্পদ লুট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে – সেই পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচার করতে না পারব; ততদিন পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে৷'

অন্যদিকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে একের পর এক শীর্ষ নেতার সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হওয়ায় বৃহম্পতিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷ রায়ের ঘণ্টাখানেক পর হরতালের বার্তা দিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হয়৷ জামায়াতের ওয়েবসাইটেও একই বার্তা পাওয়া যায়৷ ওই বিবৃতিতে হরতালের ঘোষণা দিয়ে প্রথমে বলা হয়েছিল ‘৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল'৷ পরে অবশ্য সেটি সংশোধন করে ৭ জানুয়ারি লেখা হয়৷

জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির, সাবেক মন্ত্রী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে৷ আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই৷' জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান যুক্তভাবে এই বিবৃতি দেন৷

আপনি কি ফাঁসির পক্ষে? আপনার মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য