আপনি কি ‘বার্ন আউট’ এ আক্রান্ত?
আপনি কি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্ত? পেশা বা পারিবারিক নানা ঝামেলায় বিষণ্ণ, অবসাদগ্রস্ত? একটু সতর্ক হলেই কিন্তু আপনি এ সব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন৷ জেনে নিন তা কীভাবে...৷
‘বার্ন আউট’ আসলে কী?
শারীরিক ও মানসিকভাবে কেউ যখন প্রচণ্ড ক্লান্ত, বিষণ্ণ, অবসাদগ্রস্ত, হতাশ এবং সেই মুহূর্তে কী করণীয় সেটা বুঝতে না পারা৷ কিংবা বলা যেতে পারে পরিস্থিতির শিকার বা সমস্যার সমাধান করতে না পারায় কষ্টে ভেঙে পড়া – এ অবস্থাকেই সহজ ভাষায় ‘বার্ন আউট’ বলা যায়৷
লক্ষণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যখন দেখা যায় বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্তি কাটছে না, ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না, কাজে মনোযোগ নেই, অকারণে মেজাজ খারাপ হচ্ছে, ইচ্ছাহীনতা দেখা দিয়েছে – তখন বুঝতে হবে এগুলো বার্ন র্আউটের লক্ষণ৷ আবার কখনো পেট ব্যথা, ঘাড় ব্যথা কিংবা টিনিটাস, অর্থাৎ কানে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়াকেও বার্ন আউটের লক্ষণ হিসেবে ধরা যায়৷
সম্ভাব্য কারণ
‘বার্ন আউট’ শব্দটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় তখন, যখন কেউ পেশগত কারণে অবসাদগ্রস্ত হন৷ অর্থাৎ চাকরি না পাওয়া বা কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্ট না হওয়া৷ অথবা সহকর্মী বা বসের ব্যবহারের কারণে মানসিক চাপ বোধ করলে৷ কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে না পারাও কিন্তু একটা কারণ হতে পারে৷ পাশাপাশি যদি কারো পারবারিক জীবনে অশান্তি যোগ হয়, তাহলে বার্ন আউটের আকার হতে পারে ভয়াবহ৷
৫০ এর পর বা বয়স বাড়লে মানসিক চাপ কমে?
এই কথাটির সত্যতা আগে থাকলেও বর্তমান যুগে তা অচল৷ কারণ জার্মানির মতো দেশে ৫০ বছর বয়সিদের বুড়ো ভাবার কোনো কারণ নেই৷ ফলে তাঁদেরও কর্মক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়৷ কর্মক্ষেত্রে তাঁদের কাছ থেকেও ১০০ ভাগ মনোযোগ আশা করা হয়৷ আর সেটা পুরোপরি দিতে না পারা বা ছাটাইয়ের ভয়ও মানসিক চাপের কারণ হয়৷ জানান জার্মান মনোবিজ্ঞানী ডা. টর্সটেন ব্রাখার৷
লজ্জা বোধ
মানসিক সমস্যা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করতে অনেকেই লজ্জা বোধ করেন৷ তাছাড়া কেউ কেউ নিজেও ঠিক বুঝতে পারেন না যে তিনি বার্ন র্আউটে ভুগছেন৷
বার্ন আউট কি বার বার ফিরে আসে?
বার্ন আউট কি বার বার ফিরে আসে? অনেক সময় শোনা যায় যে, একবার বার্ন র্আউট হলে নাকি আবারো হতে পারে৷ তা কতটা কি সত্য? ‘‘ফিরে আসবেই এমন কোনো কথা নেই৷ তবে একবার হলে এর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, অর্থাৎ পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ডাক্তার বা থেরাপিস্টের কাছে মাঝে মাঝে যাওয়া উচিত৷ এই অসুখকে অনেকে খুব হালকাভাবে নিয়ে থাকেন, যা মোটেই উচিত নয়৷’’ জানান বিশেষজ্ঞ৷
কখন সতর্ক হতে হবেন?
সমস্যার শুরুতেই কাছের মানুষ বা বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করলে অনেক সহজে এবং কম সময়ে এর সমাধান হতে পারে৷ তবে একটি কথা বলা যায় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক সমস্যার চেয়ে পেশাগত সমস্যার কারণেই মানুষ বেশি ভেঙে পড়ে বা অবসাদগ্রস্ত হয়৷ এক্ষেত্রে সমস্যার শুরুতেই সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা শ্রেয়৷
পারিবারিক কারণে বার্ন আউট?
প্রেমে ব্যর্থ বা সংসার ভেঙে গেলেও অনেকে বার্ন আউট বা বিষণ্ণতায় ভোগেন৷ এক্ষেত্রে তিনি শুধু নিজে নন, পরিবারের সদস্যরাও ভোগেন৷ তবে বার্ন আউটের কারণ পারিবারিক কিংবা পেশাগত যাই হোক না কেন, এক্ষেত্রে শুধু বিশেষজ্ঞ নয়, পরিবারের সহযোগিতাও একইভাবে প্রয়োজন৷