1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্দোলন হলেই মারমুখী পুলিশ!

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে চলা সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মারমুখী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে৷ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, নিজেদের পক্ষে জনমত না থাকায় বিরোধীদের কোন আন্দোলনের সুযোগ দিতে চায় না সরকার৷

https://p.dw.com/p/3q26R
লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে চলা সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মারমুখী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে৷ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, নিজেদের পক্ষে জনমত না থাকায় বিরোধীদের কোন আন্দোলনের সুযোগ দিতে চায় না সরকার৷
ছবি: Sony Ramany/AFP

সোমবার বাংলাদেশে জাতীয় প্রেসকাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ৷ এই কর্মসূচির জন্য ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুপুরে জমায়েত শুরুর আগেই পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খানসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী এতে আহত হয়েছেন৷ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে৷

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সরকারের তো কোন জনসমর্থন নেই৷ মাফিয়া সরকার সবকিছুই দমন করতে চায়৷ এই কারণে সব আন্দোলনকেই তারা ভয় পাচ্ছে৷ এখন কারাগারে ১০ মাস ধরে বন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর দায় সরকারকে নিতে হবে৷ তাকে জামিন দেওয়া হয়নি৷ এখন এটার প্রতিবাদ করতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে৷” 

এর আগে শুক্রবার শাহবাগে বিক্ষোভের সময় লাঠিপেটার পর গ্রেপ্তার সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে শাহবাগ থানার পুলিশ৷ তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, "আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করত হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে৷ মিছিলকারীরা মশাল দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে৷’’

অবশ্য বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে আন্দোলনকারীদেরকেই লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে পুলিশকে৷

জাহাঙ্গীর কবীর নানক

সরকারের এই ধরনের অবস্থানে গণতন্ত্রের চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তা অবশ্য নাকচ করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ তারা মনে করে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে নিয়ে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করছে৷ দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন যেভাবে দেশে মত প্রকাশের সুযোগ আছে, আগে সেটা কখনই ছিল না৷ ৩৪টি টিভি চ্যানেলে যে যার ইচ্ছে মতো বলছে৷ এখন যেগুলো ইস্যু না, সেগুলোকে কেউ ইস্যু বানাতে চেষ্টা করলে তাদের তো আটকাতেই হবে৷ জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ৷ কারাগারে লেখক মুশতাক মারা গেছেন, এটা দুঃখজনক৷ এখন কেউ কেউ এটাকে ইস্যু বানাতে চেষ্টা করছে৷ এটার তো তদন্ত হলে বোঝা যাবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে৷ এর আগেও কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে৷ এখন যারা আন্দোলন করছে, তখন কী তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন?”

অবশ্য আন্দোলনে বাধা দেয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে নয়৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিরোধী আন্দোলন বা প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনকেই পুলিশের বাধায় পড়তে হয়েছে৷ কেন সব আন্দোলনেই বাঁধা দিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী? জানতে চাইলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সর্বশেষ দু'টি নির্বাচনে তো জনমতের প্রতিফলন হয়নি, তাই সরকার হয়ত ভয় পাচ্ছে৷ আমার মনে হয় এর দু'টি কারণ৷ প্রথমত, সরকার মনে করছে, এই ছোট আন্দোলনগুলো যে কোন সময় বড় আন্দোলনে রূপ নিতে পারে৷ তাই বিচ্ছিন্ন এই আন্দোলনগুলোও চলতে দিচ্ছে না৷ জনমত না থাকায় তাদের তো একটা ভয় আছে৷ আর দ্বিতীয়ত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগেই সব করছে সরকারকে খুশি করতে৷ তারা মনে করছে, এগুলো করে সরকারকে খুশি করতে পারলে তাদের উন্নতি হবে৷ ব্যক্তিগত উন্নতির আশায় তারা এটা করছে৷”

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক মনে করে সরকার যে বিরোধীদের মত প্রকাশ করতে দেবে না, আন্দোলন করতে দেবে না সেখানে কোন রাখঢাকের ব্যাপার নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা তো সোজা সাপ্টা৷ এটা তো আওয়ামী লীগ পরিস্কার করে দিয়েছে৷ এখন বিরোধীরা কী করছে? তারা কি এমন কোন দাবি দাওয়া নিয়ে সামনে এসেছে, যেটা জনগনের দাবি? তাহলে তাদের আন্দোলনে জনগন কেন সম্পৃক্ত হবে? ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ ৬ দফা দিয়েছিল৷ সেটা দেখে মানুষ আকৃষ্ট হয়েছিল৷ ফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়৷ জিয়াউর রহমানেরও ১৯ দফার প্রতি মানুষের সমর্থন ছিল৷ এখন বিএনপির এমন কোন দাবির কথা আপনি বলতে পারবেন, যেটার প্রতি মানুষের সমর্থন আছে৷ আসলে ভার্চুয়ালি আন্দোলন হয় না, রাজপথে আন্দোলন করতে হয়৷ তাহলেই জনগন সম্পৃক্ত হবে৷”

এদিকে সম্প্রতি বিএনপি ৭ই মার্চ পালনের ঘোষণাও নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়৷ সরকারকে তুষ্ট করে রাজনীতি করতেই এমন পরিকল্পনা কীনা সে প্রশ্নের উত্তরে ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘কাউকে তুষ্ট করে নয় বরং স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস মানুষ জানাতে চায় বিএনপি৷ এখন ৭ই মার্চ আওয়ামী লীগের কাছে এক রকম, বিএনপির কাছে আরেক রকম৷ আমরা আমাদের মতো করে ঐতিহাসিক দিনগুলো পালন করব৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান