1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারে স্বল্প পরিচিত লেখকদের গুরুত্ব

১ জুন ২০১১

জার্মানদের বই-পাগল জাতি বলা যেতে পারে৷ ট্রামে, বাসে, মাঠে, ময়দানে সর্বত্রই দেখা যায় পাঠে মগ্ন অনেক মানুষ৷ সাধারণত জার্মান’এর পাশাপাশি ইংরেজি বই’এর জার্মান অনুবাদ পড়তেই পছন্দ করেন এখানকার মানুষ৷

https://p.dw.com/p/11Rzt
হাউস ডেয়ার কুলটুরেন ডেয়ার ভেল্টছবি: DW

জার্মানিতে জার্মান বই'এর প্রাধান্য তো আছেই কিন্তু তার পাশাপাশি ইংরেজি থেকে জার্মান ভাষায় অনুদিত বই'এর প্রতিও আগ্রহ রয়েছে মানুষের৷ বিদেশি বই'এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই ইংরেজি ভাষা থেকে অনূদিত৷ এক্ষেত্রে রয়েছে বৈচিত্র্যের অভাব৷ অর্থাৎ অন্যান্য ভাষা ও সাহিত্য থেকে অনুবাদের ব্যাপারে খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয়না৷ আর এদিকটাতেই লক্ষ্য রেখে বার্লিনের ‘হাউস ডেয়ার কুলটুরেন ডেয়ার ভেল্ট' বা বিশ্বসাহিত্য ভবন ২০০৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার চালু করেছে৷ এর মাধ্যমে অনেক অজানা দেশের লেখকদের রচনা ও অনুবাদ তুলে ধরা হয় জার্মানিতে৷

২০০৯ সাল থেকে চালু হয়েছে ‘বিশ্ব সাহিত্য পুরস্কার'

বিশ্ব সাহিত্য ভবনের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পরিচালক সুজানে শ্টেমলার বছর তিনেক আগে আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হন৷ হামবুর্গের এক সাহিত্যপ্রেমী তাঁর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন৷ এ প্রসঙ্গে সুজানে শ্টেমলার বলেন, ‘‘জার্মানির বই'এর বাজারের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ইংরেজি ভাষা থেকে অনুবাদই বিরাট একটা অংশ জুড়ে আছে৷ আমরা অ্যামেরিকা ও ইংল্যান্ডের বই পড়ার প্রচুর সুযোগ পাই৷ কিন্তু ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, আফ্রিকা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় হয়না৷ এই সব দেশের সাহিত্যের যথোপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হয়না জার্মানিতে৷ আর এজন্যই এই ধরনের পুরস্কারের চিন্তাটা মাথায় আসে৷''

Internationaler Literaturpreis für Susanne Stemmler 2011
সুজানে শ্টেমলার বছর তিনেক আগে আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হনছবি: Aygül Cizmecioglu

প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ড্যানিয়েল আলারকন

বছর দুয়েক ধরে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে৷ প্রথম পুরস্কার বিজয়ী পেরুতে জন্ম নেওয়া মার্কিন লেখক ডানিয়েল আলারকন৷ তাঁর ‘লস্ট সিটি রেডিও' উপন্যাসটিতে পেরুর একনায়ক শাসনযন্ত্রের এক জাজ্বল্যমান চিত্র তুলে ধরেছেন আলারকন, যেখানে বিদ্রোহীরা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়, বন্ধু ও প্রতিবেশীরা বিশ্বাসঘাতক হয়ে সরকারের সঙ্গে হাত মেলায়৷ ডানিয়েল আলারকন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত অনেক দেশেরই এই ধরনের ইতিহাস রয়েছে৷ আমার কাছেও এটা বিস্ময়কর মনে হয়েছে, যে ভাবে বিশ্বের নানা অংশের মানুষজন এই গ্রন্থে তাদের নিজেদের ইতিহাস খুঁজে পেয়েছেন৷ যেমন চিলির মানুষরা সামরিক শাসক পিনোচেট ও স্পেনের লোকেরা ফ্রাঙ্কোর স্বৈরশাহীর সঙ্গে মিল খুঁজে পান এই লেখায়৷ আর জার্মানির মানুষদের মনে পড়ে যায় নাৎসি জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের শাসনামলের কথা৷''

Internationaler Literaturpreis für Daniel Alcaron 2011
মার্কিন লেখক ডানিয়েল আলারকনছবি: Aygül Cizmecioglu

৩৪ বছর বয়স্ক ডানিয়েল ছেলেবেলাতেই মা বাবার সঙ্গে অ্যামেরিকায় যান৷ বড় হয়ে ওঠেন দুই সংস্কৃতির মাঝে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার মনে হয় সৃজনশীলতার জন্য মাঝামাঝি অবস্থাটা উত্তেজনাকর৷ আমি অ্যামেরিকান নাগরিক হিসাবে বিষয়টিকে দেখতে পারি৷ অন্যদিকে ল্যাটিন অ্যামেরিকান বংশোদ্ভূত হওয়ায় দূর থেকেও লক্ষ্য করতে পারি সবকিছু৷ আজকাল অনেকের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য, কেননা বিভিন্ন দেশের মধ্যে অভিবাসনের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন৷''

গত বছরের আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী মারি এনদিয়ে একজন বিশ্ব নাগরিক৷ সেনেগালি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিকত্বের অধিকারী এই লেখিকা তাঁর ‘থ্রি স্ট্রং উইমেন' বই'এর জন্য এই পুরস্কার পান৷ এখন তিনি জার্মানিতে বসবাস করছেন৷ সুজানে শ্টেমলার বলেন, ‘‘এই সব লেখকের আত্মজীবনীতে একটা আন্তর্জাতিকতাবাদ ফুটে ওঠে৷ তাঁরা শুধু নিজেদের শেকড়ের মাঝেই আবদ্ধ থাকতে চাননা৷ তাঁদের সাহিত্য চলমান, যার নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই৷''

অনুবাদককেও সম্মানিত করা হয়

আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, এ ক্ষেত্রে শুধু লেখককে নয়, অনুবাদককেও সম্মানিত করা হয়৷ তাঁদেরই একজন ফ্রিডেরিকে মেল্টেনডর্ফ৷ রুশ ও ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেন তিনি৷ ডানিয়েল আলারকন'এর বইও জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছেন তিনি৷ ২০০৯ সালে লেখক ড্যানিয়েলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন অনুবাদক ফ্রিডেরিকে মেল্টেনডর্ফও৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘মূল লেখা যত ভাল হবে অনুবাদও ততটাই ভাল হবে৷ অনুবাদকে এমন হতে হবে, যা পড়তে ভাল লাগে৷ একই সাথে এটাও যেন মনে হয় যে বইটি অন্য ভাষা থেকে এসেছে, যাতে আবার জার্মানে হোঁচট খেতে না হয়৷''

কয়েক মাস ধরে এক টানা কষ্ট করার পর এই ধরনের পুরস্কারের মাধ্যমে তাঁর কাজটি যে পরিচিত পেল, তাতে আনন্দিত ফ্রিডেরিকে৷ তবে এই পুরস্কার পাওয়ার ফলে ফ্রিডেরিকের অনুবাদের কাজ ও ডানিয়েল আলারকনের বই'এর বিক্রি যে বেড়েছে এ কথা বলা যায়না৷ কোন কোনো ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লেগে যায়, হেসে জানান সুজানে শ্টেমলার৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক